গফুর হালীর গানের রূপ সন্ধানে ড. বেন

তপন চক্রবর্তী, ব্যুরো এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৩০, জানুয়ারি ১০, ২০১৫
ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: ‘নিতান্তই সাদামাটা একটা জীবন শিল্পী আবদুল গফুর হালীর, তিনি যেন প্রকৃতিরই সন্তান। তাই গফুর হালীর গানে রয়েছে প্রকৃতির রূপ-রস-গন্ধ। মানুষটির প্রথাগত ও পুঁথিগত শিক্ষা খুবই অল্প, কিন্তু তিনি তার মূল শিক্ষা নিয়েছেন মাটি ও মানুষ থেকে। আবদুল গফুর হালীর সংগীত-সাধনার বিশেষত্ব হলো, তিনি জীবনে কখনো কারও কাছ থেকে গান শেখেননি, সুফী সাধনার পীঠস্থান মাইজভান্ডার দরবার শরীফের মাইজভা-ারী তরিকায় দাখিল হয়ে তিনি আধ্যাত্মিক সংগীতের দীক্ষা নিয়েছেন। স্বশিক্ষিত এই শিল্পী শুধু সংগীত-সাধনার মাধ্যমে অসামান্য জ্ঞানের অধিকারী হয়েছেন। গফুর হালীর গানে সাগর-নদী-পাহাড়ের সুর শোনা যায়, নরনারীর প্রেমবিরহ কিংবা আধ্যাত্ম চেতনা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে তার গানে।’

কথাগুলো বললেন আমেরিকার আটলান্টা ইমোরি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিজিটিং সহকারী অধ্যাপক ড. বেঞ্জামিন ক্রাকাউর (ড. বেন)। তিনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক, মাইজভান্ডারি ও মরমী গানের জীবন্ত কিংবদন্তী শিল্পী আবদুল গফুর হালীর জীবন ও সংগীত নিয়ে গবেষণা করছেন। ড. বেন গত ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামে আসেন, ঢাকায় ফিরে যান ৭ জানুয়ারি।

আবদুল গফুর হালীর সংগীত-সাধনার স্বরূপ সন্ধানে এই তিনদিন তিনি ৮৮ বছর বয়সী গফুর হালীর গ্রামের বাড়ি পটিয়ার রশিদাবাদসহ নানা জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন।

ড. বেঞ্জামিন ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস থেকে বাংলার ভাবসংগীত ও বাউলতত্ত্ব বিষয়ে পিএইচডি করেছেন। তিনি ভালো বাংলা বলেন এবং বাংলা গান গাইতে পারেন। ড. বেন গত ২০ ডিসেম্বর লোকসংগীত বিষয়ে গবেষণার জন্য বাংলাদেশে আসেন। ৯ জানুয়ারি রাতে তার দেশে ফেরার কথা।

ড. বেঞ্জামিন জানান, গবেষণার সূত্রে তিনি চট্টগ্রামের কয়েকজন গবেষক, কবি, সাহিত্যিক ও সাংবাদিকের সাথে ভাব বিনিময় করেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশের উপদেষ্টা সম্পাদক কবি আবুল মোমেন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহবুবুল হক, কবি ও সাংবাদিক স্বপন দত্ত, আবু সুফিয়ান, বিশ্বজিৎ চৌধুরী, এজাজ ইউসুফী, আনোয়ার হোসেন পিন্টু, রিয়াজ হায়দার, হামিদ উল্লাহ, আবসার মাহফুজ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মাসুম আহমেদ প্রমুখ।

এছাড়াও তিনি চট্টগ্রামের বিভিন্ন সুফীসাধকদের আস্তানা ভ্রমণ করেন। ঘুরে দেখেন চট্টগ্রামের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান। তবে অবরোধের কারণে মাইজভান্ডার দরবার শরীফ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারেননি।

সুদূর আমেরিকায় থেকে চট্টগ্রামের সংগীত-সাধক আবদুল গফুর হালীকে নিয়ে গবেষণায় আগ্রহী হলেন কেন এবং তার সন্ধান পেলেন কিভাবে? এমন প্রশ্নের জবাবে ড. বেঞ্জামিন বলেন, ‘আসলে আমার পিএইচডি গবেষণার জন্য আগে পশ্চিমবঙ্গের নানা জায়গায় ঘুরেছি। এবার প্রথম এলাম বাংলাদেশে। এখানে সুফী, ফকিরি গান ও বাউলতত্ত্ব নিয়ে গবেষণার বিষয়ে বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক সাইমন জাকারিয়া আমাকে বেশ সহযোগিতা করেন। সাইমন জাকারিয়া আমাকে চট্টগ্রামের আবদুল গফুর গফুর হালী-গবেষক সাংবাদিক নাসির উদ্দিন হায়দারের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেন। নাসির ভাইয়ের সাথে আমি হালীর গ্রামের বাড়িতে যাই। আবদুল গফুর হালীর সংগীতের স্বরূপ সন্ধানে অমি নাসির হায়দারের কাছ থেকে তার বিভিন্ন গবেষণা ও প্রকাশনা সংগ্রহ করি। আমার গবেষণার জন্য এসব খুব সহায়ক হবে বলে আশা করি।’

আবদুল গফুর হালীর গান নিয়ে ড. বেনের গবেষণা প্রসঙ্গে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ও মাইজভান্ডারি গানের গবেষক নাসির উদ্দিন হায়দার বলেন, স্থানভেদে বাংলা লোকগানের প্রকাশভঙ্গি বৈচিত্র্যময়, তবে গানের তত্ত্ব কথা প্রায় একই। পূণ্যভূমি চট্টগ্রামের মহান সংগীত সাধক আবদুল গফুর হালীর গানে লালনের ভাবের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। ড. বেন বাংলার দুই প্রান্তের দুই সাধক-শিল্পীর সংগীতে এই অলৌকিক সম্পর্ক আবিস্কার করে হতবাক হয়েছেন।
  
বাংলাদেশের কোন কোন এলাকায় গিয়েছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. বেন বলেন ‘আমি উত্তরবঙ্গের নানা জায়গায় ঘুরেছি। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ময়মনসিংহ এলাকার লোকসংগীত নিয়ে কাজ করেছি। লালনের আখড়ায় গিয়েছি, তার গান শিখেছি। ময়মনসিংহ অঞ্চলের একটা গান, ‘চমৎকার গাড়ির মডেল/মানুষ একটা দুই চাকার সাইকেল’ খুব ভালো লেগেছে।’

বাংলা ভাষা ও বাংলা গান শিখলেন কিভাবে?  এই প্রশ্নের জবাবে ড. বেন বলেন, ‘২০১০ সালে ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাসে রুকুন উদ্দিন নামের একজনের কাছে প্রথম বাংলা শিখি। রুকুন উদ্দিন সম্ভবত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ছিলেন। গত চার বছর ধরে আমি বাংলা চর্চা করছি। আর বাংলা গান শিখেছি দুই বাংলার নানা জায়গায়, যেখানে গেছি সেখানেই অন্তত একটি গান শেখার চেষ্টা করেছি।’

প্রসঙ্গত গানের কথা উঠতেই বেহালা বাজিয়ে কয়েকটি বাংলা গান শুনিয়ে দিলেন ড. বেন। একটু ভিন্ন ধাঁচের উচ্চারণে চমৎকারভাবে গাইলেন ‘নবী মোর পরশমণি’, ‘পারে কে যাবি নবীর নৌকার আয়’ গানগুলো।

চট্টগ্রামের গান শিখেননি? এই প্রশ্নের উত্তরে ড. বেন বলেন, ‘আবদুল গফুর হালীর কয়েকটি গান রেকর্ড করে নিয়েছি, দেশে গিয়ে সেসব শিখব। আর নাসির উদ্দিন হায়দারের কাছ থেকে চট্টগ্রামের একটি আঞ্চলিক গান শিখেছি, সেটি হলো শেফালী ঘোষের বিখ্যাত গান-‘ওরে সাম্পানওয়ালা, তুই আমারে করলি দিওয়ানা...।’

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১০, ২০১৫


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান