ওগো প্রেয়সী কৃষ্ণচূড়ার!

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৬:১৬, জুলাই ২১, ২০১৭
রাধাচূড়া/ ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

রাধাচূড়া/ ছবি: হোসাইন মোহাম্মদ সাগর

ঈষিতা আর আবিরের মধ্যে প্রথম কথা হয় ফেসবুকে। রাত তখন প্রায় ২টা। প্রথম বারেই আবির ঈষিতাকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আচ্ছা, আপনার প্রিয় ফুল কি?’ অপর পাশ থেকে ঈষিতার উত্তর আসে, ‘কৃষ্ণচূড়া। এনে দিতে পারবেন? না হলে কিন্তু আপনার সাথে আর কথা নেই!’

আবির পরদিন সমস্ত ঢাকা শহর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও একগুচ্ছ কৃষ্ণচূড়া যোগাড় করতে পারেনি। এদেশে শরতে কৃষ্ণচূড়া ফোটে না। তবে তার রাধাকে সন্তুষ্ট করতে আবির সেদিন ঠিকই এনেছিলো একগুচ্ছ রাধাচূড়া। ঈষিতা একটা লাল শাড়ি পরে খোঁপায় গুঁজেছিলো আবিরের এনে দেওয়া সেই টকটকে লাল-হলুদ ফুলগুলো।

কি? এখনও রাঁধাচূড়া চিনতে পারেননি? তবে আরও সহজ করে বলি, অবিকল কৃষ্ণচূড়ার মতো ছোট ছোট গাছে লাল-হলুদ রঙের যে ফুলগুলো দেখা যায়, ওগুলোই রাধাচূড়া। সুন্দর এ ফুলটির আদি নিবাস ওয়েস্ট ইন্ডিজে। ভারত উপমহাদেশে তার আগমন আজ থেকে প্রায় ৪শ বছর আগে। কৃষ্ণচূড়ার মতো দেখতে হলেও হলুদ-লাল মিশ্রণেরও হয় রাধাচূড়া ফুলটি। বলতে পারেন কৃষ্ণচূড়ার প্রেয়সী সে!

রাধাচূড়ামহাভারতে রাধা-কৃষ্ণের প্রসঙ্গ প্রায় দুই হাজার বছরের পুরনো। শ্রীমতী রাধা শ্রীকৃষ্ণকে ভালোবেসেছিলেন; তা মানবিক বা ঐশ্বরিক যে অর্থেই হোক না কেন। এই ভালোবাসায় রাঁধার আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা কম ছিল না। তবুও শ্রীকৃষ্ণ তাকে ফেলে গোকুল ছেড়ে গিয়েছিলেন। রাধা-কৃষ্ণের এই প্রেম আখ্যান এখনও অমর হয়ে আছে। যেহেতু কৃষ্ণ একজন পৌরাণিক পুরুষ, তাই ধারণা করা হয় কৃষ্ণের মাথায় চুলের-চূড়া বাঁধার ধরন থেকেই নামকরণ করা হয় কৃঞ্চচূড়ার।

রাধাচূড়ার ক্ষেত্রেও মতবাদ প্রায় একই। শ্রীমতী রাধাকে আরও অমর করে রাখতেই পুরাণের রাধাকে বাস্তবের পুষ্পজগতে স্থান দেওয়া হয়। লাল ও হলুদ রঙের কমনীয় এ ফুলের মধ্যেই অনুরাগীরা খুঁজে পাবেন তাদের কাঙ্ক্ষিত রাধাকে।

রাধাচূড়াবাগান ও রাস্তার ধারে শোভাবর্ধনকারী এ ফুলটির বৈজ্ঞানিক নাম Caesalpinia pulcherrima. গুল্ম জাতীয় এ গাছের উচ্চতা প্রায় ১৪ থেকে ১৫ ফুট এবং সারাবছরই ফুল ফোটে। ফুল কখনও হলুদ, কখনও লাল, আবার কখনও বা লাল হলুদের মিশ্রণ। যেন রাধা-কৃষ্ণ মিলেমিশে একাকার, তাদের অভিসারের সাক্ষী। ধূসর রঙের চিরল পাতার গাছটি যেমন সুন্দর, ঠিক তেমনি ‘সুন্দরী’ তার ফুলও!

রাধাচূড়ার কিন্তু আরও অনেক নাম রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রত্নগণ্ডি, সিদ্ধেশ্বর ও গুলেটুর নামগুলো বেশি শোনা যায়। রাধাচূড়া এবং কৃষ্ণচূড়া দেখতে হুবহু একই রকম হওয়ায় আমরা খুব সহজেই একে আলাদা করতে পারি না। তবে সামান্য লক্ষ্য করলেই কিন্তু এদের শনাক্ত করা খুব সহজ।

রাধাচূড়ারাধাচূড়া ফুলের গাছ আকারে ছোট হয় আর রং হয় হলুদ, লাল। প্রায় সারাবছরই সে সোনারঙা ফুলে গা ভরিয়ে রাখে। ভরা যৌবন অঙ্গে নিয়ে যেন অপেক্ষার প্রহর গোনে কৃষ্ণের জন্যে। আর তাই বোধকরি ফুলভরা একটা রাধাচূড়া যে শান্তি দেয়, তা হাজারটা নান্দনিক চেহারার মানুষও দিতে পারে না!

বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, জুলাই ২১, ২০১৭
এএ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান