একটু লাগাম প্লিজ, খালেদা জিয়া

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:৪৭, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১১

আবার একটি লাগাম ছাড়া কথা বলে ফেলেছেন খালেদা জিয়া! সংবিধান ছুঁড়ে ফেলার বক্তব্যের মতো এটিও কী তেমন আরেকটি বক্তব্য? যিনি দেশের জাতীয় সংসদের বিরোধীদলের নেত্রী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বৃহত্তম বিরোধীদল বিএনপির চেয়ারপার্সন! ঈদের দিন তিনিই কী না মিডিয়াকে হাতের কাছে পেয়ে বলে দিলেন, ‘টাকা খেয়ে রায় দিয়েছেন, সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক’।

বিরোধীদলের নেত্রীর অভিযোগটি কী সিরিয়াসলি নেবেন দেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি ও বিচার বিভাগ? বিষয়টি সুয়োমটো করা হবে? না কারো কোর্টের নজরে আনতে হবে?

কারণ বিরোধীদলের নেত্রীতো দেশের কোন ফেলনা চরিত্র না! তথ্য প্রমাণ ছাড়া এত বড় কথা বলার কথা না! অতএব তার সহযোগিতা নিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে উত্থাপিত ‘টাকা খাওয়া তথা ঘুষ নিয়ে রায় দেবার অভিযোগের’  বিষয়টি তদন্ত হওয়া দরকার। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে’র মতো তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে সাবেক প্রধান বিচারপতি ও যারা ঘুষ দিয়েছেন (বিরোধীদলের নেত্রী নিশ্চয় ঘুষদাত্রী হিসাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কথা বলতে চেয়েছেন বা এর নিচেতো তার নামার কথা না) উভয়পক্ষের দৃষ্টান্তমূলক বিচার-সাজা হতে হবে।

আর অভিযোগ প্রমাণিত না হলে বিচার-সাজা হতে হবে খালেদা জিয়ার। কারণ তিনি বা তারাইতো নিজেদের সুবিধামতো বিচার বিভাগকে সবার উপরে-সংবিধানের রক্ষক হিসাবে আমাদের জ্ঞান দেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মিডিয়ার ঘাড়ে দোষ চাপানো যার প্রতিদিনের ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব , ‘তিনি বিষয়টি এভাবে বলেননি’ বলে কি খালেদা জিয়ার বক্তব্য ডিফেন্ড করবেন?

অনেকে বলতে পারেন বিরোধীদলের নেত্রীর অবশ্য বয়স হয়েছে। তাই কখন কী বলে ফেলেন তার ঠিক নেই! সবশেষ গত পনের আগস্ট ভদ্রজনদের শত শত না সত্ত্বেও জাতির পিতার হত্যাকাণ্ডের দিনে বিতর্কিত জন্মদিন যেটি পালন করেছেন, সে উপলক্ষে গুলশানের অফিসে যত পাউন্ড ওজনের কেক কেটেছেন, সে হিসাবে সরকারি চাকরিতে থাকলে এতক্ষণে সোজা রিটায়ারমেন্টে চলে যেতেন!

যে কোন মানুষের বয়সের একটি স্তরে শারীরিক নানা সমস্যা-জটিলতার কারণে চাকরিতে অবসরের একটা বয়সসীমা ঠিক করা হয়। কিন্তু সরকারি রিটায়ারমেন্টের এই বয়সেও খালেদা জিয়া দৃশ্যত শারীরিকভাবে শক্ত-সমর্থ।

তার দলের লোকজনও আড়ালে চুপি চুপি বলেন, স্মার্টনেস বা সাজ-পোশাকে ছেলের বউরাও শাশুড়ির ধারকাছে নেই! তার উপদেষ্টা অথবা বক্তৃতা লেখকবৃন্দও দাবি করেন, অপর নেত্রীর তুলনায় তাদের ম্যাডাম আচারে-কথাবার্তায় অনেক বেশি পরিশীলিত!

সেই খালেদা জিয়া কী আজকাল মাঝে মাঝেই পারিষদদের দাবির বাইরে ‘অপরিশীলিত’ কথাবার্তা বলে ফেলছেন না?

কারণটা কী বয়সের? অবশ্যই আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীর জন্যে কিন্তু এটা কোন বয়সই না। ক্ষমতায় থাকা বা ধরে রাখার ক্ষেত্রে এরা মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে শক্তিধর! মার্কিন প্রেসিডেন্ট যেখানে দু’টার্মের বেশি ক্ষমতায় থাকেন না বা নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেন না, আমাদের নেত্রীদের অবশ্য সে সমস্যা নেই। পারিষদরা তারা থুত্থুরে বুড়ি বা আল্লাহপাক হায়াত রাখা অবধি ‘ঐক্যের প্রতীক’ হিসাবে তাদের ক্ষমতায় ধরে রাখবেনই! অতএব তারা কী বললেন না বললেন, লাগাম থাকলো কী না তা ধর্তব্যের নয়!

অনেকে আবার মনে করেন, এসব বক্তব্যের গোঁড়ায় আছে হতাশা! সেনানিবাসের বাড়ি হারানোর, ছেলেদের বিরুদ্ধে দূর্নীতির মামলা নিয়ে কোর্টের বিরুদ্ধে হতাশা-ক্রোধ? কারণ এসব কিছুইতো বিচার বিভাগ হয়েই এসেছে! এর অনেকগুলো রায় এসেছে সাবেক প্রধান বিচারপতির আমলে! যার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধে সবশেষ টাকার বিনিময়ে রায় দেবার অভিযোগ করেছেন খালেদা জিয়া!

ভদ্রতা অথবা চক্ষু লজ্জার খাতিরে যা হয়তো এখানে খোলাসা করে বলেননি তা হলো খায়রুল হকের আমলেই আদালতের মাধ্যমে তিনি ক্যান্টনমেন্টের ভিতরের ৯ বিঘা জমি সমেত বিশাল বাড়িটি হারিয়েছেন। তার নেতৃত্বেই সুপ্রিমকোর্ট রায় দিয়ে বলেছে সামরিক শাসন জায়েজ করা শাসনতন্ত্রের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী অবৈধ।

বিএনপি এবং খালেদা জিয়া ওই দুই রায়ের বিরুদ্ধে হরতালও করেছেন। কিন্তু সেনানিবাসের বাড়ির বিষয়টায় বাদিনী খালেদা জিয়া হবার কারণে আদালত আইনত কী কী তরিকায় চোখ বন্ধ করে থাকতে পারতো, তা ব্যাখ্যা করে বলেননি।

বাংলাদেশের আইন হচ্ছে- কোনও একজন ব্যক্তি একাধিক সরকারি বড়ি বা প্লট পেতে পারেন না। কেউ যদি তথ্য গোপন করে একাধিক প্লট নেয়, তাহলে তা ধরা পড়লে বরাদ্দ বাতিল হয়। প্রধানমন্ত্রী হিসাবে খালেদা জিয়াও আইনটি কঠোরভাবে অন্যদের মানতে বাধ্য করেছেন।

কিন্তু জিয়ার মৃত্যুর পর আইন ভঙ্গ করে খালেদাকে দুটি বাড়ি দেওয়া হয়েছে বা তিনি নিয়েছেন। বাড়ি দুটি দেবার বা নেবার সময় বলা হয়েছিল, জিয়া তার পরিবারের জন্য কোন জমি-সম্পত্তি রেখে যাননি। কিন্তু এই কিছুদিন আগে সাভারে কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে গিয়ে জানা যায় সেই জমির মালিক খালেদা জিয়া। তার নামে ওই জমি-সম্পত্তি কিনে রেখে গিয়েছেন জিয়াউর রহমান।

বাড়ি মামলার সময় আদালতে জমা নথিতে জানা যায় বঙ্গভবন-গণভবনের মতো ওই সরকারি সম্পত্তিও কাউকে দেয়া যায় না! যে যুক্তিতে শেখ হাসিনার নামে গণভবনের দেওয়া বরাদ্দ বাতিল করেছিলেন খালেদা জিয়া। শেখ হাসিনা অবশ্য আগে থেকেই গণভবন ছেড়ে স্বামীর বাড়ি সুধাসদনে চলে যান। কিন্তু খালেদা জিয়া সৃষ্টি করেন বাড়ি হারানোর বিরল-বিশেষ এক কান্নার ছবি। দলের মধ্যেই বিব্রতকর-বিতর্কের সৃষ্টি করেছে যে ছবি। বলা হয়েছে এতে ক্ষুন্ন হয়েছে নেত্রীর আপসহীন ভাবমূর্তি!

বাড়ি মামলাটি এভাবে ডাইরেক্ট হাইকোর্টে নিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি, এমন উপলদ্ধি দলে সৃষ্টির পর এ সংক্রান্ত আইন পরামর্শক ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ কিছুদিন কোণঠাসাও থাকেন। সে বাড়ির জমিতে এর মাঝে সেনা অফিসারদের ফ্ল্যাট বানানোর কাজও চলছে। কাজেই বিএনপি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে ম্যাডামের জন্য তেমন বা এর চেয়ে দামি বিশাল একশটি বাড়ির ব্যবস্থা হয়ত করা যেতে পারে। কিন্তু শহীদ মইনুল রোডের ওই বাড়িটা আর নয়।

অনেকের প্রশ্ন পঞ্চম সংশোধনীর দায়দায়িত্বতো খালেদা জিয়ার না। তার এ বিষয়ে কাতর করার কারণ কী! কারণ জিয়া আর খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক যাত্রাতো একভাবে নয়। সামরিক উর্দি পরে রাজনৈতিক ক্ষমতার দিকে যাত্রা করেছিলেন জিয়া। সেনানিবাস থেকে বঙ্গভবনে। সেনানিবাসের বাড়িতে থেকে রাজনৈতিক যাত্রা শুরু করলেও খালেদা জিয়া স্বামীর মতো ডাইরেক্টতো আর ক্ষমতায় চলে যাননি। এর জন্যে স্বৈরাচারী এরশাদ জান্তার বিরুদ্ধে তাকে রাজপথে সংগ্রাম করতে হয়েছে। এরপর নির্বাচনে জিতে হয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী!

মনে কী পড়ে! তার নেতৃত্বের প্রথম অবস্থান ধর্মঘটকে কেন্দ্র করে দেয়াল ভেঙ্গেছে অথবা ভাঙ্গা হয়েছে সচিবালয়ের। সেনানিবাসের বাড়ি থেকে এসে হরতালে যোগ দেওয়া কঠিন মনে করে তার জন্যে রূমভাড়া করা হয়েছিল পূর্বাণী হোটেলে। সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে সেনানিবাসের বাড়িতেই গৃহবন্দী করেছিল এরশাদ। সেনানিবাসের বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বনানী টু প্রেসক্লাব অবধি দীর্ঘ পথ পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে আসার রেকর্ডটিতো তার।

এসব কী বেআইনি সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে তার আন্দোলন সংগ্রামের দৃষ্টান্ত নয়? তাহলে এরশাদের সামরিক শাসনকে অবৈধ বললে জিয়ার সামরিক শাসনকে বৈধ কী করে বলা সম্ভব ছিল? বিষয়টা ‘বিচার মানি কিন্তু তালগাছটা আমার’ জাতীয় হয়ে যায় না কী!

পঞ্চম-সপ্তম সংশোধনীতে অন্তর্ভূক্ত বাংলাদেশের দুই মতলববাজ জেনারেলের ‘সংবিধানে বিসমিল্লাহ’, আর ‘রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম’, বহাল রেখেছেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। উনি যদি টাকা খেয়ে রায় দিয়ে থাকেন, এ দুটি বিষয় বহাল রাখার টাকা কী দিয়েছেন খালেদা জিয়া আর এরশাদ! কেউ যদি এমন প্রশ্ন রাখে জবাব কী হবে?

দুই ছেলের দূর্নীতি মামলা নিয়েও কোর্টের ওপর ক্ষুদ্ধ হতে পারেন খালেদা জিয়া। সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে কোকো’র টাকাগুলোর কথাতো বাংলাদেশ প্রথমে জানতোই না। আমেরিকার ফেডারেল আদালতের আদেশে সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে টাকাগুলো জব্দ হবার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ওই মামলা আর রায় হওয়া অবধি বিএনপি কী কোথাও একবার দাবি করে বলতে পেরেছেন টাকাগুলো কোকোর না? বা খালেদা জিয়া আমেরিকা গিয়ে এত বড় সব লোকজনের সঙ্গে মিটিং করলেন, তাদের কাউকে কী জিজ্ঞেস করেছেন, তার ছেলের বিষয়টা নিয়ে তারা এমন হাটে হাড়ি ভাঙ্গার কাজটি কেন করলো?

কোকোর টাকার বৃত্তান্ত নিয়ে একাধিক রিপোর্ট ছাপা হয়েছে সিঙ্গাপুরের স্টেট টাইমসে। খালেদা জিয়া একবার বললেন, সরকার টাকা দিয়ে এসব লিখিয়েছে! তা সরকার যদি টাকা দিয়ে লেখাতে পারে, তারা পারেন না কেন? তাদের টাকা বা প্রভাব আওয়ামী লীগের চাইতে কম নাকি!

তারেকের বিরুদ্ধে অভিযোগটি হলো নির্মান ইন্টারন্যাশনালের দেয়া ঘুষের টাকা সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে মামুনের একাউন্টে জমা হয়েছে। আর ওই একাউন্টের বিপরীতে পাওয়া সাপ্লিমেন্টারি কার্ডের মাধ্যমে সেখান থেকে টাকা পয়সা তুলে খরচ করতেন তারেক। অভিযোগটি যদি অসত্য হয় তাহলে এখনও সিঙ্গাপুরের ওই ব্যাংকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা কেন নেওয়া হয় না? দেশে-বিদেশে এত উকিল-ব্যারিস্টার বিএনপির! বা মামুন বা মোসাদ্দেক আলী ফালুকে কী কারণে এত টাকাকড়ির মালিক বানানো হয়েছে, সে প্রশ্নের সদুত্তর দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের কাছে নেই! সেই মামুন জেলে থাকলেও কী শর্তে সরকারের সঙ্গে মোসাদ্দেক আলী ফালুর সমঝোতা সুসম্পন্ন হয়েছে, দলে সেটিও লাল তারকা চিহ্নিত জিজ্ঞাসা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল নিয়ে অনেকেরই ভিন্নমত আছে। যেমন বাংলাদেশের দলীয় সরকারের অধীনে কোন জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হতে পারে তা দেশের বেশিরভাগ মানুষই বিশ্বাস করে না। বর্তমান সরকারের অধীনে এখন অবধি হওয়া নির্বাচনগুলোতে অবশ্য বিএনপি ভালো করেছে। এই সরকার হতাশাব্যঞ্জক অনেক কাজ করলেও এখন অবধি কোন নির্বাচনে দৃশ্যত হস্তক্ষেপ করেনি। যে কারনে হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগের বহু পুরনো একটি আসন বিএনপি জিতে নিয়েছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনও চলে গেছে বিএনপির কব্জায়।

কিন্তু বিএনপির অধীনে নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কী ভুলে গেছে দেশের মানুষ? সে জন্য আজতক কোথাও কী তাদের আত্মপক্ষের সমালোচনা আছে? তবে অনেকে মজা করে বলেন, যা হোক শেষমেষ সেই বহুল আলোচিত ‘পাগল’ আর ‘শিশুদের’ পক্ষ নিয়েছেন খালেদা জিয়া।

পাগল আর শিশু ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না, আপনার ওই কথাগুলো তাহলে সত্য না, তাই না ম্যাডাম? এর জন্য দীর্ঘ আন্দোলন হয়েছে দেশে। কিন্তু সেই যে খালেদা জিয়া আপসহীন, সংবিধানের বাইরে কিছু করবেন না বলে এরশাদকে অনুসরণ করে একটা পনের ফেব্রুয়ারির নির্বাচন করেছিলেন! এরপর আন্দোলনের ভয়ে সারারাত পার্লামেন্ট চালিয়ে পাশ করিয়েছিলেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা! ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের উপস্থাপনায় রাতের মধ্যে সেটি পাশ করাতে গিয়ে কী ভুল করে রেখেছিলেন, তা মনে নেই? যে ভুলকে কাজে লাগিয়ে ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের অনেক বেশি সময় ক্ষমতায় ছিল!

সে কারণে বলা খায়রুল হকের নেতৃত্বে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল হয়েছে তাতে নৈতিক জয় হয়েছে এরশাদ আর খালেদা জিয়ার। কারণ এরশাদের পর নিরপেক্ষ নামধারী  এই সব পাগল আর শিশুদের শাসন প্রথম চান নি খালেদা জিয়া। আর ১/১১’র সরকার প্রমান করেছে ওরা আদতে কিন্তু পাগল আর শিশু না! শুধু শুধু পাগল আর শিশু হলে তারা কী এভাবে দুই নেত্রীকে জেলের ভাত খাওয়ায়? ব্যারিস্টার মইনুল আর জেনারেল মতিনরা সারাদিন এ্যাং করেঙ্গা তেং করেঙ্গা বলে তাদেরকে শাসানোর সুযোগ পায়?

এরপরও কিন্তু পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার সুযোগ রেখে গিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হক। তাকেই ঘুষখোর বিচারকের অপবাদ দিলেন খালেদা জিয়া?

অনেকে মনে করেন ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের খালেদা জিয়ার পরিণতির কথা আওয়ামী লীগ যদি মনে রেখে থাকে তাহলে এ নিয়ে তারা চলতি জেদাজেদি চালাবে না।

কিন্তু সমস্যা কী আরেকটি বাঁধিয়ে রাখলেন খালেদা জিয়া! আগামীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলে স্বাভাবিক যার প্রধান উপদেষ্টা হবার কথা সেই বিচারপতি খায়রুল হককে আগাম বলে রাখলেন তিনি ঘুষখোর! খুব স্বাভাবিক একজন ঘুষখোরতো (যদি খালেদা জিয়া তা প্রমাণ করতে পারেন) আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হতে পারেন না! বা তাকে মানা হবে না। তাহলে এসবের রেজাল্ট কী?

আগেরবার বিচারপতি কে এম হাসানকে আওয়ামী লীগ না মানাতে ফাইন্যালি জরুরি অবস্থা আর ১/১১ এসেছে। আবার কী দেশের গন্তব্য সে পথে? সাবেক ১/১১ ওয়ালারা একটু শর্মিন্দা কিসিমের ছিলেন। ডাইরেক্ট ক্ষমতা নেননি। ইনডাইরেক্ট ক্ষমতা নেবার পরিনামে তারা আর এখন দেশে আসতে পারেন না!

এসবের অভিজ্ঞতা আর শিক্ষায় আগামীর তেমন লোকজন যদি আর ইনডিরেক্ট না আসেন? আগের অভিজ্ঞতাতো তারা আগে বিরোধীদলের নেত্রীকে গ্রেফতার করে। তেমন আশঙ্কা দূরীকরণের কোন দাওয়াই কী জানা আছে খালেদা জিয়ার? নিজেদের মতো করে একটি অভ্যুত্থান ঘটানোর সে দিন কী আর আছে? অথবা দেশের দায়িত্বশীল লোকজনের কথাবার্তায় একটু মুন্সিয়ানা, লাগাম থাকার দরকার আছে কী!

ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক।

বাংলাদেশ সময় ১৪৪০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১১


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান