
ঢাকা: সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইন বলবৎ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল।
তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সাধারণ মানুষ যদি সব সময় নজরদারির ভেতরে পড়ে, তাহলে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে যাবে।’
রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (সংশোধন)-২০১৩ আইন ব্যক্তিগত তথ্য গোপনীয়তার সুরক্ষা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য হুমকিস্বরূপ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এ সব কথা বলেন।
মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘সাংবাদিকদের এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়া দরকার। পেশাগত অবস্থান থেকে এর প্রতিবাদ করতে হবে। আমাদের সংবিধান পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক সংবিধান।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদে মানুষের বাগস্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। তাহলে কেন এই তথ্য প্রযুক্তি আইন সংশোধনীর প্রয়োজন পড়লো?’
তিনি বলেন, ‘অনেক সাফল্য থাকার পরও সরকারের এই সংশোধিত আইনের কারণে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রের এ ঘটনা সরকারের সাফল্যকে ম্লান করে দিচ্ছে।’
প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা আছে উল্লেখ করে সাংবাদিক বুলবুল বলেন, ‘১০ জন জঙ্গি, সন্ত্রাসীর কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখার জন্য লাখ লাখ মানুষের প্রাইভেসি নজরদারিতে থাকবে, এটা হতে পারে না।’
তিনি বলেন, ‘অনেক মানুষের অসংখ্য ফেক আইডি রয়েছে, যেখান থেকে ফেক পোস্ট দেওয়া হয়। হয়ত সেই রকম কোনো ফেক পোস্টের জন্য কাউকে আটক করা হবে; অথচ দেখা গেল, তিনি কিছুই জানেন না সেই পোস্টের বিষয়ে!’
আইনের অপপ্রয়োগ বিষয়ে নিজের অসন্তোষ তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সব সরকারই আইন সংশোধন করে বলে, এ আইনের অপপ্রয়োগ হবে না। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই আইনটিই বুমেরাং হয়ে ফেরত আসে। এই আইনে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশকে গ্রেফতারের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, যেটা অত্যন্ত আতঙ্কের বিষয়।’
এ তথ্য-প্রযুক্তি আইনের সংশোধনী অত্যন্ত সর্তকতার সঙ্গে বিবেচনা করারও আহ্বান জানান ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন নির্বাচনে সদ্য বিজয়ী নেতা মনজুরুল আহসান বুলবুল।
তথ্য অধিকার নিয়ে কাজ করা জাকির হোসেন এ আইনকে কালো আইন বলে অভিহিত করে বলেন, ‘এ আইন একটি কালো আইন। সাংবাদিক এবং যারা তথ্য প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি হুমকিস্বরূপ!’
তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ৫৪ ধারা হয়েছিল। এ সংশোধনীও তাই। শাসক শ্রেণীর সুবিধার জন্য আইন প্রণয়ন করা মানবাধিকার লঙ্ঘন।’
সামহোয়ার-ইন ব্লগের নির্বাহী পরিচালক গুলশান আরা বলেন, ‘সংবিধানের ৩৯ ধারার সঙ্গে এই নতুন সংশোধিত আইনের ৫৭ ধারা সাংঘর্ষিক। মুক্ত চিন্তার অধিকার থাকতে হবে, বাগস্বাধীনতা সইতে হবে। এগুলো বন্ধ করে দিলে গণতন্ত্রের মৃত্যু হবে; গণতন্ত্র বাঁচানোর জন্য কোনো কালো আইন বাঁচানো যাবে না।’
বাংলাদেশ সময়: ১৯০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৩
জেএ/এবি/আরকে