মানুষের ‘চরিত্র’ খুঁজে ফিরছেন লিমা

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৮:৩১, জানুয়ারি ৮, ২০১৭
তাসলিমা শেখ লিমা, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তাসলিমা শেখ লিমা, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: হাটে, মাঠে ঘাটে। নিজের নির্বাচনী পোস্টারগুলো দেখলেই বুকের মধ্যে মোচড় দেয় লিমার। তখন কেমন যেন বেদনায় মুষড়ে ওঠে তার মন। সেটা যতটা না নির্বাচনে হেরে যাবার। তার চেয়ে বেশি মানুষের বৈচিত্র্যময় আচরণে, প্রতারণার রকম ফেরে।

নির্বাচনে দাঁড়ালে কেবল প্রতিশ্রুতি বা আশ্বাসই নয়। বাড়তি ‘আরো কিছু’ দিতে হয়। সেটাও অজানা ছিলো না লিমার। সাধ্যমত দিয়েছেনও সবকিছু। কাউকে নগদ টাকা, কাউকে কার্টন-কার্টন সিগারেট। আবার কাউকে দামি জামদানি শাড়ি। কোনো চেষ্টাই বাকি রাখেননি। বিনিময়ে প্রতিশ্রুতি, প্রতিজ্ঞা এবং আশ্বাসের কমতি ছিলো না।

কেউ পবিত্র গ্রন্থ ছুঁয়ে। কেউ বা মাথা ছুঁয়ে দিব্যি দিয়ে, কেউ আবার নাতির মাথা ছুঁয়ে কসম করে ভোট দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তবে ভোট গণনা শেষে নিজের পক্ষে কোনো ব্যালট না পড়ায় মাথায় হাত পড়েছে লিমার।

পুরো নাম তাসলিমা শেখ লিমা (৩১)। সাভারে ক্ষমতাসীন দলের নারীনেত্রী হিসেবেই পরিচিত তিনি। আশুলিয়া থানা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ঢাকা জেলা যুব মহিলা লীগের যুগ্মআহবায়ক।

এসবের বাইরে সদ্য বিদায়ী ঢাকা জেলা পরিষদের প্রশাসক ও সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা দৌলার ঘনিষ্ঠ হিসেবেও রয়েছে আলাদা পরিচিতি। প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত এক যুগের বেশি সময়।

 তাসলিমা শেখ লিমার নির্বাচনী পোস্টার, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমরাজনীতি করতে গিয়ে সংসার ছাড়া হারিয়েছেন অনেক আগে। মাত্র তিন মাসের সংসার জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে ওপথে আর পা বাড়াননি লিমা। তবে নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েই আবার তিক্ত অভিজ্ঞতা তার ঝুলিতে। লিমা বললেন, ‘মানুষ চিনতে-চিনতেই পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে হৃদয়।’

সম্প্রতি শেষ হওয়া জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে গিয়েই নতুন করে মানুষের চরিত্র চেনার মিশনে এই নারী। ঢাকা জেলা পরিষদ নির্বাচন ৯ নম্বর ওয়ার্ডে সাধারণ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিলেন লিমা।

আশুলিয়ার শিমুলিয়া, ধামশোনা, পাথালিয়া ও আশুলিয়া ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই ছিলেন মূলত ভোটার। লিমা ছাড়াও এই ওয়ার্ডে প্রার্থী ছিলেন আওয়ামী ঘরনার দুই প্রার্থী।

লিমা বাংলানিউজকে জানান, সাহস করেই সাধারণ সদস্য পদে পুরুষ প্রার্থীদের সঙ্গে লড়াইয়ে নেমেছিলাম। নির্বাচনে যে টাকার খেলা শুরু হয়েছিলো তা কল্পনার বাইরে।

আক্ষেপ করে তিনি বলেন, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের। একজন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও অন্যজন যুবলীগ নেতা। আমি ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্যদের বাড়ি-বাড়ি গেলাম, ভোট চাইলাম। নারী ভোটার ১৫ জন। তারা কেউই ফেরালেন না।

তারা জানালেন, ‘আফা আপনি একমাত্র নারী। আর আমরাও নারী। ভোট তো আপনারেই দিমু তয়...।’

তবে এই ‘তয়’ শব্দটা বুঝে নিতে কষ্ট হয়নি লিমার। তিনি বলেন,‘আমি মার্কেটে ছুটে গেলাম। প্রত্যেকের হাতে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকার মূল্যের জামদানি শাড়ি কিনে দিলাম। হাতে গুজে দিলাম কাউকে ৫ হাজার, আবার কাউকে ১০ হাজার টাকা।

তাসলিমা শেখ লিমা, ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘মোট ভোটার ৬২ জন। এরমধ্যে পুরুষ মেম্বার বা চেয়ারম্যান প্রার্থীদের তিনজন ছাড়া সবাই আমার কাছ থেকে ভোট দেওয়ার কথা কইয়া টাকা নিছে। কার্টন-কার্টন সিগারেট নিছে। এক কার্টন সিগারেটের দাম সাড়ে সাত হাজার টাকা। এভাবে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মতো খরচ হয় আমার’- বলেন লিমা।

আক্ষেপের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নারীরা আমার শাড়ি পিইন্দা ভোট দিলো। কিন্তু দিলো না ভোট আমারে। ভোট গণনা শেষে আমি দেখলাম- একজনও ভোট দেয় নাই আমারে। তাইলে ক্যান টাকা নিলো, শাড়ি নিলো, সিগারেট নিলো?

লিমা বলেন, ‘মাইনষের চরিত্র কোথায়? ধর্মগ্রন্থ ছুঁয়ে কথা দিলো। এমনকি নাতির মাথায় ছুয়েঁ কথা দিলো ভোট দিবো, কিন্তু ভোট দিলো না। গণনা শেষে দেখা গেলো- একজনও ভোট দেয় নাই।’

তারপর থেকেই মানুষের ‘চরিত্র’ খুঁজে ফিরছেন এই নারী। রাজনীতি তো অনেকদিন করলেন প্রাপ্তি কী? এমন প্রশ্নের জবাবে লিমা বললেন, ‘কী আবার! ঘোড়ার আণ্ডা’।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১৭
টিআই

 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান