চলছে অজ্ঞানের ওষুধে মানুষ ‘হত্যা’!

আদনান রহমান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:২৭, নভেম্বর ৩০, ২০১৪
ছবি: প্রতীকী

ছবি: প্রতীকী

ঢাকাঃ এবছর রাজধানীতে অজ্ঞান পার্টির কবলে পরে মারা গিয়েছেন দুজন। তবে প্রায় সাড়ে ৪শ জনকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে মৃত্যুর কাছাকাছি ঠেলে দেয় অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।
 
সাধারণ মানুষের দুর্বলতা আর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ‘হত্যা’ পর্যন্ত করতে পারে রাজধানী জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ‍থাকা এই সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্যরা। আর তাদের এই অভিযানে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়, কয়েকটি ভয়াবহ ঘুমের ওষুধ। চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া এসব ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় সম্পূর্ণ অবৈধ।

অপারেশনের টেবিলে কিংবা গুরুতর অসুস্থ রোগীর জন্য সুনির্দিষ্ট মাত্রায় চিকিৎসকরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করেন ঠিক সেগুলোই ইচ্ছামাফিক মাত্রায় এরা মানুষকে খাইয়ে দেয় অবলীলায়। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের মাত্রাতিরিক্ত ওষুধে রোগী মারা যেতে পারে, কিংবা সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলতে পারে শারিরিক সক্ষমতা। 
 
অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের হাতে সবচেয়ে বেশী ব্যবহার হয় এপিট্রা। এটি এক ধরনের তরল ওষুধ। অন্যটি ট্যাবলেট। নাম নক্টিন। এছাড়াও এটিভেন, মাইলাম ও ডর্মকাম ট্যাবলেটও ব্যাপক ব্যবহার চলে।
 
যে কোনও খাবারের সঙ্গে এক ফোঁটা এপিট্রা ৫ মিনিটের মধ্যে ১২ ঘণ্টার জন্য ঘুম পাড়িয়ে দেবে। অতিরিক্ত সেবনে এই ঘুম তিন-চার দিন পর্যন্ত ভাঙবে না। আর শারীরিকভাবে দুর্বল ব্যক্তি অতিরিক্ত ডোজে মারাও যেতে পারে বলে জানান চিকিৎসকেরা।
 
ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সুদীপ রঞ্জন দেব বাংলানিউজকে বলেন, ওষুধটি দুশ্চিন্তাগ্রস্ততার বিপরীতে কাজ করে। নিশ্চিন্তে ঘুমাতে স্বল্প ডোজে এই ওষুধ সেবনের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অজ্ঞান পার্টির এক সদস্য বাংলানিউজকে জানান তাদের কাছে নক্টিন ট্যাবলেট  ‘জনপ্রিয়’। কারণ খাবারে এই ট্যাবলেট মেশালে খাবার তেতো হয় না। একাধিক ট্যাবলেটেও স্বাদ থাকে অপরিবর্তিত।
 
শুধু তাই নয়, কলা কিংবা অন্যান্য নরম ফল সামান্য ছিদ্র করে এই ট্যাবলেট ঢুকালে সহজেই ফলের সঙ্গে মিশে যায়।
 
ডা. সুদীপ রঞ্জন বলেন, ট্যাবলেটটি রক্তচাপের (প্রেশারের)রোগীরা ঘুমানোর জন্য সেবন করেন। এই ট্যাবলেট খেলে ১০ মিনিটের মধ্যে ১০-১২ ঘণ্টার জন্য ঘুম হয়।
 
গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর মিটফোর্ড এবং ফকিরাপুল এলাকার প্রায় প্রতিটি দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের। ডাক্তারের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই ভয়াবহ সব ঘুমের ঔষধ উচ্চমূল্যে বিক্রি করা হয় তাদের কাছে। তবে সরবরাহকারীদের প্রতি অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা ‘অতি অনুগত’।
 
সম্প্রতি অজ্ঞান পার্টির বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের নেতৃত্ব দেয়া এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক রক্ষায় আটককৃতরা কখনো দোকানিদের সম্পর্কে কোন তথ্য দেয় না। জিজ্ঞাসাবাদে সর্বোচ্চ মিটফোর্ডের কথা বললেও ‘দোকানের নাম জানি না’ বলে এড়িয়ে যায় তারা।
 
সম্প্রতি একটি গোয়েন্দা সংস্থা মিটফোর্ডের কয়েকটি দোকান চিহ্নিত করে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নিয়ে অভিযান চালায়। তব এ ধরনের  কোন ঔষধ বিক্রির প্রমাণ ছাড়াই ফিরতে হয় তাদের।

কৌশল নিয়ে  চক্রের এক সদস্যকে পাঠালেও দোকানিরা টের পেয়ে যায় আর ঔষধ বিক্রি থেকে বিরত থাকে, জানান ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
 
উপরন্তু গোয়েন্দা তৎপরতায় দোকান বন্ধ করে আন্দোলনদের হুমকি দেয় দোকানিরা।
 
দোকানীদের এমন আন্দোলনে মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীরা ভোগান্তিতে পড়বে বলে নির্দিষ্ট তথ্য ছাড়া অভিযানে যাচ্ছে না কোনও সংস্থা।
 
তবে অপর এক কর্মকর্তা বলেন, মিটফোর্ডে মার্কেট সমিতির সভাপতিদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করে শিগগিরই অভিযান পরিচালিত হবে।
 
বাংলাদেশ সময়ঃ ১৪২৫ ঘণ্ট‍া, নভেম্বর ৩০, ২০১৪


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান