
গোপালগঞ্জ : আগামী শুক্রবার থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শ্রীধাম ওড়াকান্দি‘র ২শ’ বছরের স্নানোৎসব ও ৫ দিনব্যাপী মহা বারুনীর মেলা শুরু হচ্ছে।
শ্রীশ্রী হরিচাঁদ ঠাকুরের ২শ’তম জন্মতিথি উপলক্ষ্যে স্নানোৎসব ও বারুণী মেলা অনুষ্ঠিত হবে।
প্রতি বছরের মতো এ বছর’ও এ অনুষ্ঠানে লাখ লাখ ভক্তের সমাগম ঘটবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
স্নানোৎসবের দিনে র্যাবের একটি টীম, ১৭০ পুলিশ সদস্যসহ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন বলে গোপালগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সরদার রোকনুজ্জামান জানিয়েছেন।
শুক্রবার উৎসবের প্রথম প্রহরে ( রাত ১২ টা ১ মিনিটে) শ্রীধাম ওরাকান্দির প্রধান ঠাকুর ও মেলা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শচিপতি ঠাকুরের নেতৃত্বে ঠাকুর পরিবারের সদস্যরা প্রথমে বারুণী সাগরে ও পরে কামনা সাগর সরোবরে স্নান করে এ স্নানোৎসবের শুভ সূচনা করবেন।
ধর্মীয় প্রথায় ওড়াকান্দির হরি মন্দির ও গুরুচাঁদ মন্দিরে পুরোহিতরা পুজো-অর্চনা করবেন।
তারপর বিরামহীনভাবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলতে থাকবে পুণ্যার্থীদের স্নানের পালা।
হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মতিথির শুভ মুহুর্তে এ স্নান শুরু হয় আর চলে তিথি শেষ না হওয়া পর্যন্ত।
ওড়াকান্দির এ মিলন মেলা লাখ লাখ মতুয়া ভক্তের আগমনে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে।
কাশিয়ানী উপজেলার পুণ্যভূমি শ্রীধাম ওড়াকান্দি পূর্ণব্রক্ষ্ম হরিচাঁদ ঠাকুরের লীলাক্ষেত্র ও মতুয়া সম্প্রদায়ের মহাতীর্থস্থান হিসেবে সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র স্থান হিসেবে পরিচিত।
দু’শ বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে শ্রীধাম ওড়াকান্দি এখন মতুয়া সম্প্রদায়ের কাছে প্রাণাধিক। পুণ্যার্থীদের পদচারণায় পরিণত হয় মহামিলন মেলায়।
অবহেলিত মানুষের মুক্তির দূত হিসেবে আধ্যাত্মিক পুরুষ পূর্ণব্্রক্ষ্ম হরিচাঁদ ঠাকুর বাংলা ১২১৮ সালের ফাল্গুন মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথির ব্রাক্ষ্ম মুহুর্তে মহা বারুণীর দিনে কাশিয়ানী উপজেলার সাফলীডাঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৬৬ বছর বয়সেই ১২৮৪ সালে জন্মের একই দিনে পরলোক গমন করেন।
এই পরম পুরুষ হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্মের জন্য সাফলীডাঙ্গা গ্রাম হয়ে ওঠে ধন্য।
এর পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী গ্রাম ওড়াকান্দিও হরিচাঁদ ঠাকুরের জন্য বিখ্যাত।
এ স্থানটি গোপালগঞ্জ জেলা সদর থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
হরিচাঁদ ঠাকুরের বাল্য নাম হরি হলেও তাঁর ভক্তরা হরিচাঁদ নামে ডাকতেন।
পিতা যশোবন্ত ঠাকুরের পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয় ।
লাখ লাখ মতুয়া ভক্ত স্নান করে তাদের মানত সামগ্রী, ধানের ছড়া, কিংবা টাকা-পয়সা মন্দিরে দক্ষিণা দিয়ে প্রণাম করেন।
অনেকে আবার এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত ৫ দিনের মেলায় অংশ গ্রহণ করার জন্য সেখানে থেকে যান।
এ অনুষ্ঠানে দেশ ছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসামসহ নানাস্থান থেকে ভক্তরা ঢাক-ঢোল বাজিয়ে ও লাল নিশান উড়িয়ে হরিবোল ধ্বনি দিতে দিতে ওড়াকান্দির হরি মন্দিরে হাজির হন।
ওড়াকান্দির স্নানোৎসবকে ঘিরে ৫ দিনের এ মেলা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।
ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সর্বশ্রেণীর মানুষের সার্বজনীন এ মেলা।
মেলায় লোকজ ঐতিহ্য বেত, বাঁশ, ব্রোঞ্জ, কুটির শিল্পজাত সহ নানা দ্রব্য সামগ্রীর সমাবেশ ঘটে।
তবে ভক্তদের স্নানের জন্য কামনা সাগর ও শান্তি সাগর নামে দুটি পুকুর রয়েছে। জলের পরিমাণ ও গভীরতা কমে গিয়ে পুণ্যার্থীদের স্নানে দারুন সমস্যা হয়।
লাখ লাখ ভক্তের স্নানে পুকুরের জল হয়ে ওঠে কাদাযুক্ত। প্রয়োজনীয় ছাউনী না থাকায় এত বড় সমাবেশে ভক্তদের থাকার জন্য দারুন দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে ছোটবড় ৫টি মন্দির রয়েছে।
এর মধ্যে হরিচাঁদ মন্দির ও গুরুচাঁদ মন্দির প্রধান ।
অপর ৩টি হচ্ছে চন্ডি মন্দির।
বাংলাদেশ সময় : ১৩৪০ ঘন্টা, মার্চ ৩১, ২০১১