
ঢাকা: রাজধানী বাড্ডার চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ঘটনায় তিন মাসেও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছেন জড়িত তিন পেশাদার খুনি।
খুনিরা পেশাদার ও প্রযুক্তি ব্যবহারে দক্ষ হওয়ার কারণে অনেক কাছে গিয়েও তাদের ধরতে পারছে না পুলিশ। তবে তাদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ঘটনার পর পর আমরা একজনকে আটক করতে সক্ষম হই। তবে তাকে নিয়ে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ তিনি মারা যান।
প্রায় আড়াইমাস পর আরেক আসামিকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হই। তিনি আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকি তিন আসামি গ্রেফতারে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
রাজধানী বাড্ডার আদর্শনগর এলাকায় নির্মণাধীন ভবনের মালিক ফারুকের কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে ‘পেশাদার সন্ত্রাসী’ আলামিন ওরফে পিচ্চি আলামিন। তবে চাঁদা দিতে অস্বীকার করেন ফারুক।
এতে করে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর আলামিনসহ তার সহযোগী সীমান্ত ওরফে রানা খান ওরফে টিটু, সোহাগ, আরিফ এবং নূর আলম ওরফে নূরী নির্মণাধীন ভবনে গিয়ে শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করতে বলেন।
শ্রমিকরা কাজ বন্ধ না করলে তারা সেখানে কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটান এবং গুলি করেন। এতে করে শ্রমিক ভবনের ঠিকাদার ফারুক এবং শ্রমিক মিলন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।
ঘটনার দুই দিন পর মধ্যবাড্ডা এলাকা থেকে গ্রেফতার হন সোহাগ। পরে পুলিশ সোহাগের স্বীকারোক্তি মোতাবেক অস্ত্র উদ্ধার করতে গেলে আফতাবনগর এলাকায় ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান তিনি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, সোহাগের মারা যাওয়ার পর তার দেওয়া কিছু তথ্যের ওপর তদন্ত অব্যাহত রাখা হয়। এরপর এক প্রকারের গোয়েন্দা জালে গত ১১ ফেব্রুয়ারি উত্তর বাড্ডা এলাকা থেকে ঘটনার সঙ্গে সরাসরি অপর আসামি আরিফকে গ্রেফতার করা হয়।
আরিফকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যার কারণ ও কারা জড়িত তাদের নাম বলে দেন এবং নিজেও হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন।
এসআই আমিনুল জানান, এই এলাকার অন্যতম চাঁদাবাজ ‘সন্ত্রাসী’ পিচ্চি আলামিন চাঁদা না পেয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তার সঙ্গে ছিলেন আরো চারজন। এর মধ্যে সোহাগ ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মারা যান। আরিফকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠানো হয়। কিন্তু, মূল হোতা আলামিনসহ নূরী ও টিটুকে এখনো গ্রেফতার করা যায়নি।
তিনি বলেন, পিচ্চি আলামিনের বয়স আনুমানিক সর্বোচ্চ ২৫/২৭ বছর হবে। তার বিরুদ্ধে বাড্ডাসহ খিলগাঁও, রামপুরা ও তেজগাঁও এলাকায় অন্তত ১০টি হত্যা মামলা রয়েছে। অত্যন্ত ঠাণ্ডা মাথার পেশাদার খুনি এই আলামিন। প্রযুক্তি সম্পর্কেও সে খুব সচেতন। সে কারণে অনেক কাছে গিয়েও তাকে আটক করা যায়নি।
ঢাকার কাছাকাছি একটি স্থানে সে আত্মগোপন করে আছেন বলে জানান এসআই আমিনুল।
এদিকে, অপর দুই পলাতক আসামি সীমান্ত ওরফে রানা খান ওরফে টিটু, নূরে আলম ওরফে নূরী ‘পেশাদার সন্ত্রাসী’ ও ‘ভাড়াটে কিলার’ হিসেবে কাজ করেন। তাদের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ চাঁদাবাজি ও ডাকাতি মামলা রয়েছে। তারা ঢাকার বাইরে অবস্থান করছেন।
এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, আসামিদের গ্রেফতারে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করা হচ্ছে, অল্প দিনের মধ্যেই চাঞ্চল্যকর এই মামলার সব আসামিকেই আমরা গ্রেফতারে সক্ষম হবো।
বাংলাদেশ সময়: ০০৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ০৮, ২০১৪