প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প | রিমঝিম আহমেদ

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০৮:৫১, ডিসেম্বর ১, ২০১৬

বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি রিমঝিম আহমেদের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প। 

কবি রিমঝিম আহমেদ পেশায় একজন উন্নয়নকর্মী। বাংলানিউজের শিল্প-সাহিত্য বিভাগের বিশেষ আয়োজন ‘প্রিয় পাঁচ কবিতা ও কবিতার গল্প’র এবারের পর্বে থাকছে, কবি রিমঝিম আহমেদের নিজের লেখা প্রিয় পাঁচ কবিতা ও সেগুলো লেখার পেছনের গল্প। 

অবশ্য কবির দাবি, যে কবিতাগুলো উল্লেখ করছি তা কেবল অর্ধ-প্রিয়। কেবলই একটা পথরেখা, যেটা বেয়ে হেঁটে যাচ্ছি প্রিয়দের দিকে...


(অর্ধ)প্রিয় পাঁচ কবিতা

প্রজাপতি
আমার মেয়ের নাম প্রজাপতি। প্রজাপতির মতোই ওড়ে, হাসে, গায়, 
নাচে। সকালবেলা ওর চুলের ফিতেয় এসে জড়ো হয় শত-শত 
পাতিহাঁস, দুপুরে রোদ্দুর, বিকেলে শালিক; সন্ধ্যা হলে বুনোফুলের ঘ্রাণ।
রাতভর স্বপ্নেরা ওকে চুমু খেয়ে, ভালো ভূতের গল্প শুনিয়ে উড়ে যায়।

আমি কোনও-কোনও বিষণ্ন প্রহরে ওর ডানাদুটো ধার করি, উড়ি, হাসি, 
ভাসি, ভেসে ভেসে দেখে আসি চিলেকোঠার ঘরে সারাগায়ে ভান মেখে
দ-ভঙ্গিমায় একজন শুয়ে থাকে; আমি তাকে সবচেয়ে সুরেলা ফোক
গানটি শুনিয়ে আসি। তারপর সে মৃদু হেসে নিজের বামবুকে হাত রেখে 
ঘুমিয়ে পড়ে যেখানে আমি থাকি- যত্নে, অবহেলায়!

বিষণ্নতার মৃত্যুর পর প্রজাপতিকে ডানাদুটো ফেরত দিই আবার। অবশ্য 
সেগুলো বড় আঁটোসাঁটো লাগে আমার!

রাষ্ট্র ও ধর্ম
ভূস্বামী আজ ধৃতরাষ্ট্রে ছেলে
রক্ত যাদের হোলির মতোই প্রিয়
অন্ধ পিতার অনন্ত প্রশ্রয়
পট্টি বেঁধেছে মাতাজি গান্ধারীও

খুচরো আদুলি গড়াগড়ি খায় পথে
শিয়রে রেখেছি হস্তরেখার বই
আবছা হয়েছে ভবিতব্যের রেখা
মৃত্যুকে লাগে অবিচ্ছেদ্য সই

রাষ্ট্র এখন সাড়ে তিনরুম ফ্ল্যাট
জাদুবাকশোয় সমূহ নজরদারি
পাঁজর খুলেই ঘুমাই সরীসৃপ
বারুদগন্ধে হয়েছে আকাশ ভারী

উপোসী বাঘের নখরে জমেছে থাবা
রাষ্ট্র, ধর্ম রক্তের তীব্রতা
দখিন হাতের খড়গ উঁচিয়ে ধরে
রক্তবীজের বিনাশ করো হে মাতা

পরানসখা

দাঁড়াও, আলো আনছি
বলে কেউ একজন অন্ধকারে হারিয়ে গেলো
সামনে চৌরাস্তা
কোন পথে যাব ভাবতে ভাবতে বুঝলাম
পায়ের লিগামেন্টে টান পড়েছে
তখন আমার তৃতীয় চিৎকারটি দিলাম
 
প্রথম দিয়েছি জন্মচমকে, দ্বিতীয় প্রসববেদনায়
 
আর তৃতীয়টি
তোমাকে ছুঁতে না পারার আর্তনাদ 

নাম 
একটা নাম, মুছে ফেলতে ফেলতে অন্য নামের দিকে আমার গন্তব্য বাড়িয়ে দিয়েছি। 
কতটুকু পথ চাঁদে ভিজে এলাম, ভাবছি কেন এত ঘাম শরীরজুড়ে! এত এত আকুলতা!
আমাদের বয়সের মধ্যবর্তী দূরত্বটুকু অসুখ, এলাচদানার মতো বেঁচে থাকে ঘ্রাণতর্পণে।
লেবুঘঁষা দাগের উপর সংসার চেপে আছে, আছে মাথার উপর মিথ্যেচারী আকাশ। 
ভাবছি এ কোন জ্বরভাব আগুনফুলের মতো ফুটে আছে শোকার্ত চামড়ায়! দৃষ্টিতে 
সন্ধ্যা মেখে তাকিয়েছ যে নামের মহিমায়, সে নাম ফেলে এসেছি বহুদিন! বুঝি- 
আমাদের চোখের বয়স সমান, সমবয়সী ¯পর্শ থেকে চুইয়ে পড়ে কাঁপাকাঁপা সুখ। 

এই পথ পথিকের আয়ু মুছে দেয়; পায়ে পায়ে লেগেছে পথের ঘুঙুর। ভাবছি, শরীরের
গাঁট খুলে মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়বে স্বর্গের মানচিত্র! এই শহর, গারদের দেয়াল টেনে দাঁড়িয়ে 
আছে, ক্ষুধার্ত কুকুরের মতো ইচ্ছেরাও বহুগামী। বহুদূর গামী... অপেক্ষার তালিকা ছিঁড়ে
তোমার সামনে একদিন বসবো বিকারহীন, ওষ্ঠজোড়া জ্বর নিয়ে, আমার ভাবনার চেয়ে
দ্বিগুণ বোকা স্টেথোস্কোপ পড়তে জানে ধ্বনি ও ক¤পন। জানে না, আমার ভেতরঘরে 
কেন রাত বাড়ে! আহা, রাত!

সুবেহ তারা
একদিন মন ভালো হলে তোর কাছে যাব, সুবেহ তারা। মধ্যমায় মমতা জমেছে, তর্জনীতে ভুল। 
সবটুকু উপুড় করে দেব- তোর চোখে। কড়ই কাঠের দরজা থেকে চুঁইয়ে পড়ছে পাতার ঘ্রাণ। বড় 
ছায়াকীর্ণ পথ, ধুলোয় মাখামাখি। যেন ধুলো ঝাড়লেই সহস্র পাখি উড়ে যায় নিশ্চিন্তিপুর বনের দিকে। 
কাঠের দেরাজে রাখা মায়াবড়ি, কত শত ভ্রুণের কান্নায় জমে গিয়ে গোল হয়ে গেছে! রমণীরা জানে, 
তারচে বেশি জানে ইচ্ছেমৃত্যুর রাত। আমারও মা ছিল- কেবল মায়ের জরায়ুটা বিক্রি হয়ে গিয়েছে 
নাকফুলের দামে|


কবিতার গল্প
কবিতা; ওই যে ঘুমের ভেতর স্বপ্ন আসে, স্বপ্নের ভেতর অজস্র দৃশ্য যা ধরতে ধরতেই ভ্যানিশ হয়ে যায়, ঘুম ভেঙে সে স্বপ্নে দেখা খণ্ডবিখণ্ড দৃশ্যগুলো কুড়িয়ে জোড়া দিতে দিতে একসময় তৈরি হয় কিছু অবয়ব যা ব্যাখ্যাযোগ্য নয়, সবসময় মনঃপূত হয় না, একরাশ অতৃপ্তি নিয়ে আবার শব্দ আঁকা... প্রিয় কবিতা, সে তো আরও জটিল ব্যাপার-স্যাপার। 

আমার ধারণা, আজ অব্দি কবিতা লেখাই তো শুরু করিনি, প্রিয় কবিতা আবার কখন লিখলাম! যা লিখেছি এর মধ্যে প্রিয় পাঁচ এখনও লিখিনি বলেই আজও আমি কবিতা লিখি। প্রিয় যেদিন লিখতে পারব, সেদিন আমার আর লেখার দরকার পড়বে না।

কবিতা লেখার পেছনের কোনো গল্প নেই। হঠাৎ কোনো আলোর ঝলকানির মতো শব্দ এসে মাথায় টোকা দেয়, ক্রমাগত কড়া নাড়ে, অবশেষে আমাকে দরজা খুলেতে হয়, বসতে দিতে হয়। এভাবেই আসে কবিতারা। বসে পড়ে আমার শাদা পাতায়। ‘নিজের প্রিয় কবিতা’ বিষয়টাই কেমন ক্লিশে মনে হয়। বলে রাখি, কবিতা বলে যা লিখি তা আমার বোধের ক্ষরণ, ব্যক্তিগত যন্ত্রণা। যার বেশিরভাগই অব্যক্ত থেকে যায় যথাযথ শব্দের অভাবে, যা নিজের কাছেও জলে ভেজা কাচের মতো ঝাপসা, অস্পষ্ট। যা কাউকে জানাতে চাই, আবার চাইও না। কবিতা জন্মের ইতিহাস জানা নেই আমার। মহাকালের পথ ধরে হাঁটছি। কাদাজল, ধুলোপথ, কাঁটাবন, রক্তপাত, হাড়ের দঙ্গল পেরিয়ে কেবলই ছুটে চলা অবিরাম। সেইসব ক্লান্তি, বিরহ, না পাওয়া, হাতছানি, ভাবাকুলতা ছুঁয়ে যায় মন ও মননে। কবিতা আসে, ধরা দিতে দিতে হারিয়ে যায়। এই তো কবিতার পেছনের গল্প!

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০১, ২০১৬
এসএনএস 


 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান