
অপারেশন থান্ডারবোল্ট এ বাংলানিউজের রিপোর্টিং টিম
ঢাকা: রমজানের ওই দিনটা স্বাভাবিক ছিল না। দিনজুড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের পদত্যাগের দাবি মিডিয়াকে ব্যস্ত রেখেছিল। সন্ধ্যায় সেই ঘটনার দিক থেকে মনোযোগ সরে যায় আসন্ন ঈদের দিকে। রাজধানীবাসী ঢাকা ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
তবে হঠাৎই ঢাকার আকাশে এক অশুভ শকুনের ছায়া চাঁদকে আড়াল করে দেয়। অনলাইন নিউজপোর্টালগুলোতে প্রথমে ছোট করে সংবাদ প্রকাশিত হয়, ‘গুলশানের একটি রেস্টুরেন্ট ঘিরে রেখেছে সন্ত্রাসীরা’। তেমন একটা গুরুত্ব পায়নি তা পাঠকদের কাছে। এই শহরে হর-হামেশাই এসব ঘটতে পারে। তবে কিছুক্ষণের মধ্যে নড়েচড়ে ওঠেন নগরবাসী।আতঙ্ক গ্রাস করে সবাইকে।গুলশানে প্রবেশের পথগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। হলি আর্টিজান নামের একটি রেস্টুরেন্টে জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছে মর্মে খবর ছড়িয়ে পড়ে। জঙ্গিরা পুলিশকেও গুলি করেছে। দু’জন পুলিশ কর্মকর্তা হাসপাতালে।সব মিলিয়ে সীমাহীন উকণ্ঠা আর উদ্বেগ।
প্রতিমুহূর্তের খবর জানাতে তৎপর হয়ে ওঠে বাংলানিউজ। ঘটনার মিনিট কয়েকের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয়ে যান বাংলানিউজের ক্রাইম রিপোর্টাররা। এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেনের কাছ থেকে ফোন পান অন্য রিপোর্টাররাও। সকলকেই নির্দেশ দেন, যতো দ্রুত সম্ভব ঘটনাস্থলে পৌঁছে আপডেট এবং সাইড স্টোরি দিতে হবে।
সেই রাতে গুলশানে পৌঁছানোটাই ছিল বিশেষ চ্যালেঞ্জ। ব্যারিকেডগুলোর পাশে মোতায়েন পুলিশরাও সাংবাদিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। ফলে গুলশানমুখি রাস্তায় প্রবেশ করতে দিচ্ছেলেন না তারা। এরপরও বাংলানিউজের কর্মীরা সেখানে প্রবেশ করে নিরাপদ দূরত্বে থেকে সংবাদ পরিবেশন করতে থাকেন দ্রুততম সময়ে।
বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট আবাদুজ্জামান শিমুলের কাছে আনুমানিক রাত সাড়ে আটটায় গুলশানে কোনো একটি হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে বলে খবর আসে। সঙ্গে সঙ্গে গুলশান থানার ওসিকে ফোন করে তিনি নিশ্চিত হন যে ঘটনা সত্য। একজন সাব ইন্সপেক্টর ফোন দিয়ে বলেন,’শিমুল ভাই গুলশান-২ এ লেক ভিউতে আসেন। আমরা যাচ্ছি।’
রওয়ানা দেয়ার প্রস্তুতির মুহূর্তের মধ্যেই এডিটর-ইন-চিফের ফোন আসে। তিনি দ্রুত গুলশান যাওয়ার জন্যে বলার পর বুঝতে পারি ঘটনা বেশ গুরুতর দিকেই মোড় নিতে চলেছে।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিমুল দেখতে পান গুলশানের লেকভিউর সামনে আইন শৃঙ্খলাবাহিনির সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের এসি রবিউল এবং ওসি সালাউদ্দিন হলি আর্টিজানের সামনের রাস্তায় মারা গিয়েছেন জঙ্গিদের গুলিতে। সব মিলিয়ে একটা দম বন্ধ করা আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ঘটনাস্থল থেকে আহতদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। অপরাধ বিটের সাংবাদিক হিসেবে সেই আপডেটগুলোও ফোনে নেন তিনি এবং অফিসে দিচ্ছিলেন।
তিনি বলেন, ‘প্রতি মুহূর্তে আইন শৃঙ্খলাবাহিনির সোর্সগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছিলাম এবং মনে মনে শুনতে চাচ্ছিলাম যে ঘটনার সমাপ্তি হয়েছে। রাত বাড়তে থাকে, আতঙ্কও বাড়তে থাকে। ভোরের আলো ফুটতে থাকে কিন্তু যবনিকাপাত হয় না।’
বাংলানিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ও চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ বলেন, ‘প্রথম দিকে পুলিশও বুঝতে পারেনি ঘটনাটি এতো বড় আর ভয়ানক দিকে মোড় নেবে। তারা ধারণা করেছিল, কাউকে জিম্মি করা হয়েছে। হয়তো দাবি আদায়ের জন্য। সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিন্তু আর্ন্তজাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) থেকে এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করার পর পুলিশের মুভমেন্ট চেঞ্জ হয়ে যায়। প্রথম দিকে কাছাকাছি অবস্থান নিলেও পরে পুলিশ আমাদেরকে অনেক দূর সরিয়ে দেয়। ব্যারিকেডের সংখ্যা বাড়ে।’
এডিটর ইন চিফের নির্দেশে রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফাররাও প্রায় সবাই চলে আসেন। যখন রাত গভীর হতে শুরু করে, বোঝা যায় এটা আরো সময় নেবে। ভোর রাত এমনকি পরের দিনেও গড়াতে পারে। তখন হলি আর্টিজান ঘিরে বিভিন্ন স্পটে ২০ জনের দল ছিল বাংলানিউজের। রাত ১১টা থেকে কয়েকজনকে তুলে নেয়া হয়। তবে তাদেরও স্পট ছাড়তে ছাড়তে মধ্যরাত হয়ে যায়। তাদের সকালে আবার স্পটে আসার জন্যে বলা হয়।
তিনি বলেন, এদিকে ২৭ রমজানের কারণে রাতের সেহরিও ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। রাত আড়াইটার দিকে কিভাবে সেহরি খাওয়া যায়, সেটাও ম্যানেজ করতে হলো। কারণ স্পট ছেড়ে যাওয়া যাবে না। পরে একটা টিম চলে গেলো খাবার আনতে।
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট শামীম খান যে স্পটে ছিলেন, সেখানে মিডিয়া কর্মীদের আধিক্যও ছিল অন্য স্থানের চেয়ে বেশি। রাতভর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনির প্রস্তুতিই শুধু দেখতে পাই আমরা। দফায় দফায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, র্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন ইউনিট আসতে থাকে। গুলশান ২ নম্বর থেকে হলি আর্টিজানের দিকে যাওয়ার রাস্তায় একের পর এক গাড়ি ঢুকতে এবং বের হতে থাকে। রাস্তাজুড়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনির সদস্যদের পাশাপাশি কয়েক শত মিডিয়াকর্মীও তৎপর ছিলেন। যখনই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনির উচ্চপদস্থ কোনো কর্মকর্তাকে এই পথে গাড়িতে আসতে ও বেরিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছিল, তখনই মিডিয়াকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরে পরিস্থিতি সম্পর্কে বা অপারেশনের প্রস্তুতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানার চেষ্টা করতে থাকেন। মিডিয়াকর্মীদের পেশাগত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে গিয়ে কোনো কোনো সময় বেশ হুড়োহুড়ি, ধাক্কা-ধাক্কি ও জটলার মধ্যে পড়তে হয়। আর এতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনির সদস্য বা কর্মকর্তাদের চলাচলেও বেশ বেগ পেতে হয়।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মাহফুজুল ইসলাম অবস্থান নিয়েছিলেন ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে। হলি আর্টিজান হামলার হতাহতদের মধ্যে যাদের ইউনাইটেডে নেয়া হয়, তাদের সর্ম্পকে জানার চেষ্টা করছিলাম। এই রাতে গণমাধ্যমকর্মী এমনকি রোগীর স্বজনদেরও হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি।
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট সাব্বির আহমেদ সবার আগেই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুর খবর জানিয়েছিলেন। তিনি বলেন, গুলিবিদ্ধ পুলিশ অফিসারদের নিয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালে পুলিশের গাড়ি প্রবেশ করে। সহকর্মী গুলিবিদ্ধ হওয়ায় বেশ উৎকণ্ঠায় উত্তেজিত দেখাচ্ছিল কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে।
একজন পুলিশ অফিসারের সঙ্গে কথা বলতে বলতে গেট পেরিয়ে ঢুকে পড়েন তিনি। ওই পুলিশ অফিসার এক পর্যায়ে মোবাইল ফোনে পুলিশের ২ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর জানাচ্ছিলেন তার ঊর্ধ্বতনকে। সেটা উদ্ধৃত করেই পুলিশ নিহতের হওয়ার প্রথম খবরটি নিউজরুমে পাঠান তিনি।
রাতের অন্ধকার কাটার আগেই গুলশানের উদ্দেশ্যে বের হন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ইসমাইল হোসেন। মিরপুর থেকে যেতে কয়েক জায়গায় পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। সব বাধা পেরিয়ে হলি আর্টিজানে পৌঁছেন তিনি।
ইসমাইল বলেন, সকালে অভিযান শুরু হলে মোবাইলে ছবি তুলতে গেলে সাঁজোয়া যান থেকে একজনসেঁনা কমান্ডো বলে উঠলেন, ‘ছবি তুলবেন না, আমরা দেশের জন্য যাচ্ছি, দোয়া করবেন। বেলা বাড়ার পর সাঁজোয়া যান অপারেশন শুরু করলো। দূর থেকেই শোনা গেলো দেওয়াল ভাঙার শব্দ আর গুলির শব্দ। সহকর্মীরা মিলে পরামর্শ করে কয়েকটি পয়েন্টে ভাগ হয়ে দাঁড়ালাম।
গুলির আওয়াজ এক সময় থামার পর বেরিয়ে আসে একে একে সাঁজোয় যান। কথা হলো সাঁজোয়া যানে থাকা একজনের সাথে। বললেন, ‘শত্রুরা সব শেষ! শুধু এইটুকু লেখেন।’
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বিছানায় পড়েছিলেন ক্রাইম রিপোর্টার শেখ জাহাঙ্গীর আলম। পায়ে ব্যান্ডেজ। তবে রাতে সোর্সের মাধ্যমে রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসী হামলা এবং বিদেশিসহ কয়েকজনকে জিম্মি করার খবর শুনে আর নিজেকে আর বিছানাবন্দি রাখতে পারেননি। দ্রুত টঙ্গীর বাসা থেকে ছুটলেন গুলশানের উদ্দেশে।
জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পুলিশ কর্মকর্তদের মৃত্যুর খবর শোনার পরেও আবার নিশ্চিত হতে ফোন দিতে থাকি পুলিশের উর্ধ্বতনদের। প্রতিটি খবরই রি-চেক, ক্রস চেক করতে হচ্ছিল। ভেতরে কত লোক জিম্মি আছে সেটা জানতে পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলতে থাকি। সবার মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছিল।
রাত সাড়ে ১০টায় ৭৯ নম্বর সড়কের কোনায় পুলিশ ও গোয়েন্দাদের সঙ্গে অবস্থান নিয়েছিলেন স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট রহমান মাসুদ। সেই সময়টায় নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, হলি আর্টিজান বেকারির সামনে তখন পুলিশ, র্যাব, সোয়াটের শতাধিক সদস্য। ভেতর থেকে গুলির শব্দ আসছে। ডিসি মোস্তাক তখন হ্যান্ড মাইকে আত্মসমর্পণের আহবান জানাচ্ছিলেন। এরই মধ্যে উপস্থিত হলেন, ডিএমপি কমিশনারও।
আমাদের সরিয়ে দেয়া হলে পাশের ভবনের দেয়ালের পাশে স্থান নিলাম একজন এনএসআই কর্মীর সঙ্গে। এরই মধ্যে একটানা তীব্র গুলি আর গ্রেনেড বিস্ফোরনের শব্দ আসছে। উঁকি দেওয়ািও সময় নেই। অনেক পুলিশ সদস্য স্প্লিন্টার-বিদ্ধ হয়ে ফিরে আসছেন।একজন র্যাব কর্মকর্তা ঘাড়ে করে নিয়ে আসেন এসআই ফারুককে। এসআই জয়নাল জানালেন, আহত অবস্থায় রাস্তায় পড়ে আছেন এসি রবিউল ও ওসি সালাহউদ্দীন। ডিএমপি কমিশনার আটকা পড়েছেন পাশের একটি ১০ তলা ভবনের গ্যারেজে। পুলিশের মধ্যেও আতঙ্ক দানা বেঁধেছে। কর্মপন্থা নিয়ে আলোচনা করছিলেন ডিবি কর্মকর্তা মনিরুল ও সানোয়ার। তাতে যোগ দিলেন র্যাবের ডিজি বেনজির আহমেদ।
একজন গোয়েন্দা জানালেন টেলিভিশনে লাইভ সম্প্রচার বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাত ১১টায় তা বাস্তবায়ন হয়েছে বলে জানালেন ৭১ টিভির ফারজানা রূপা। মুহুর্তে ছড়িয়ে পড়লো এসি রবিউল এবং ওসি সালাহউদ্দীনের মৃত্যুসংবাদ। এবার সংবাদকর্মীদের বেছে বেছে দূরে সরাতে থাকলো পুলিশ। একটি ভবনের দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে থাকলাম আমি আর ইত্তেফাকের আমির মোহাম্মদ জুয়েল। ততক্ষণে আকাশ ফরসা হয়ে আসছে।
আমাদেরকে কর্ডনের বাইরে নিয়ে যাওয়া হলো। শিল্পতি লতিফুর রহমানের মেয়ের বাড়ির নিচে আমরা স্থান নিলাম। সেখানে অনেক সংবাদকর্মী। এই বাড়ির ছেলে ফাইয়াজ আটকা পড়েছেন হলি আর্টিজানে। ফাইয়াজের মা ও স্বজনরা উদ্ভ্রান্তের মতো ছটফট করছেন।
এরই মধ্যে সকাল হলো। এখান থেকেও পুলিশ আমাদের নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিল। ইতালিয়ান দূতাবাসের কোনায় স্থান নিলাম একটি গাছের আড়ালে। টিপটিপ বৃষ্টির মধ্যে এক এক করে প্যারা কমান্ডোদের গাড়ি প্রবেশ করতে থাকে। বিকট শব্দ আসতে থাকলো। ১০/১২ মিনিট পরই সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স যেতে থাকলো ঘটনাস্থলের দিকে। একটু পর আবার ফিরেও আসতে থাকলো।তবু কমছিল না বিস্ফোরণের শব্দ। পরে অভিযানে অংশ নেওয়া এক সোয়াট সদস্য জানালেন, এগুলো বোমা নিষ্ক্রিয় করার শব্দ।
সকালের টিমের জন্যে প্রস্তুত ছিলেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট মফিজুল সাদিক। তিনি বলেন, ২ তারিখের কাকডাকা ভোরটা অন্যান্য দিনের মতো ছিল না। শহরে যানবাহনও কম। হাতেগোনা কয়েকটি টেম্পু চলাচল করছে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখি সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যানসহ বিশাল বহর।
অভিযান শেষ হলে কিছুক্ণেঁর মধ্যেই চিফ অব করেসপন্ডেন্টস সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ভাইয়ের ফোন আসে। গুলশান হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করবে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।
সেনাসদরে ১২টার সময় সংবাদ সম্মেলন হওয়ার কথা থাকলেও তা ৩০ মিনিট পিছিয়ে দেয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনের আগে হলি আর্টিজান বেকারিতে নিহতের সংখ্যা নিয়ে সবার মধ্যে একটা ধোঁয়াশা ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুলশান হামলায় মোট নিহতের সংখ্যা ২৮ জন। এর মধ্যে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে অভিযান শেষে ২০ বিদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে এবং কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছে ৬ জঙ্গি।
ভোর ৫টায় হলি আর্টিজানের উদ্দেশ্যে রওনা করেন সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট শাহজাহান মোল্লা। তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে পৌঁছালে সিওসি'র নির্দেশে পেছনের সড়কে গিয়ে অবস্থান নিই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনি থেকে বারবার নির্দেশ আসছে, ‘আপনার এখান থেকে সরে যান। আগে নিজের জীবন বাঁচান।’
অভিযান শুরু হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছিল, ‘ভাই আপনারা ওয়ালের সাথে ঘেঁষে থাকেন। গুলি যে কোনো দিক থেকে আসতে পারে। একটু হলেও মনে ভয় ধরিয়ে দিল। তবে ওয়ালের সঙ্গে গাঁ লাগিয়ে হাতের মোবাইলে ফোনটি’র রেকর্ডার চালু করে দিলাম শব্দ নেওয়ার জন্য। এদিকে অফিস থেকে এডিটর ইন চিফেরও নির্দেশ, যেখানেই থাকি, সবার আগে নিজের জীবন..!
এডিটর ইন চিফের ফোন পেয়ে আমি নিজেও রওনা করি গুলশানে, অবস্থান নিই ইউনাইটেড হাসপাতালের সামনে। রাতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। একটি দোকানের ছাউনিতে প্রায় ২০ জন সাংবাদিক কোনো রকমে ঠেসে দাঁড়িয়ে পার করলাম একটা রাত। ভোর হলে আমি বাসায় ফিরে চোখ বুজবো এমন সময় আইএসপিআর থেকে ফোন দিয়ে জানালো সংবাদ সম্মেলনের কথা। দ্রুত রওনা করলাম সেনা সদরের পথে।
বাংলানিউজের সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ঊর্মি মাহবুব রাত ১০ টা দিকে মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারের সামনের গিয়ে দেখেন সেখানে পুলিশের ব্যারিকেড। নিরাপত্তার কারণে গুলশানের বাসিন্দাদেরও প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
হলি আর্টিজানের সামনে পৌঁছালে একজন পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের দেখা পান তিনি। যিনি মিডিয়ার সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন। কারণ ভেতরে তার ভাতিজা হাসনাত করীম রয়েছেন পরিবারসহ।
ঊর্মি বলেন, উৎকণ্ঠায় রাতটা পোহালো। এরপর সবাই অপেক্ষা করছিল সেনা অভিযানের।
বাংলাদেশ সময়: ০১২২ ঘণ্টা, জুলাই ০১, ২০১৭
এমএন/জেএম