বন্যার পানি বাড়ছেই

বাংলানিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০১:১৯, আগস্ট ২৪, ২০১৫
ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ঢাকা: দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নতুন নতুন এলাকা। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। বন্ধ হয়ে গেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি সঙ্কট। ঘরবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রের দিকে ছুটছে মানুষ।

এর মধ্যে সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, শেরপুর, বগুড়া, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও জামালপুরের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। তবে, নীলফামারী ও ফেনীর বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

বাংলানিউজের স্টাফ, ডিস্ট্রিক্ট ও উপজেলা করেসপন্ডেন্টদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত

সিরাজগঞ্জ: যমুনার পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সিরাজগঞ্জে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে।

রোববার দুপুরে যমুনা নদীর হার্ডপয়েন্ট এলাকায় ১৩.৭৪ মিটার পানি রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদসীমার ৩৯ সে.মি. উপরে। কোনো কোনো এলাকা বিপদসীমার ৪৪ সে.মি. উপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে, গত ২দিনে জেলার ৪টি উপজেলার ২৩টি ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এছাড়াও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মন্দির ও হাটবাজারসহ হাজার হাজার একর আবাদি জমি ডুবে গেছে।

দুপুরের দিকে বন্যা কবলিত কাজিপুরের মাইজবাড়ী, ঢেকুরিয়া, বিলচতল ও মেঘাই এলাকা ঘুরে জানা যায়, শনিবার (২২ আগস্ট) বিকেল থেকে হঠাৎ করে যমুনা নদীর পানি বাড়তে শুরু করে। এতে নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো মুহূর্তেই প্লাবিত হয়। হঠাৎ বন্যায় পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ বিপাকে পড়েছে।

নিম্নআয়ের শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে বন্যার্তদের মাঝে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। তবে, বন্যা কবলিতরা এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি।

কাজিপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাফিউল আলম বাংলানিউজকে জানান, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের ২৫শ’ পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অর্ধশতাধিক পরিবার। ৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি হাট-বাজার বন্যার পানিতে ডুবে গেছে।

এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্লাস পার্শ্ববর্তী স্কুলে চালানোর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রেনজন চাম্বুগং বাংলানিউজকে জানান, সদর উপজেলার ছোনগাছা, খোকশাবাড়ী, মেছড়া, কাওয়াকোলা, কালিয়া হরিপুর ও সয়দাবাদ ইউনিয়নের প্রায় ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি।

বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বাংলানিউজকে জানান, বেলকুচি সদর, বড়ধুল ও রাজাপুর ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলার প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। যমুনা নদীর বেলকুচি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৪৪ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শামীম আলম বাংলানিউজকে জানান, শাহজাদপুরের কৈজুরী, রুপবাটি, ডালা, সোনাতনী ও জালালপুর ইউনিয়নের ৩ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। উপজেলা প্রশাসন সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ হাসান ঈমাম বাংলানিউজকে জানান, শহরের হার্ডপয়েন্ট এলাকায় যমুনার পানি বিপদসীমার ৩৯ সে.মি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  আরও দু’দিন পানি বাড়তে পারে। তবে, এখনও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি।

জামালপুর: যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টায় পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ১৫ দশমিক ৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে যমুনার পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

জামালপুর জেলায় যমুনার বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে পানির এ প্রবাহ রেকর্ড করা হয় বলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নব কুমার জানিয়েছেন।

নীলফামারী: বন্যায় নীলফামারীর নিম্নাঞ্চল এখনও প্লাবিত। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণে হাঁটু পানিতে তলিয়ে থাকা এলাকার মানুষগুলো পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাড়ি থেকে বের হতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ।

অন্যদিকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পানিতে তলিয়ে থাকায় লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটছে শিক্ষার্থীদের। হাঁটু পানিতে ভিজে স্কুলে যেতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। জেলা শহরসহ একই অবস্থা অন্যান্য উপজেলাগুলোরও।

এদিকে, ভারী বৃষ্টিপাত হলেও পানি বাড়েনি তিস্তা নদীতে। তবে, গত চার দিনে তিস্তা নদীর আশপাশের এলাকায় আড়াইশ’ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মুন্সিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল মান্নান জানান, হাল্কা বৃষ্টিপাত হলেও পানিবন্দি হয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। গত কয়েকদিন থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় ভোগান্তি আরো বেড়েছে শিক্ষার্থীসহ শিক্ষকদের।

প্রধান শিক্ষক আকলিমা বেগম লাইলী জানান, প্রতিষ্ঠানটিতে সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী রয়েছে। বৃষ্টিপাতের কারণে আসা যাওয়া সমস্যা হয় সবার। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অতি দ্রুত বিদ্যালয়ের মাঠটি ভরাট করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।

জেলা প্রশাসক মো. জাকীর হোসেন বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, বন্যার বিষয়টি মনিটরিং করা হচ্ছে। পানি নামতে শুরু করেছে। তবে, এখনো ক্ষয়ক্ষতির কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

গাইবান্ধা: টানা বর্ষণে গাইবান্ধার বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। এতে জেলা সদর, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৩১ ইউনিয়নের ৪০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

রোববার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে গাইবান্ধা সংলগ্ন ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমা সামান্য নিচে রয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)।

বন্যায় সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদী সংলগ্ন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

ঘাঘটের পানি বৃদ্ধিতে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ও সর্বানন্দ ইউনিয়নের দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী রয়েছে। এসব এলাকার আমন বীজতলা, আউশ ধান, পটল ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে।

এছাড়া, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ফুলছড়ির সিংড়িয়ায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই মিল্টন বাংলানিউজকে জানান, জরুরি ভিত্তিতে ১৫টি ইউনিয়নে ১২টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে বন্যা কবলিত মানুষ এবং তাদের গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এতে জেলার বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে।

রোববার (২৩ আগস্ট) দুপুর ২টায় জেলার ফেরিঘাট পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমা ২৬ মিটার ৫০ সেন্টিমিটার থেকে ৩৩ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা ২৪ মিটারের ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।

এদিকে, বন্যার পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হতে থাকায় জেলার ৫৩টি ইউনিয়নের অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।

বসতভিটা ও কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বানভাসী মানুষেরা মূল্যবান জিনিষপত্র ও গবাদি পশু নিয়ে পাকা সড়ক ও উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান এসব তথ্য বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সেতু পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৪ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

অন্যদিকে নুনখাওয়া পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার সামান্য নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ অপরিবর্তিত রয়েছে।

এদিকে, সরকারি ও বেসরকারিভাবে বন্যার্তদের জন্য কোনো ত্রাণ তৎপরতা না থাকায় অনেক পরিবারের মধ্যে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক মো. শওকত আলী সরকার জানান, বন্যার পানিতে আংশিক ও সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে ৪৫ হাজার ৮৪০ হেক্টর জমির আমন ক্ষেত। তবে পানি দ্রুত নেমে গেলে উঁচু স্থানের আমনের তেমন ক্ষতি হবে না বলে তিনি জানান।

বন্যার ক্ষয়ক্ষতি বিষয়ে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক খান মো. নুরুল আমীন বাংলানিউজকে জানান, বন্যা কবলিতদের জন্য ৮০ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তালিকা তৈরির কাজ চলছে।

তিনি আরো জানান, জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা ও ৫০০ মেট্রিকটন চাল এবং গৃহ সংস্কার-নির্মাণ বাবদ ১৫ লাখ টাকা বরাদ্দ চেয়ে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

রংপুর (বদরগঞ্জ): রংপুরের বদরগঞ্জে টানা বর্ষণ ও উজানের ঢলে যমুনেশ্বরী নদীতে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে কয়েকশ’ পরিবার। ফলে মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে।

এছাড়া করতোয়া, মরাতিস্তা, চিকলী ও ঘাঘট নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে তলিয়ে গেছে আমনসহ সবজি খেত। ভেসে গেছে শতাধিক পুকুর ও জলাশয় থেকে প্রায় কোটি টাকার মাছ।

উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ মুকসুদপুর বানুয়াপাড়া, কিসমতঘাটাবিল মীরাপাড়া, ফাটকের ডাঙ্গা, দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুল বাড়ি, বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ঘৃলাই, লোহানীপাড়া ইউনিয়নের মালতোলা, কালুপাড়া ইউনিয়নের বৈরামপুর এবং পৌর শহরের মাস্টারপাড়া ও সাহাপাড়া পানিতে তলিয়ে গেছে।

রোববার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ বলেন, ভাঙন কবলিত এলাকার লোকজনকে এরই মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অন্য জায়গায় সরিয়ে নিয়েছেন।

নওগাঁ: নওগাঁর আত্রাই উপজেলার ফুলবাড়ী এলাকায় আত্রাই নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে চার গ্রামসহ আশপাশের এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

রোববার (২৩ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বাঁধে ভাঙন শুরু হয়। দুপুর ১টা পর্যন্ত বাঁধের প্রায় ৫০ ফুট ভেঙে যায়।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকেল থেকে উজানের ঢলের কারণে আত্রাই নদীর পানি বেড়ে যায়। রোববার সকালে ফুলবাড়ী এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে আত্রাই উপজেলার পূর্ব মিরাপুর, ফুলবাড়ি, উদনপৈয়, মিরাপুর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ফলে এসব গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পানিতে এলাকার বেশ কয়েকটি খেতের ফসল তলিয়ে গেছে।

তারা আরো জানান, আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নওগাঁ-আত্রাই সড়ক, সুটকিগাছা-বান্দাইখাড়া সড়ক, কাশিয়াবাড়ি বেড়িবাঁধে নতুন করে ভাঙনের আশঙ্কা
দেখা দিয়েছে। এলাকার লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও উপজেলা প্রশাসন ওইসব স্থানে বালুর বস্তা দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করছেন।

নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন জানান, টানা বৃষ্টির কারণে উজান থেকে ঢলের পানি এসে হঠাৎ আত্রাই ও ছোট যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে বিভিন্ন বাঁধে সম্ভাব্য ভাঙন স্থানগুলোতে মেরামত করা হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, আত্রাই নদীর পানি রোববার সকাল থেকে বিপদসীমার প্রায় ৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফুলবাড়ী উপজেলায় আত্রই নদীর পানির বিপদসীমা ১৬.১০ সেন্টিমিটার, বর্তমানে রয়েছে ২৩ সেন্টিমিটার।

ধুনট (বগুড়া): উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে যমুনার পানি বেড়ে বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়নের ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

রোববার (২৩ আগস্ট) সকালে ইউনিয়নের উত্তর শহরাবাড়ি, দক্ষিণ শহরাবাড়ি, শিমুলবাড়ি, রাধানগর, বৈশাখী, বথুয়ারভিটা, বানিয়াজান, কৈয়াগাড়ি, রঘুনাথপুর, ভুততবাড়ি, পুকুরিয়া ও মাধবডাঙ্গা এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আতিকুল করিম আপেল বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, কয়েকদিনের পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিতে যমুনার পানি হু হু করে বাড়ছে। প্রতিদিনই পানি প্রবেশ করছে নতুন নতুন এলাকায়। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় রোববার নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দুই কূল উপচে ১২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার কোনো কোনো বাড়িতে হাঁটু পানি, আবার কোনো বাড়িতে কোমর পানি। যমুনা তীরের এসব গ্রামের প্রায় তিন হাজার পরিবার বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে।

শেরপুর: টানা বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার সীমান্তবর্তী ৬টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

গত ৩ দিনের ভারী বর্ষণে ও উজানের পাহাড়ি ঢলে রোববার (২৩ আগস্ট) সকাল পর্যন্ত এসব এলাকা প্লাবিত হয়।

উপজেলা প্রশাসন ও এলাকাবাসী সূত্র জানায়, এসব এলাকার অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, মসজিদ, কয়েক হাজার হেক্টর আমন ধানের ক্ষেত, মরিচ, বেগুন, শাক-সবজির ক্ষেত, বীজতলা, শতাধিক মৎস্য খামার ও পুকুর পানিতে ডুবে গেছে। পানিবন্দি হয়ে আছেন কয়েক শতাধিক পরিবার।

সূত্র জানায় উপজেলার সীমান্তবর্তী সিংগাবরুনা, রানীশিমুল, কাকিলাকুড়া, তাতিহাটি, গরজরিপা ও গোসাইহাটি  ইউনিয়নের মাটিমাটা, সিংগাবরুনা, গোবিন্দপুর, বরইকুচি, মাধবপুর, ভায়াডাঙ্গা, টেংগরপাড়া, বিলভরট, চক্রপুর, হালুহাটি, বালিজুরি, খাড়ামোড়া, রাঙ্গাজান, শিমুলকুচি, রানীশিমুল, কন্টিপাড়া, বকচর, গেরামারা, ভুতনিকান্দাসহ ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

এছাড়া পানি বৃদ্ধির কারণে আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দিসহ নানা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

এদিকে, রাস্তঘাট ও বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বন্যাকবলিত এলাকার লোকজন গরু-মহিষসহ উঁচু স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। এরইমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভায়াডাঙ্গা বাজার তলিয়ে যাওয়ায় দোকানিরা মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এফ এম মোবারক আলী বাংলানিউজকে জানান, এবার উপজেলায় ১৭ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হয়েছে। বন্যার পানিতে ৫ হাজার ৩২৬ হেক্টর জমির ধান ডুবে গেছে। বন্যার পানি বাড়লে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে তিনি জানান।

সারিয়াকান্দি (বগুড়া): যমুনা নদীর পানি বেড়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ১০ প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

উপজেলার কামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ মোখলেছার রহমান জানান, উপজেলার কতুবপুর ইউনিয়নের ধলিরকান্দি, বয়রাকান্দি, চন্দনবাইশা ইউনিয়নের শেখপাড়া, নিজ চন্দনবাইশা, ঘুঘুমারী, কামালপুর ইউনিয়নের ইছামারা, দড়িপাড়া, রহদহ, গোদাখালী ও সারিয়াকান্দি পৌর এলাকার কৈয়ের পাড়া প্লাবিত হয়েছে। বাড়িতে পানি ওঠায় এসব এলাকার ছয় শতাধিক পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ আশপাশের উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে।

এদিকে, রোববার (২৩ আগস্ট) পানি উন্নয়ন বোর্ড বগুড়ার সারিয়াকান্দির উপবিভাগীয়  প্রকৌশলী আব্দুল মোত্তালেব জানান, যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে অব্যাহতভাবে পানি বাড়ছে। গেল ২৪ ঘণ্টায় যমুনার পানি ১৫ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

ফেনী: ভারি বর্ষণ ও ত্রিপুরার থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ঠ ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরামের বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে।

রোববার (২৩ আগস্ট) সকাল থেকে ফেনীর মুহুরী নদীর পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (১৩ সেন্টিমিটারের স্থলে ১২ দশমিক ০৭ সেন্টিমিটার)। পানি কমে যাওয়ায় ফুলগাজী-পরশুরাম সড়ক যোগাযোগ অনেকটাই স্বাভাবিক।

সোনাগাজীর মুহুরী প্রজেক্টের রেগুলেটরের ৪০টি গেট দিয়ে নামতে শুরু করেছে বন্যার পানি।

ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রমজান আলী প্রামাণিক এসব তথ্য নিশ্চিত করে বাংলানিউজকে জানান, আর দু’দিন যদি বৃষ্টি না হয় তাহলে বন্যার পানি শিগগিরই কমে যাবে।

তবে ফুলগাজীর মুন্সীর হাট, কামাল্লা, পৈথরা, নোয়াপুর এবং পরশুরামের সলিয়া, বাঁশ পদুয়া, মির্জানগর, অনন্তপুরসহ প্রায় ২০ গ্রামের ৬০ হাজার মানুষ এখনও পানিবন্দি।

বাংলাদেশ সময়: ০১১৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২৩, ২০১৫ 
পিসি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান