দেশি পাখি দেখতে হাল্লার হাকালুকি

আসিফ আজিজ, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৫:২৮, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
হাকালুকি হাওরে দেশি পাখির ওড়াউড়ি। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজ

হাকালুকি হাওরে দেশি পাখির ওড়াউড়ি। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজ

বড়লেখা, মৌলভীবাজার থেকে: দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকিতে যাওয়া এবারই প্রথম। শীতে হাওরের নীল জলরাশি আর পরিযায়ী পাখি দেখার অভিপ্রায়ে যাত্রা। সঙ্গে হাওর পাড়ে কনকনে শীতের নিস্তব্ধতা উপভোগ। শ্রীমঙ্গল থেকে ট্রেনে কুলাউড়া নেমে সোজা বড়লেখার হাল্লা। মূলত মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া ও সিলেটের কয়েকটি উপজেলা ছুঁয়ে গেছে ১৮ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমির হাকালুকি। এর মধ্যে বিল আবার সাড়ে চার হাজার হেক্টরের মতো।

এ হাওরের প্রায় ৪০ শতাংশ বড়লেখায় পড়েছে। বড়লেখা বাজার থেকে আট কিলোমিটার দূরের বালুঝিরি, ফলুভাঙ্গা বিলের পাড়ে আমাদের আস্তানা। এ পথে বাহন বলতে মোটরবাইক আর অটোরিকশা। বনবিভাগের একটি রেস্টহাউজ ও ওয়াচ টাওয়ার আছে সেখানে। পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য এ হাওর। হাকালুকির মধ্যে পড়া প্রায় শ’খানেক বিলের মধ্যেই এ বিল দু’টি। 
উড়তে উদ্যত পানকৌড়ি। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজগোধূলিলগ্নে সেখানে পৌঁছে দূর থেকে পাখিদলের ওড়াউড়ি দেখে খুশি হলেও মিলিয়ে যেতে দেরি হয়নি। স্থানীয়দের কাছে জানা গেলো, পরিযায়ী পাখি এ বিলে এবার আসেনি। মলিন মনে তবু ভোরের অপেক্ষায় থাকা। যদি দেখা মেলে!
 
প্রকৃতি মাঝে মধ্যে নিরাশ করলেও সবসময় হতাশ করে না। ঠিক ভোর না, তবে সকালের মিষ্টি আলো পাখিদের বেশ পছন্দ। তাই সে সময় বুঝেই হাওরে নৌকা ভেড়ানো। হাল্লার বালুঝিরির সীমানা কম নয়। দূরে চোখে ধরে কালো সীমারেখা। হাওরজুড়ে নীলচে পানি। বাঁশের খুঁটি পোতা তাতে। মিঠেপানির প্রচুর মাছ হয় এ হাওরে। সরকারের কাছ থেকে ইজারা নিয়ে মাছ চাষ হয় এখানে। যেখানে মাছ আছে সেখানে পাখি আসবেই। শুকনো মৌসুমে এ হাওরে পানি থাকে ফুট তিন-চারেক। 
হাকালুকিতে উড়ছে বালিহাঁসের দল। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজশীতের কুয়াশাভেজা সবুজ ঘাসে পা মাড়িয়ে কাদাপানি মেখে আস্তানা গাঁড়া হলো বোটে। অপেক্ষাকৃত নাব্য এলাকা ধরে ছুটলো জয়নালের ইঞ্জিন নৌকা। বিকল্প পাওয়া গেলো না কিছুতেই। বনবিভাগের নৌকাটির নাম আবার কান্ট্রিবোট। শুরুতেই বড় আকারে পানকৌড়িগুলো অদ্ভুত ওড়ার ভঙ্গি আর চাহনিতে মন ভালো করে দিলো। হঠাৎ কিছু দূরে ঠাহর করা গেলো জলে ভেসে বেড়ানো কিছু হাঁসপাখি। ইশারায় নৌকা সেদিকে ভেড়াতেই নিজেদের আর নিরাপদ মনে করলো না উড়ে গেলো বালিহাঁসের দল। 
শিকারের অপেক্ষায় শামুকখোল। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজযন্ত্রের বিপদ! আর একটু এগিয়ে আবিষ্কার করা গেলো বাঁশের খুঁটিতে বসা কিছু বড় আকারের বকজাতীয় পাখি। কাছাকাছি এসে এবার বন্ধ করা হলো ইঞ্জিন। কাজও হলো তাতে। উড়লো না সহজে। বেশ বড় আকারের গোটা বিশেক শামুকখোল চোখ তাক করে বসে মাছের খোঁজে। ছবির জন্য একটু পোজও দিলো তারা। সহকর্মীরাও এতো কাছ থেকে এতো বড় পাখি দেখে উচ্ছ্বসিত।
 
শিকারের অপেক্ষায় শামুকখোল। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজপানকৌড়ির আধিপত্য যে একচেটিয়া তাও বুঝতে দেরি হলো না বেশি। মাধ্যেমধ্যে পানি কালো করে দলবেঁধে জল ডুব ডুব মাছ শিকার করতে দেখা গেলো তাদের। একসঙ্গে এতো সংখ্যক পানকৌড়ি এর আগে দেখা হয়নি। আমাদের অবস্থান হাকালুকির পূর্বপাড়ে। যাচ্ছিলাম একবার পশ্চিমে একবার উত্তরে। পূর্বসীমায় আবার ত্রিপুরা পাহাড়। সেখানকার জুড়ি নদী আবার মিশেছে এ হাওরেই। 
কৌতূহলি বকের ঝাঁক। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজঘুরে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোতে দূর থেকে পানিতে ভাসা সাদা একপ্রকার পাখি নজর কাড়লো। কাছে গিয়ে দেখা গেলো সি-গাল। বেশ আপন  করে নেওয়া মায়াবি পাখি এরা। কখনও পানিতে ভেসে, কখনো খুঁটিতে বসে চোখে চোখ রেখে ডেকে চললো।
পানিতে পানকৌড়িদল। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজঠিক পূর্বপাড়ের ডাঙায় সবুজ ঘাসের জমা অল্প পানিতে তখন শ’খানেক সাদা বক গলা উঁচিয়ে দেখার চেষ্টা করছে কী ঘটছে জলে। হয়তো ভাবছিল বিশাল এ যান আর এ প্রাণীগুলো আবার কারা! কৌতূহলের শেষ নেই তাদের। টানা মিনিট দশেক এভাবে উঁকি-ঝুঁকি মেরে হয়তো নিরাপদ না ভেবে একদল গেলো উড়ে। পানকৌড়ি, শামুকখোল, সি-গাল, বকের মধ্যে সখ্য দেখা গেলো বেশ। তবে একটু আলাদা হয়ে দূরেই থাকলো বালিহাঁস গুলো। 
সি-গাল। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজপরিযায়ী পাখি না দেখা হলেও দেশি পাখিরাই মন জুড়ালো।  বাণিজ্যিক মাছ চাষ, কচুরিপানা, শাপলা প্রভৃতি না থাকায় এদিকটায় পরিযায়ী পাখি কম বলে মনে করেন পাখি বিশেষজ্ঞ তানিয়া খান। 

তবে এ এলাকায় পাখি বাড়াতে এবং একইসঙ্গে জলাবন সৃষ্টি করতে ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে বনবিভাগ। বনবিভাগ এ এলাকায় চার লাখ হিজলের চারা লাগিয়েছে গতবছর। চারাগুলো বড় হলে পাখি আরও বাড়বে বলে মনে করেন সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান। এক বছরে টিকে গেছে বেশি অংশ গাছ। আর যেগুলো মরে গেছে সেগুলো খুঁজে লাগানো হচ্ছে ফের। 
পানকৌড়ি। ছবি: আসিফ-বাংলানিউজএদিকটায় পরিযায়ী পাখি না এলেও হাওরের কিছু অংশে এসেছে বলেই জানা গেলো। তবে একদিকে বিষয়টি ভালোই। পরিযায়ীদের ভিড়ে দেশের আবাসিক পাখিগুলো নজর এড়িয়ে যায়। এখানে এলে পুরোপুরি দেশি পাখি দেখার সুযোগ মিলবে পাখিপ্রেমীদের।

আরও পড়ুন  
** বাইক্কা বিলের অ্যাক্রোবেট বেগুনি কালেম
** ‘বজ্জাত’ হরিণ ভাগিয়ে দিলো বনমোরগ
** যতো শীত ততো পাখি বাইক্কা বিলে
** বদলে গেছে পারাবত, বদলাননি যাত্রীরা

বাংলাদেশ সময়: ২১১৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৬, ২০১৭
এএ/এইচএ


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান