আন্তঃপ্রজাতি প্রজননের ফসল ভোগ করছি আমরা!

অফবিট ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৫:০২, জানুয়ারি ৬, ২০১৭
আধুনিক প্রজাতির মানুষের পূর্বসুরীরা, ছবি: সংগৃহীত

আধুনিক প্রজাতির মানুষের পূর্বসুরীরা, ছবি: সংগৃহীত

আজ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে আমাদের আধুনিক প্রজাতির মানুষের পূর্বসুরীরা (হোমো স্যাপিয়েন্স নামেরই আদি আধুনিক মানব প্রজাতি) জন্মস্থান আফ্রিকা ছেড়ে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।

আরব উপদ্বীপ, সাইবেরিয়া ও ইউরেশিয়ায় তারা মুখোমুখি হয় সমসাময়িক, কিন্তু হাজার-হাজার বছর আগে থেকেই বাস করে আসা মানব প্রজাতি হোমো নিয়ান্ডারথ্যালেনসিস বা নিয়ান্ডারথাল, হোমো ইরেক্টাস,  হোমো সোলোয়েনসিস, হোমো ফ্লোরেসিয়েনসিস ও হোমো ডেনিসোভানদের। আফ্রিকায়ও রয়ে যাওয়ারা পরবর্তীতে মুখোমুখি হয় হোমো রুডোলফেনসিস ও হোমো ইরগেস্টারদের।

সবার সঙ্গে পরবর্তী কয়েক হাজার বছর সহাবস্থান থাকলেও সাইবেরিয়ার ডেনিসোভা দ্বীপের গুহামানব হোমো ডেনিসোভা ও ইউরেশিয়ার নিয়ান্ডারথালদের মিলন-মিশ্রণ বেশি ঘটেছে স্যাপিয়েন্সদের। এমনকি এ তিন প্রজাতির আন্তঃপ্রজননে বিবর্তিত হয়ে আমরা আধুনিক হোমো স্যাপিয়েন্সরা অনেক ভালো কিছু নিজেদের মাঝে ধারণ করেছি বলে জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।  

যখন হোমো স্যাপিয়েন্সরা আরবে উপস্থিত হয়, তখন ইউরেশিয়ার প্রায় সব অঞ্চলে অন্যান্য মানব প্রজাতির আবাস ছিল। তাদের বিলুপ্তির কারণ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, আফ্রিকার বাসিন্দারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ে অন্য প্রজাতির মানুষের সঙ্গে প্রজননে লিপ্ত হয়। আজকের পৃথিবীর মানুষেরা হলো ওই সময়কার আন্তঃপ্রজাতি প্রজননের ফলাফল।

২০১০ সালে নিয়ান্ডারথাল জিনোমের মানচিত্র তৈরি করে বিজ্ঞানীরা দেখতে পান, মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের আধুনিক মানুষ ৪ শতাংশ পর্যন্ত ডিএনএ পেয়েছে নিয়ান্ডারথালদের কাছ থেকে। কয়েক মাস পর ডেনিসোভা মানবদের জিনোমের মানচিত্র তৈরি হলে দেখা গেল, আধুনিক মেলানেশিয়ান ও আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ানদের সঙ্গে ৬ শতাংশ পর্যন্ত মিল আছে ডেনিসোভানদের ডিএনএ’র।

মাথার খুলি, ছবি: সংগৃহীতএ ফলাফল আন্তঃপ্রজাতি প্রজনন মতবাদের সত্যতা প্রমাণ করে। নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদের সঙ্গে স্যাপিয়েন্সদের যৌন মিলনে সৃষ্ট কয়েকটি শঙ্করায়িত মানব প্রজাতির সন্ধান পেয়ে বিজ্ঞানীরা এখন বলছেন, আমরা আধুনিক মানুষেরাও এসেছি তাদের সঙ্গে আন্তঃমিলনে।

স্যাপিয়েন্স, নিয়ান্ডারথাল আর ডেনিসোভানদের এ জৈবিক সম্পর্ককে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এভাবে- তারা পরস্পর থেকে যথেষ্ট ভিন্ন হলেও যৌন মিলন ও উর্বর সন্তান জন্মদানে সক্ষম ছিল। এরপর বিবর্তনের পথ ধরে পরস্পর থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায় তারা।

এরপর ৫০ হাজার বছর আগে থেকে স্যাপিয়েন্সরা প্রভুত্ব করতে শুরু করে আর হারিয়ে যেতে থাকে নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানরা। নতুন প্রযুক্তি ও উচ্চতর সামাজিক নৈপুণ্যের কারণে স্যাপিয়েন্সরা ছিল অধিক দক্ষ শিকারি ও সংগ্রাহক। ফলে তারা সংখ্যাবৃদ্ধি করে আরো ছড়িয়ে পড়ে।

পক্ষান্তরে জলবায়ু পরিবর্তন ও সম্পদের তীব্র প্রতিযোগিতায় হেরে এবং সহিংসতা ও হত্যার শিকার হয়ে নিয়ান্ডারথালরা ৩০ হাজার বছর আগে আর ডেনিসোভানরা আরও কিছুদিন পরে চিরতরে হারিয়ে যায় পৃথিবী থেকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, নিয়ান্ডারথাল ও ডেনিসোভানদের কাছ থেকে ভালো অনেক গুণ গ্রহণ করে তাদের হটিয়ে পুরো পৃথিবী জয় করেছে হোমো স্যাপিয়েন্সরা। আর এটি মূলত সম্ভব হয়েছে আমাদের অনন্য সাধারণ ভাষার বদৌলতে।

বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৬, ২০১৭
এএসআর/টিআই

 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান