
ঢাকা: দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বিশ্বাসসহ তার দুই স্ত্রী, দুই ছেলে এবং এক মেয়ের ব্যাংক হিসাব ও আয়কর সংক্রান্ত নথিপত্র তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
একই সঙ্গে গ্রুপটির ৬ বছরের আয়কর নথি, অডিট রিপোর্ট এবং ব্যাংকের হিসাবসহ বিভিন্ন রেকর্ডপত্র জমা দিতে নোটিশ পাঠিয়েছে রাষ্ট্রীয় দুর্নীতি বিরোধী সংস্থাটি।
সম্প্রতি সংশ্লিষ্টদের কাছে এসব রেকর্ডপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠানো হয়েছে বলে বুধবার বিকেলে (১০ ডিসেম্বর) দুদকের দায়িত্বশীল সূত্র বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেন।
নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন বিশ্বাস, তার প্রথম স্ত্রী আনোয়ারা বিশ্বাস, দ্বিতীয় স্ত্রী তাসলিমা আক্তার, ছেলে মামুন বিশ্বাস, নাসিম বিশ্বাস এবং মেয়ে নাসিমা বিশ্বাসের কাছে যেসব তথ্য চেয়ে নোটিশ দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, ২০০৮-০৯ হতে ২০১২-১৩ কর বর্ষের আয়কর বিবরণীর সার্টিফাইড কপি, তাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকের হিসাব নম্বরের তালিকা, পাসপোর্টে উল্লিখিত নাম ঠিকানা এবং ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি।
১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সব তথ্য জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে দুদক। এছাড়া দুদক নাসির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে যেসব রেকর্ডপত্র চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছে তার মধ্যে রয়েছে, নাসির লিফ টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ২০০৮-২০০৯ সাল থেকে ২০১২-২০১৩ কর বর্ষের আয়কর বিবরণীর সার্টিফাইড কপি, ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্য্যন্ত বার্ষিক অডিট রিপোর্ট, একই সময়ের ভ্যাট প্রদানের প্রমাণ পত্র এবং আমদানি ও রপ্তানির তালিকা।
নাসির গ্রুপের আরেকটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাসির প্রিন্টি এন্ড প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কাছেও একই রেকর্ডপত্র চেয়েছে দুদক। এসব তথ্যও ১৪ ডিসেম্বরের মধ্যে দুদকে জমা দিতে বলা হয়েছে।
এর আগে গ্রুপটির কাছে গত মাসে কয়েকটি চেকের তথ্য চায় দুদক। এর মধ্যে গত বছরের ২৬ জুন নাসির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নাসির লিফ টোব্যাকো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকে তাদের একাউন্ট থেকে (একাউন্ট নং ০০৭২ ৭১০০০০০০৪৭) দু‘টি চেক দেয় (চেক নং- ৩২৬৮৫০৮ ও ৩২৬৮৫০৯)। সন্দেহজনক এমন প্রায় দুই ডজন চেক কাকে কেন দেওয়া হয়েছে তার তথ্যও চেয়েছে দুদক।
দুদকের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে বলেন, নাসির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোর একাউন্ট থেকে বিভিন্ন চেকে অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগ রয়েছে। এগুলো এখন খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
দুদকের অনুসন্ধান সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গ্রুপটির কাছে এখনও পর্য্যন্ত যেসব চেকের তথ্য চাওয়া হয়েছে তার সবগুলোর তথ্য এখনও দুদককে দেওয়া হয়নি।
প্রায় শত কোটি টাকা বিদেশে পাচার এবং কর ফাঁকির অভিযোগে নাসির গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাসির উদ্দিন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গত বছর অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক।
অনুসন্ধান শুরুর পর দুদকের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম গত অক্টোবরে অগ্রগতিমূলক একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। ওই প্রতিবেদনে নাসির উদ্দিন বিশ্বাস ছাড়াও নাসির গ্রুপের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো. আলফাজ, আমদানি বিভাগের মতিয়ার রহমান, রফতানি শাখার প্রবীর কুমারের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ আনা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হযেছে, এজে মানি এক্সচেঞ্জ (গুলশান ২) এবং ডিএনকে মানি এক্সচেঞ্জের (গুলশান-১) মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সময়ে অর্থপাচার করেছে। যার পরিমাণ প্রায় শত কোটি টাকা। আমদানি করা পণ্যের প্রতিটি এলসির বিপরীতে বিভিন্ন কায়দায় প্রতিষ্ঠানটি টাকা পাচার করেছে। এতে সরকার রাজস্ব বঞ্চিত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দুদকের অভিযোগ হলো, নাসির গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে তাদের প্রতিটি কোম্পানির নামে এলসির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ অর্থপাচার করে আসছে। আমদানি পণ্যের প্রকৃত মূল্যের ৪০-৫০ শতাংশ অর্থের এলসি খোলা হয়। পণ্যমূল্যের বাকি ৫০-৬০ শতাংশ তারা হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাঠাতো। এক্ষেত্রে চারটি হুন্ডি প্রতিষ্ঠান তাদের সাহায্য করতো।
অভিযোগে আরও উল্লেখ রয়েছে, ৭ থেকে ৮টি বিশ্বস্ত হুন্ডি প্রতিষ্ঠান আছে যারা বিদেশে অর্থ পাঠিয়ে টাকা আদায়ের রশিদ (মানি রিসিট) ই-মেইলে পাঠিয়ে দেয়। ই-মেইলে মানি রিসিট পাওয়ার পর নাসির গ্রুপ চেকের মাধ্যমে ওই টাকা পরিশোধ করে থাকে। প্রতি মাসে কয়েক লাখ টাকা এভাবে হুণ্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে। এ কাজে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
এসব অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক নাসির গ্রুপ এবং প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৮০২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১০, ২০১৪
** নাসির গ্রুপের অর্থপাচারের ‘তথ্য-প্রমাণ’ দুদকে