বীরাঙ্গনা ।। রাশিদা সুলতানা

স্বাধীনতা দিবস বিশেষ আয়োজন / গল্প | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ২০:২৮, মার্চ ২৫, ২০১৪

চট্টগ্রামের রাজনীতিতে শাহানা শাহীন এক সুপরিচিত, সুপ্রতিষ্ঠিত নাম। প্রাক্তন ছাত্রনেত্রী। ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের পুত্রবধূ। স্থানীয় সাংসদের স্ত্রী। তার বাগ্মিতা ও আন্তরিকতায় মুগ্ধ ভক্তকুল চট্টগ্রামে স্বামীর সংসদীয় এলাকার আনাচেকানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের বীরাঙ্গনাও। দু-চারজন শত্রু অথবা রাজনৈতিকভাবে বিপক্ষীয় দলের লোকজন যে তার বীরাঙ্গনা পরিচয় চটকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করে নাই, তা নয়। কোনো অসূয়াই তার ভক্তকুলকে নিরস্ত করতে পারে নাই। শাহানা শাহীনের ছাত্রজীবনও এমনই বর্ণাঢ্য। ভক্তপরিবেষ্টিত।

ষাটের দশকের শেষদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষেই ছাত্র আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। অগ্নিকন্যা মতিয়া চৌধুরীর ভাষণে তার মধ্যে যে উত্তাল উন্মাদনা তৈরি হতো দু-তিনদিন তিনি তাতে আচ্ছন্ন থাকতেন। বিপ্লব, স্বাধিকার, শোষণমুক্ত পূর্ব পাকিস্তান, তুখোড় ছাত্রনেতাদের বাগ্মিতা, তাদের প্রতি সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভক্তি-ভালোবাসাউদ্ভূত ঘূর্ণন, এ সবই দিনরাত তাকে ঘোরের মধ্যে রাখতো। হলে ফিরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একই ভঙ্গিতে উচ্চারণ করতেন সেইসব অগ্নিগর্ভ ভাষণ, প্রিয় নেতাদের বক্তৃতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয় বর্ষে পুরোদস্তুর ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। তার কথা শুনতে ভিড় লেগে যেত চারপাশে। ভালো বক্তৃতা দেওয়ার জন্য স্কুলজীবন থেকেই বহুবার পুরস্কৃত হয়েছেন। সুসংগঠক-পরিচিতি, সুখ্যাতি, জ্যোতির্ময় সৌন্দর্য, সবকিছু মিলিয়ে পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধিকার আন্দোলনের উন্মাদনা, উত্তেজনার সাথে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নানা আলোচনায় শাহানা শাহীনের উপস্থিতি, তাকে নিয়ে উচ্ছ্বাস, নিয়মিত ঘটনা ছিল। একাত্তরে গণহত্যা শুরু হবার পর এক ফুপাতো খালার পরিবারের সাথে পায়ে হেঁটে, নৌকায়, তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজীপাড়ায় তার পৈতৃক বাড়িতে চলে যান। পিতৃহীন মায়ের একমাত্র সন্তান দু-চারদিন হাঁপানি-রোগী মায়ের সান্নিধ্যে আনন্দমুখর সময় কাটান। নিয়ম করে বিবিসি শোনা, মায়ের সাথে বুয়ার অবিরাম কলহ দেখা, দু-চার পদ নতুন কোনো আইটেম রান্না করা, এ-ই তার রুটিন। যুদ্ধের উৎকণ্ঠার মাঝেও দিনের বেশিরভাগ সময় চুপচাপ শুয়ে ঘরের ছাদ দেখা ভিন্ন কিছু করার থাকে না। ছাত্ররাজনীতিতে তার সুখ্যাতির সংবাদ এতদূর মফঃস্বলেও ততদিনে পৌঁছে গেছে। পড়শি এবং আত্মীয়দের মাঝে তার খ্যাতি নিয়ে মুগ্ধতা তিনি উপভোগ করেন। যুদ্ধের গতিপ্রকৃতির সন্ধান করেন পাড়ার দু’-চারজন রাজনীতিসচেতন যুবক বা মুরুব্বিদের কাছ থেকে। এসবের মাঝে দীর্ঘ অবসর ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে। মাকে কাঁদিয়ে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করে এক ভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী এলাকায়, মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে কাজ করবেন বলে।

শরণার্থী ক্যাম্পে এবং মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং সেন্টারে কিছুদিন কাজ করে অবশেষে থিতু হন হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের সেবায়। হাসপাতালে প্রায় নির্বাক হয়ে যাওয়া, আহত, পঙ্গু মানুষগুলোর মাঝে যেন তার পুনর্জন্ম ঘটে।

জ্যৈষ্ঠ মাসের এক দুপুরে সারা আকাশ কালো করে ঝড়-বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলে রোগীদের আর্তনাদ, গোঙানি, বৃষ্টির শব্দে হারিয়ে যায়। উনিশ বছর বয়সী মাহবুবের গগণবিদারী আহাজারি বৃষ্টির শব্দের মাঝেও বিস্ফোরণের মতো বাজে। তিনদিন আগে জ্ঞান ফিরে পেয়ে সে আবিষ্কার করেছে তার দু’টো পা-ই কাটা গেছে। দু’দিন মূর্তি হয়ে ছিল সে। নিরেট অন্ধকার লেপ্টে থাকে তার চেহারায়। দু’দিন পর পুরো হাসপাতাল কাঁপিয়ে নির্বাক তরুণটি সবাক হয়। ‘আম্মা গো, আম্মা গো!’ শাহানা কাছে গিয়ে তার মাথাটা বুকে চেপে ধরেন।

একসময় কান্নার তোড় স্তিমিত হয়ে এলে শিশুর মতো ঠোঁট বেঁকিয়ে শাহানাকে বলে, ‘আমার আম্মা তো মইরা যাবে, আমারে এমন পঙ্গু দেইখা আম্মা তো সাথে সাথে মইরা যাবে।’ ঘুমের ওষুধে বিলাপ একসময় গোঙানি হয়ে যায়। জানালার বাইরে আকাশ তখনো কালো। বজ্রপাত আর বৃষ্টির শব্দ। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে, এবং জীবনের চরম বিপর্যয়ে, কিভাবে প্রতিটা মানুষ মাতৃক্রোড়ে আশ্রয় প্রার্থনা করে! শাহানা নিজেও তাদের সাথে কেঁদে ওঠেন কখনো। ডাক্তার নরেন্দ্রবাবু বলতেন, ‘এমন কোমল হলে কিভাবে হাসপাতালে চাকরি করবে?’

মুক্তিযোদ্ধা প্রদীপের পেটে আটটি গুলি লাগে। অপারেশন শুরু করার আগেও শাহানার হাত শক্ত করে ধরে বলে, ‘দিদি, তুমি আমার মা। মা গো, আমাকে বাঁচিয়ে তোলো কোনোভাবে।’ অপারেশন চলার সময়ে মারা যায়। হাত দুটি নিথর এবং অবশ হয়ে যাওয়ার আগপর্যন্ত শাহানার হাতের মুঠিতেই ছিল। ট্রেনিং নিতে থাকা মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যে দেশপ্রেমের উন্মাদনায় মত্ত, সাহসী, অকুতোভয় বীরদের দেখেছে, এই বীরেরা হাসপাতালে যখন পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, তখন তাদের স্বপ্ন, আশা, ভবিষ্যৎ, প্রেম, বাবা-মা-ভাইবোন, আর্তনাদ, হাহাকার সবকিছু জমাট অন্ধকার হয়ে লেপ্টে থাকে তাদের অভিব্যক্তিতে। মাঝেমধ্যে কান্না, আহাজারি, আর্তনাদ। তারপর আবারও তারা পাথরের মূর্তি। নিরেট অন্ধকার, অনভ্যস্ত ক্রোধের মতো বাকি জীবন তাদের ঘিরে রাখে। দিনে দিনে পঙ্গুত্বের চাপ তাদের স্বভাবের মধ্যে বসে যেতে থাকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অচল বসে থাকবার কায়দা তারা রপ্ত করে।

অক্টোবর মাসের শেষদিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে আগত কোনো এক মুক্তিযোদ্ধার কাছে শাহানা জানতে পারেন, তার মায়ের শরীর ভেঙে পড়েছে। একজন মুক্তিযোদ্ধার সহগামী হয়ে কসবা, তিনলাখপুর, ভাদুগড় পায়ে হেঁটে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কাজীপাড়ায় নিজ বাড়িতে পৌঁছেন তিনি। সন্তানের চেয়ে বেশি উদ্ভাস তো সূর্যেও নাই। হাঁপানি রোগী মা সুস্থ হয়ে ওঠেন মেয়েকে পেয়ে। বাড়ি পৌঁছার এক সপ্তাহের মধ্যে রাজাকাররা তাকে তুলে নিয়ে যায়।

যুদ্ধ-শেষে, হাসপাতাল আর পুনর্বাসন-কেন্দ্রে কিছুদিন করে থেকে, শাহানা বাড়ি ফিরে দেখেন বাড়িটা ঢেকে ফেলেছে ধুলোময়লা। মা পুরোপুরি শয্যাশায়ী। সবগুলো জানালার চৌকাঠে পুরু ধুলার আস্তরণ জমেছে। সাদা দেয়ালগুলো ধূসর, স্যাঁতসেঁতে।

বাড়ি ফিরে শাহানা পুরোদস্তুর ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। মাকে ডাক্তার দেখান। কাজের মেয়েকে নিয়ে ঘরদোর পরিষ্কার করেন। রঙমিস্ত্রি এনে বাড়ি রঙ করান। নিজে দাঁড়িয়ে সব কাজ তদারকি করেন।

দেশ স্বাধীন হবার আগ পর্যন্ত দু’মাস তাঁকে কোথায় রাখা হয়েছিল, তার জীবনে কী ঘটেছিল, এ নিয়ে শাহানা কোনোদিন মুখ খোলেন নাই। চারপাশের মানুষের বক্রচোখ, কটূক্তি, নানা প্রশ্ন, কোনোকিছুতেই তার আচরণের স্বাভাবিকতায় কোনো পরিবর্তন আসে নাই। বরং এসব প্রশ্ন নিয়ে তার ব্যক্তিত্বের মুখোমুখি হবার মতো সাহস আত্মীয়স্বজন ও পাড়াপড়শিদের প্রায় কারোই ছিল না।

যুদ্ধ-শেষে নিজেই প্রাক্তন সহকর্মী রাজনীতিবিদদের সাথে যোগাযোগ পুনঃস্থাপন করেন। ঢাকায় ফিরে গিয়ে যুদ্ধশিশু এবং বীরাঙ্গনাদের পুনর্বাসনে কাজ করেন। সে সময়ই পরিচয় চট্টগ্রামের রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে শরীফ নিজামের সাথে। শরীফ নিজেও রাজনীতিবিদ, জনপ্রিয় তরুণ নেতা এবং সফল সংগঠক। শাহানার সাথে পরিচয়ের অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তিনি তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। শরীফ নিজামের পরিবারে একজন বীরাঙ্গনাকে বাড়ির বউ করে আনার ব্যাপারে আপত্তি থাকলেও, শাহানা শাহীনের মুখোমুখি হবার পর তার শ্বশুরবাড়ি অথবা রাজনৈতিক দুনিয়ার কেউ কোনো বক্রোক্তি বা পাকিস্তানি ক্যাম্পে থাকা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করে নাই। মানুষের সমীহ আদায় করে নেয়ার ক্ষমতা তার মুঠোবন্দি। বরং বিয়ের তিন বছরের মধ্যে স্বামীর সহকর্মীদের মাঝে, চট্টগ্রামের রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। তবে এক্ষেত্রে তার স্বামীর অবদানও যথেষ্ট। স্ত্রী ছাড়া তিনি গ্রামে, রাজনৈতিক এলাকায় কখনো যান না, মঞ্চে স্বামীর সাথে স্ত্রীও বক্তৃতা দেন। তুখোড় বাগ্মিতার জন্য ভক্ত নেতাকর্মী, গুণগ্রাহী, আমজনতা সকলেই তাকে ভালোবাসায় অভিষিক্ত করে। তুমুল করতালিতে মঞ্চ থেকে অবরোহণ করেন তিনি। যতবার বক্তৃতা দেন ততবারই এরকম। তবে অন্য রাজনীতিবিদেরা যেমন সস্ত্রীক ঈদে, মাহফিলে, বড় নেতা, মন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা বিনিময়ে যান, শাহানা শাহীন সে সবে যেতেন না। স্বামীর শত অনুরোধেও না। সে সময়টা হয়তো কাটিয়ে দিতেন গাছের পরিচর্যায়, ঘর গোছানোয়।

বিয়ের বহুকাল পরও সন্তান না হওয়ায় এ দম্পতির মাঝে তেমন হাহাকার দেখা যায় নাই। বরং নিজেরাই যেন তারা একে-অপরের সন্তান হয়ে ওঠেন। স্ত্রীকে বাড়িতে রেখে তার স্বামী কখনোই চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে থাকেন নাই। ঢাকায় অথবা দেশের বাইরে যেখানেই গেছেন, শাহানাকে নিয়ে গেছেন সাথে করে।

চট্টগ্রাম শহরের টিলা, পাহাড়, পতেঙ্গা সমুদ্রবন্দর এলাকা, শহরের ভিড়ভাট্টা, দুর্গন্ধ, ভাটিয়ারি যাবার পথে জাহাজ-ভাঙা, দোকানপাট, সবই প্রিয় ছিল তার। মাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে নিজের কাছে চট্টগ্রামে আনিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। আমৃত্যু মা চট্টগ্রামে মেয়ের কাছেই ছিলেন। স্বামীর অভিজাত আত্মীয়স্বজনের সান্নিধ্য ও সামাজিকতার চেয়ে, স্বামীসমভিব্যাহারে গ্রামে, বান্দরবান অথবা রাঙামাটিতে যাওয়া অধিকতর আকর্ষণীয় ছিল তার কাছে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাহ্যত শাহানার কোনো ক্ষতি প্রকাশিত না হলেও, তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে কিছু গোলযোগ ঘটে যায়। বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী তার খুব কাছে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেন, ‘তোমার গায়ে পাকিস্তানিদের মতো দুর্গন্ধ।’ হতচকিত স্বামী দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে যান। নিজেকে পরে সামলে নেন।

শাহানা স্বামীকে বারবার জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার গা থিকা দুর্গন্ধ বাইর হইতেছে, তাই না? পাকিস্তানিদের গায়ে এমন গন্ধ ছিল।’ সংবেদনশীল স্বামী এ নিয়ে বাড়তি প্রশ্ন তুলতেন না। তার শরীরে কোনোপ্রকার বাজে গন্ধ নাই তার স্বামী বহুবার আশ্বস্ত করার পরও শাহানা ঘন ঘন বাথরুমে ঢুকে যেতেন কাপড়চোপড় নিয়ে। যুদ্ধপরবর্তী বাকি জীবন প্রতিদিনই দিনে দুই-তিনবার গোসল করতেন যুদ্ধের স্মৃতি এবং দুর্গন্ধ মুছে ফেলার জন্য।
জনপ্রিয় হওয়া সত্ত্বেও শাহানা সচেতনভাবে স্থানীয় রাজনীতি থেকে দূরে থেকেছেন। তিনি জানেন, তার বীরাঙ্গনা পরিচয় চটকে রাজনৈতিক ফায়দা নেবে স্বামীর ভক্ত অথবা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের কেউ। সংবাদপত্রে, ইলেকট্রিক মিডিয়ায়ও কোনোদিন সাক্ষাৎকার দিতে রাজি হন নাই। মাতৃভূমির অহংকার, কিংবদন্তী, ইত্যাদি হাজার বিশেষণে ভূষিত করেও পারে নাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কেউ তার মুখ খোলাতে।

রাজনীতিতে সক্রিয় অংশ না নিলেও, যখনই বন্যা, পাহাড়ধ্বস, বা আর যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটেছে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়, সব হায়ারার্কি ভেঙে সাধারণ কর্মীদের সাথে ক্লান্তিহীন কাজ করেছেন তিনি।

সত্তর এবং আশির দশকের পুরোটা সময় চট্টগ্রামের রাজনীতিতে তার স্বামী শরীফ নিজামের প্রভাব প্রতিপত্তি কখনোই কমে নাই। এলাকায় উপর্যুপরি সাংসদ নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। কোনো কোনো দৈনিকের গবেষণায় প্রকাশিত হয় সত্তরের দশকের শেষভাগে তার বিরোধিতাকারী কয়েকজন নেতাকে তিনি হত্যা করিয়েছিলেন। টকটকে লাল চেহারায় পত্রিকার কাটিংসহ শাহানা স্বামীর মুখোমুখি হন। সাপের মতো ফোঁসফোঁস করতে করতে তিনি বলেন, ‘এইগুলা পত্রিকা কেন লিখতেছে? এদের কে মারছে, কারা মারছে তুমি কিছু জানো না?’

শরীফ নিজাম সহজ ভঙ্গিতে হাসতে থাকেন, ‘আমি ভয় পাইছি, ম্যাডাম। আমার প্রত্যেকটা নেতাকর্মীকে তুমি খুব ভালো কইরা চিনো। তাদের কারো কারো সাথে আমার চেয়ে বেশি সুসম্পর্ক তোমার। পেপার কাটিং নিয়া আমাকে কাঠগড়ায় ওঠায়া দিলা? এত বছর সংসার কইরা স্বামীকে যদি না চিনো!’ শাহানার রক্তমুখ দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। 

বছরতিনেক পর সালাম আহমেদ নামের বিরোধী দলের থানা সভাপতির মৃত্যুতেও দুয়েকটা দৈনিকে তার স্বামীর নাম উঠে আসে। শাহানা স্মরণ করে পাঁচদিন আগে সালাম আহমেদকে রাত ন’টায় যখন হত্যা করা হয়েছে, সে সময় তার স্বামী তার বেডরুমে শায়িত ছিলেন। শাহানার মনে পড়ে, সে রাতে তার স্বামী বেশ প্রগলভ এবং স্বাভাবিক ছিলেন। টেলিভিশনে দেখা নিহতের স্ত্রী-সন্তানের কান্নাভেজা মুখ শাহানার দৃষ্টিপথে বারবার চলে আসে।

আরিফ আহমেদ নামে শাহানার স্বামীর ব্যক্তিগত সচিব কখনো শাহানার চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলে না। এর আগেও নানা উপলক্ষে দেখা হয়েছে তার সাথে। রাজনীতি করতে আসা সাহসী, আত্মবিশ্বাসী নানা তরুণের মাঝে সুদর্শন এই যুবকের এই লাজুক আচরণ এই পরিবেশে বেমানান মনে হতো। স্বল্পবাক এই যুবককে কেনই বা তার স্বামী ব্যক্তিগত সহকারী করে নিয়েছেন তা-ও শাহানার বোধগম্য না। স্বামীকে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর পেয়েছেন, ‘সে খুবই বুদ্ধিমান ছেলে।’

শাহানার সামনে এলেই আরিফ স্কুলের বালকের মতো নার্ভাস, অপ্রস্তুত ভাবটি গোপন করতে ব্যর্থ হয়। শাহানা হাসিমুখে গল্প করতে চাইলে মাথা নুয়ে থাকে। কথা সমাপনান্তে লাজুক হেসে দ্রুত পদবিক্ষেপে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। অথচ শরীফ নিজামের সাথে সে কত না সহজ সাবলীল। শাহানা আরিফের দিকে মাঝে মাঝে অপলক তাকিয়ে থাকেন। আরিফের নজরে এলে সে তার মাথা নিচু করে প্রায় বুকের কাছে নিয়ে আসে। বাড়িতে, অফিসে যখনই দেখা হয় শাহানা অপলক তাকিয়ে আরিফকে দ্যাখেন, হয়ত কোনোকিছু খোঁজেন। বিষয়টি আরিফের নজরে এলে কখনো সে স্বাভাবিক সৌজন্যমূলক হাসি দিতেও ভুলে যায়। শরীফ নিজামের সাথে কাজ শেষে ত্রস্ত পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।

চট্টগ্রামে নিজ দলের আরেক নেতার মৃত্যুতে দৈনিকে এবং টেলিভিশন সংবাদে তোলপাড় হয়। কান্নাভেজা মুখে নিহতের স্ত্রী-সন্তানেরা সুবিচার প্রার্থনা করে। রাত দশটায় কাজ আছে বলে লোকটা বাসা থেকে বেরিয়ে যায়, নাসিরাবাদ এলাকায় গুলিতে লোকটাকে হত্যা করা হয়। নিজ দলের নেতা হওয়া সত্ত্বেও তার মৃত্যুতে দুয়েকটি দৈনিক শরীফ নিজামের দিকে ইঙ্গিত করে। নিহত আসিফ উদ্দিন তার স্বামী শরীফের ভক্ত ছিল, শাহানাকেও শ্রদ্ধা করতো। শরীফের সাথে লোকটার সম্পর্ক খারাপ হয়েছে এ কথাও তো তিনি জানেন না। শরীফ তার জানাজায়ও শরিক হয়েছিলেন।

তিনদিন আগে আসিফ নিহত হওয়ার সময় রাত বারোটায় তার পাশে শুয়ে তার মায়ের গল্প, শৈশবের গল্প করছিলেন। শাহানার বিয়ের দুই বছর আগে শরীফের মা মারা যান। শরীফ মায়ের প্রসঙ্গে তাকে বহুবার বলেছেন, ‘একাত্তরে তোমার দুর্ঘটনা জানার পরও তোমাকে বিয়ে করার জন্য পাগল হয়ে গেছি আম্মার চেহারার সাথে তোমার মিল দেখে। আম্মার মতো সুন্দরী তুমি না। কিন্তু কোথায় যেন সাদৃশ্য আছে আম্মার মুখের সাথে।’ শরীফ নিজামের মায়ের রূপের বর্ণনা অন্যদের মুখে শুনলেও তিনি নিজে এত বেশি কখনো বলেন নাই। সেদিনই মায়ের রূপের বর্ণনা করেন তিনি। এমনভাবে করেন যেন তিনি রূপকথার রানির বর্ণনা করছেন। চট্টগ্রাম শহরে সবচেয়ে সুন্দরী নারী ছিলেন তার মা। শাহানা মনে করতে চেষ্টা করেন, প্রতিটা খুনের রাতেই কি তার স্বামী প্রগলভ হয়ে উঠেছিলেন?

আসিফ উদ্দিন নিহত হওয়ার রাতে মায়ের কথা বলতে বলতে শরীফ অন্য পৃথিবীতে প্রবেশ করেন। রূপকথার রাজ্যে। শাহানার মনে হয় যে বঙ্কিমের উপন্যাসের অসামান্য কোনো নারী নেমে আসে পালঙ্ক থেকে ‘সুগঠিত সুগোল ললাট, অপ্রশস্ত নহে, অথচ অতিপ্রশস্তও নহে। নিশীথ কৌমুদীদীপ্ত, নদীর ন্যায় প্রশান্ত-ভাব-প্রকাশক; তৎপার্শ্বে অতিনিবিড়বর্ণ কুঞ্চিতালকসকল ভ্রূযুগে, কপোলে, গণ্ডে, অংসে, উরসে আসিয়া পড়িয়াছে; মস্তকের পশ্চাদ্ভাগে অন্ধকারময় কেশরাশি সুবিন্যস্ত মুক্তাহারে গ্রথিত রহিয়াছে, ললাটতলে ভ্রূযুগ সুবঙ্কিম, নিবিড়-বর্ণ, চিত্রকরলিখিতবৎ হইয়াও কিঞ্চিৎ অধিক সূক্ষ্মাকার, আর এক সুতা স্থূল হইলে নির্দোষ হইত। চক্ষুদুটি অতি প্রশস্ত, অতি সুঠাম, অতিশান্ত জ্যোতিঃ...’। শরীফ নিজামকে সে রাতে মনে হয়েছিল তিনি শিশু হয়ে গিয়েছিলেন, যেন তার মায়ের সাথে সরাসরি সংযোগ সংস্থাপিত হয়ে গিয়েছিল।

মায়ের মৃত্যুর এত বছর পরও মায়ের তৈরি করা কিছু আইন কঠোরভাবে মেনে চলেন শরীফ নিজাম। যত গুরুত্বপূর্ণ কাজই থাকুক, রাত এগারোটার মধ্যে তিনি বাড়ি ফিরে আসবেনই। এগারোটার পর মিটিং-টিটিং সব চলে তার বাড়িতে। ঘরের বাইরে যাবার সময় তিনবার কুল্হুআল্লাহ পড়ে যান; সেও স্কুলজীবনে চালু করা মায়ের আরেক আইন।

সারারাত মুষলধারে বৃষ্টি, স্বামী ঘুমোচ্ছেন। বিরামহীন বর্ষণ, বারান্দায় বৃষ্টির ছাট লেগে ভিজে গেলেও শাহানা কাঠের চেয়ারে পাথরের মতো বসে থাকেন। নিহত আসিফ উদ্দিনের সন্তানের মুখ চোখে ভাসে। হয়তো সবই শরীফের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা। শরীফ যদি খুনী হয়ও, স্ত্রীকে তো অন্ধের মতো ভালোবাসে। খুনীর প্রেমিকা, স্ত্রীদের কী করা উচিত? খুনী যদি মধুর প্রেমিক হয়? যদি সে উন্মাদের মতো ভালোবাসে?

ভোরে টেলিফোনে শরীফের ঘুম ভাঙে। পাহাড়ি ঢলে পাহাড় ধসে প্রচুর মানুষ নিহত হয়েছে। শরীফের সাথে শাহানাও যেতে চান। পৃথিবী তখনো বৃষ্টি এবং অন্ধকারময়। পাহাড়ের ঢালে থাকা সব মানুষ আতঙ্কে নেমে এসে রাস্তায় দাঁড়ানো, আবালবৃদ্ধবণিতা। শরীফ, শাহানা, জেলা প্রশাসনের কর্তারা সবাই তৎপর হন মৃতের উদ্ধারে। পাহাড় ছেড়ে আসা জীবিতদের মধ্যে শিশুদের হাসপাতালে, স্কুলঘরে দ্রুত পাঠানোর জন্য শাহানা আরিফকে বলেন। সর্বস্ব হারাবার আতঙ্কে থরথর কম্পমান, কাকভেজা মানুষগুলি ছাতা ও বর্ষাতি-পরা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের দিকে ফ্যালফ্যাল তাকিয়ে থাকে।

ছাতা নিয়ে শাহানা নিজেই তদারকিতে নামেন। এ বিপদের সময় আরিফ বেশ সহজ এবং স্বাভাবিক আচরণ করেন। শাহানা লক্ষ করেন তার স্বামী সব ব্যাপারে আরিফের ওপর নির্ভরশীল। স্বামীর মুখে আরিফ সম্পর্কে সবসময় প্রশংসামূলক মন্তব্য ‘ছেলেটা দারুণ কাজের। মাথা ঠাণ্ডা ছেলে।’

আরিফের মা গুরুতর অসুস্থ, স্বামীর মুখে এ-খবর শুনে শাহানা স্বামীকে রাজি করিয়ে আরিফের গ্রামের বাড়ি যান। কৃতজ্ঞতা আর মুগ্ধতা আরিফের চোখেমুখে উপচে ওঠে। স্যার-ম্যাডামের তদারকিতে শিশুর মতো ছুটোছুটি করে সে। শাহানারা তাদের গাড়িতেই আরিফের মাকে চট্টগ্রাম নিয়ে এসে ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে দেন। চিকিৎসার সব খরচও বহন করেন শরীফ।

সপ্তাহখানেক পর এক রাতে পতেঙ্গা সি-বিচে ‘হাওয়া খেতে যাই’ বলে শাহানা বাসা থেকে বেরিয়ে যান। রাত এগারোটা তখন। যাবার সময় শরীফ বলে দেন মাসুক ড্রাইভারকে নিয়ে বের হতে। সে হুঁশ করে গাড়ি চালায়। মাসুককে নিয়েই বের হন তিনি। সমুদ্রের ফেনা আর ঢেউগুলো জ্যোৎস্নায় চিকচিক করে। পতেঙ্গা সমুদ্রতটে খোলা হাওয়ায় ডুবে থাকেন তিনি দুই ঘণ্টা। ড্রাইভার মাসুককে শরীফের একান্ত সচিব আরিফের বাসায় নিয়ে যেতে বলেন।

ঘরের দরজা খুলে ম্যাডামকে দ্যাখে আরিফের মুখ কাগজের মতো সাদা হয়ে যায়। ‘আরিফ, তোমার সাথে কথা আছে’ বলে নিজেই দরজা বন্ধ করে দেন। ‘শোনো, একটা সত্যি কথা আমাকে বলতেই হবে’ বলে আরিফের মুখোমুখি দাঁড়ান। আরিফ মাথা নিচু করে থাকে। নিশ্চুপ আনত মুখে দাঁড়িয়ে থাকে। শাহানা ফিসফিস করে বলেন, ‘আমার কথা তোমার শুনতেই হবে। প্লিজ আরিফ, আমার কথা শোনো’, আকুল কণ্ঠে বলেন। আরিফের হাত দুটো ধরে বিছানায় বসেন। একজন সাংসদের একান্ত সচিব, উদীয়মান রাজনীতিবিদ আরিফের হাত দুটো শাহানার হাতের মুঠোয় মৃগীরোগীর মতো কাঁপতে থাকে। সে কাঁপা স্বরে বলে, ‘আপনি চলে যান ম্যাডাম।’
‘আমি যাব না আরিফ। আমি কোনো কিছুতেই যাবো না। আমার কথা তোমার শুনতেই হবে।’
আরিফের ঠোঁট, মুখ, হাত কম্পমান। সে প্রায় কাঁদো কাঁদো স্বরে বলে, ‘প্লিজ চলে যান ম্যাডাম।’
শাহানা আরিফের হাত দুটো প্রায় খামচে ধরেন। ‘প্লিজ, আমাকে শুধু একটা কথা বলো। সত্যি করে বলো।’ শাহানা নিজেও কাঁপছেন।
শীর্ণ মাংসপেশির মধুরঙা যুবক মাথানিচু করে থাকে।
শাহানা আরিফের হাত খামচে ঝাঁকুনি দিতে থাকেন। ‘আমার দিকে তাকাও। সরাসরি তাকাও। প্লিজ একটা কথা বলো শুধু।’
আরিফ কাঁপছে। সে বলে, ‘আমাকে কোনো প্রশ্ন করবেন না। প্লিজ, ম্যাডাম, এই মুহূর্তে চলে যান।’
শাহানা নিঃশব্দ বসে থাকেন।

ক্লান্ত শাহানা রাত তিনটায় মাতালের মতো টলতে টলতে বেরিয়ে যান। ড্রাইভারকে আবারও পতেঙ্গা সৈকতে যাবার নির্দেশ দেন। মোটা মোটা বলিরেখা ড্রাইভারের মুখে, চোখে ঘুম আর ক্লান্তির ছাপ। সৈকতে নেমে গাড়ি ছেড়ে দেন, বাড়ি ফিরে যেতে বলেন। তাকে বলেন, ‘তুমি চলে যাও। আমি ট্যাক্সি নিয়ে বাড়ি ফিরে যাবো।’

রাতটা ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে তার জন্য। সমুদ্র সৈকতে পাথরের ওপর বসে বমি করেন। যেন যা কিছু লুকিয়ে রেখেছিলেন সব আছড়ে ফেললেন পৃথিবীতে। সমুদ্রের শরীর থেকে উঠে আসা ঘন কুয়াশা পরাজাগতিক বলয় তৈরি করেছে। কুয়াশায় চাঁদ অপসৃত হয়ে গেছে। টিমটিমে ভোঁতা আলো ছড়ায় দূরে নোঙর করা কয়েকটা জাহাজ। যেন স্বপ্নের ছবি।

ভোরের আলো ফুটতেই সমুদ্রতীর জেগে ওঠে। ফেরিওয়ালা, সমুদ্র দর্শনার্থী জড়ো হতে শুরু করলে স্কুটার ডেকে শাহানা বাড়ি ফিরে যান। বাড়ি ফিরে দ্যাখেন স্বামী তখনো ঘুমিয়ে। তার পাশে শুয়ে পড়তেই ঘুমের অতলে হারিয়ে যান তিনি। পরদিন দুপুর পর্যন্ত ঘুমিয়ে কাটান।

অফিস থেকে বাড়িতে ফিরে দুপুরে তার স্বামী বলেন, ‘চলো কক্সবাজার যাই। দুইদিন কক্সবাজার বেড়ালে ভালো লাগবে।’ শাহানা মাথা নেড়ে বলেন, ‘চলো।’ গাড়িতে পুরো সময় রবীন্দ্রসংগীত বাজে। বান্দরবানের দিকে গাড়ি ঢুকিয়ে বলেন, ‘এই শহরটা যে কী দারুণ!’ শহরে ঢুকেই এসি বন্ধ করে গাড়ির কাচ নামিয়ে দেন শরীফ। শত পাখির কাকলি আর ভেষজ গন্ধে পৃথিবী ম ম করে। পাহাড়ের পাদদেশে খোলা মাঠের পাশে গাড়ি রেখে তারা নামেন। উজ্জ্বল ফড়িংগুলো ফরফর করে উড়ছিল শেষ বিকালের সূর্যের আলোয়। ঝিঁঝিঁ পোকার সংগীতে মুখরিত বনানী। পরগাছা আর শ্যাওলায় ঢাকা একটি গাছের গুঁড়ি থেকে কালো পিঁপড়া উঠে যাচ্ছে শাখা-প্রশাখার দিকে। শেষ বিকালের সূর্যের প্রভা শরীফের মুখে প্রতিফলিত হয়ে হলুদাভ আভা ঠিকরে বের হয়। ঘাসের মধ্যে শাহানা হাঁটতে থাকেন। শরীফকে ডাকতে পিছু ফিরে দ্যাখেন শরীফ পকেট থেকে পিস্তল বের করে শাহানার দিকে তাক করেন। পিস্তলের নল থেকে সূর্যের আলো শতদিকে প্রতিফলিত হচ্ছে।

শাহানা বুঝে নেন এই তার জীবনের শেষ বিকাল।

বাংলাদেশ সময়: ২০২৮ ঘণ্টা, মার্চ ২৫, ২০১৪


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান