গাজীপুর হানাদারমুক্ত দিবস বৃহস্পতিবার

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০১:৪৮, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’/ফাইল ফটো

গাজীপুরে মুক্তিযুদ্ধের প্রথম ভাস্কর্য ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’/ফাইল ফটো

বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) গাজীপুর হানাদারমুক্ত দিবস। ৪৪ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়ে গাজীপুর থেকে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরের দিন সকালে সারাদেশের মতো গাজীপুরের মু্ক্তিযোদ্ধারাও লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বিজয়ীর বেশে রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস করেন।

গাজীপুর: বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) গাজীপুর হানাদারমুক্ত দিবস। ৪৪ বছর আগে ১৯৭১ সালের এই দিনে স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পরাজিত হয়ে গাজীপুর থেকে পালিয়ে যায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। পরের দিন সকালে সারাদেশের মতো গাজীপুরের মু্ক্তিযোদ্ধারাও লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে বিজয়ীর বেশে রাস্তায় রাস্তায় উল্লাস করেন।

হানাদারমুক্ত দিবস উপলক্ষে গাজীপুরে নানা প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসেও পালিত হবে নানা কর্মসূচি।

জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য মতে, গাজীপুরে সর্বশেষ জয়দেবপুর থানার আশপাশসহ ছয়দানা ও পূবাইল এলাকায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তি ও মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ চলে। এসব যুদ্ধে পাকিস্তানি বাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। ফলে ১৫ ডিসেম্বর গাজীপুর পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয়। পরের দিন ১৬ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে উল্লসিতভাবে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুমুক্ত গাজীপুরের জয়দেবপুরে প্রবেশ করেন। 

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে গাজীপুরবাসীর রয়েছে অবিস্মরণীয় বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা। ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ এই গাজীপুরের জয়দেবপুরে হয়েছিল প্রথম সশস্ত্র গণপ্রতিরোধযুদ্ধ। জয়দেবপুর রাজবাড়িতে অবস্থিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সদস্যদের নিরস্ত্র করতে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জাহান জেব ঢাকা সেনানিবাস থেকে গাজীপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হলে সকল স্তরের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। বর্তমান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের নেতৃত্বে সশস্ত্র প্রতিরোধ আন্দোলনের অংশ হিসেবে শহরের রেলগেট ও চান্দনা-চৌরাস্তায় তাকে বাধা দেওয়া হয়। 

বাধা পেয়ে জাহান জেব ছাত্র-জনতার ওপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিলে পাকিস্তানি সেনারা তাই করে। ওই সময় নেয়ামত, মনু খলিফা, হুরমত আলী ও কানু মিয়া শাহাদতবরণ করেন। ওইদিন সারাদেশে ধ্বনি উঠেছিল, ‘জয়দেবপুরের পথ ধর বাংলাদেশ স্বাধীন কর’। 

২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী দেশব্যাপী নৃশংস হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে গাজীপুরের রাজনৈতিক নেতাকর্মী, ছাত্র-জনতা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য প্রশিক্ষণ নিতে ভারতে যান। প্রশিক্ষণ শেষে জয়দেবপুরের আশপাশে এসে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। গাজীপুরে মুক্তিযোদ্ধারা ব্যাপক তৎপরতা শুরু করেন এবং হানাদার বাহিনীর ওপর আক্রমণ চালাতে থাকেন। 

১২ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা সম্মিলিতভাবে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর জোরালো আক্রমণ চালালে তারা অনেকটা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জয়দেবপুর সেনানিবাস, অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি, মেসিনটুলস ফ্যাক্টরি, রাজেন্দ্রপুর অর্ডন্যান্স ডিপো থেকে পাকিস্তানি সৈন্যরা ঢাকার দিকে পালানোর জন্য চান্দনা-চৌরাস্তায় সমবেত হতে থাকে। এদিকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইলের দিকেও মিত্র ও মুক্তি বাহিনীর আক্রমণে টিকতে না পেরে সেখান থেকে পাকিস্তানি বাহিনী সড়ক পথে ঢাকার দিকে ছুটতে থাকে। পিছু হটার সময় তারা গাজীপুরের কড্ডা ব্রিজ বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় এবং চান্দনা-চৌরাস্তায় এসে তাদের বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে যোগ দেয়। অপরদিকে তাদের পিছু ধাওয়া দেওয়া মুক্তি, মিত্র ও কাদেরিয়া বাহিনী কড্ডা ব্রিজ পেরোতে না পেরে গাজীপুরের কাশিমপুরে অবস্থান নেয়। 

১৪ ডিসেম্বর চান্দনা-চৌরাস্তায় জড়ো হওয়া হানাদার বাহিনীর বিশাল একটি কনভয় ঢাকার দিকে রওনা হয়ে গাজীপুর ছয়দানা নামক স্থানে পৌঁছলে কাশিমপুর থেকে মুক্তিবাহিনী, মিত্রবাহিনী ও কাদেরিয়া বাহিনী তাদের ওপর কামান ও মর্টারের প্রবল গোলাবর্ষণ করে। এতে হানাদার বাহিনীর প্রায় ৪-৫শ’ সৈন্য মারা যায়, ধ্বংস হয় তাদের কামান-ট্যাংকসহ বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও যানবাহন। এ আক্রমণ ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। 

পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়ে ১৫ ডিসেম্বর জয়দেবপুর মুক্ত হয়। তবে সেদিন পর্যন্ত যুদ্ধ অব্যাহত থাকায় অল্পসংখ্যক মুক্তি বাহিনী জয়দেবপুর প্রবেশ করে। পর দিন ১৬ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তি বাহিনী জয়বাংলা ধ্বনিতে চারিদিক প্রকম্পিত করে সম্মিলিতভাবে গাজীপুরের জয়দেবপুর প্রবেশ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৭৩৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৫, ২০১৬
আরএস/এইচএ/


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান