আত্মসমালোচনায় মানুষের অবস্থার উন্নতি ঘটে

মাহফুজ আবেদ, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৯:২১, মার্চ ১, ২০১৭
আত্মসমালোচনাকে দিনশেষের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক হিসাব বলা চলে- ছবি: প্রতীকী

আত্মসমালোচনাকে দিনশেষের চূড়ান্ত আধ্যাত্মিক হিসাব বলা চলে- ছবি: প্রতীকী

দিন শেষে নিজের মূল্যায়ন এবং নিজের কাজকর্মের হিসাব নেওয়ার লক্ষ্যে একটু সময় দেওয়া ব্যক্তি হিসেবে মানুষের জন্য প্রয়োজন। তখন তার ভেবে দেখা দরকার সারা দিনে তিনি কী করেছেন, যা করেছেন এর কারণ কী, করণীয় কোন কোন কাজ বাদ পড়েছে, আর বাদ পড়ে গেলই বা কেন?

নিজের মূল্যায়ন ও সমালোচনার এই সময়টুকুকে আত্মোন্নতির বিষয় মনে করতে হবে। এটা এমন একটি সময় যখন একজন মানুষ নিরপেক্ষভাবে নিজের বিচার করে এবং পর্যালোচনা করে দেখে নিজেরই আকাঙ্ক্ষা ও সেই সঙ্গে কার্যকলাপের কারণ বা উদ্দেশ্য। কোনো মানুষ (পুরুষ বা নারী) যখন নিজের কাজ সম্পর্কে তদন্তের জন্য বিবেককে তদন্তকারী নিয়োগ করেন এবং সেই তদন্তের আলোকে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পথ চলেন- তার থেকে ভুল কাজ কম হয়। আর এ কাজের মাধ্যমে মানুষ আত্মার এক অবস্থা থেকে আরেক অবস্থায় উন্নীত হয়ে থাকে। 

যখন মানুষ পাপকাজে লিপ্ত হয় উন্নতমানের এই আত্মা তখন তাকে ঘৃণা করে। হাদিস শরিফে আছে, যেকোনো জ্ঞানী ব্যক্তির জীবনে চার ধরনের সময় থাকা সমীচীন এবং এর একটি হলো সে সময়- যখন তিনি আত্মসমালোচনায় নিয়োজিত থাকেন।

ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হজরত উমর (রা.) বলেছেন, ‘শেষ বিচারের দিনে সমালোচনা ও মূল্যায়নের সম্মুখীন হওয়ার আগেই নিজের সমালোচনা ও মূল্যায়ন করো। তোমার কাজের হিসাব নেওয়ার আগেই সেগুলো খতিয়ে দেখো।’ তিনি রাতের বেলায় নিজের পায়ে বেত দিয়ে আঘাত করতেন, আর নিজেকে বলতেন- ‘বলো, আজ তুমি কী করেছ?’

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর বিখ্যাত সাহাবি মাইমুন ইবনে মাহরান বলতেন, ‘একজন পরহেজগার ব্যক্তি কোনো অত্যাচারী শাসক এবং কৃপণ সঙ্গীর কাজের চেয়ে নিজের কাজকর্মের মূল্যায়ন করবেন বেশি সতর্কতার সঙ্গে।’

বাস্তবে কিভাবে আত্মসমালোচনা বাস্তবায়িত হয়ে থাকে, সে প্রসঙ্গে ইসলামি স্কলাররা বলেন, মুমিন ব্যক্তিকে এমন চিন্তা বা ধারণা প্রলুব্ধ করতে পারে, ‘আল্লাহর কসম, এই কাজটা তো চমৎকার। আমি করতে চাই। কিন্তু না, কক্ষনো না। মন্দ কাজ, দূর হও! মন্দ কিছু করা যে আমার জন্য হারাম।’ এটা আত্মসমালোচনা এবং কাজ করে ফেলার আগের দরকারি ভাবনা।

কোনো ঈমানদার অসাবধানতাবশত কিছু একটা করে ফেলতে পারেন। তখন তিনি নিজেকে বলেন, ‘তুমি এটা কী করলে? আল্লাহর কসম, এ কাজের কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছি না। আমি ইনশাআল্লাহ আর কখনও এটা করব না।’ এটাও আত্মসমালোচনা এবং এটা কাজ করার পরের মূল্যায়ন।

যদি কোনো ঈমানদার লোক আত্ম অনুসন্ধানের জন্য প্রতিদিন সামান্য সময় না পান, তিনি অন্তত কয়েক দিন পরপর কিংবা সপ্তাহে একবার হলেও এ কাজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। এই পন্থায়, মানুষ তার আধ্যাত্মিক সম্পদ ও দায় তুলে ধরে নিজ জীবনের ব্যালেন্স শিট তৈরি করতে পারে।

প্রতি মাসের শেষে নিজের হিসাব নেয়ার জন্য একজন মুমিনের আরও দীর্ঘ সময় থাকা উচিত। এর চেয়েও বেশি সময় তার দেওয়া দরকার বর্ষশেষে আত্মসমালোচনার জন্য। তখন একটি বছরকে বিদায় জানিয়ে আরেকটির প্রস্তুতি নিতে হয়। যথাযথভাবে অতীতের মূল্যায়ন এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করার সময় এটাই। একজনের চূড়ান্ত বার্ষিক আধ্যাত্মিক হিসাব বলা যায় এটাকে।

দেখুন, প্রতি বছরের শেষে একজন সাবধানী ব্যবসায়ী একটু বিরতি দেন। বিগত বছরের তৎপরতার হিসাব-নিকাশ করে নিজের সর্বশেষ আর্থিক অবস্থান নির্ণয় করাই এর উদ্দেশ্য। তিনি জানতে চান, তার লাভ-ক্ষতি, দায় ও সম্পদের বিষয়ে। একইভাবে, ঈমানদারদের উচিত নিজ নিজ জীবনের গত এক বছরের হিসাব নেওয়া। আর এ সম্পর্কে আল্লাহতায়ালা তাদের জিজ্ঞেস করবেন।

একটি বছর কম সময় নয়। বারো মাসে এক বছর। সাধারণত ত্রিশ দিনে এক মাস। প্রতিটি দিনে থাকে চব্বিশ ঘণ্টা। ষাট মিনিট নিয়ে একেকটি ঘণ্টা এবং ষাট সেকেন্ডে একেক মিনিট গঠিত হয়। আর প্রত্যেক সেকেন্ডকে গণ্য করা উচিত আল্লাহর পক্ষ থেকে আশীর্বাদ ও অনুগ্রহ হিসেবে। একেক সেকেন্ড একেকটি আমানত। 

হাসান বসরি বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান! তুমি হলে কিছুদিনের সমষ্টি। একেকটি দিন চলে যাওয়া মানে তোমার একেক অংশ হারিয়ে যাওয়া।’

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৫২১ ঘণ্টা, মার্চ ০১,  ২০১৭
এমএইউ/


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান