
ঢাকা: শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন বলে এবং তার লোক বলে পরিচয় দিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মোবাইল ফোনে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে চাঁদা দাবি করছে একটি চক্র। প্রাণভয়ে কেউ কেউ চাঁদা দিচ্ছেনও। অনেকে আবার ফোন পাওয়ার পর আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর শরণাপন্ন হচ্ছেন।
গত প্রায় এক মাসে সুব্রত বাইন বলে পরিচয় দিয়ে অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছে এভাবে চাঁদা দাবি করার ঘটনা ঘটেছে বলে জানা গেছে।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে: কর্নেল কিসমত হায়াত বাংলানিউজকে বলেন, সম্প্রতি উত্তরা এলাকায় এ ধরনের চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। দবে এখন এর বাইরে রাজধানীর অন্যান্য এলাকাতেও চাঁদা দাবি করার ঘটনার কথা শোনা যাচ্ছে।
মোবাইল ফোনে চাঁদা দাবিকারী চক্রটিকে প্রতারকচক্র বলে আখ্যা দিয়ে লে: কর্নেল কিসমত হায়াত বলেন, কেউ মোবাইল ফোনে শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নাম করে চাঁদা চাইলে দ্রুত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ জানাতে হবে।
তিনি বলেন, “আমরা এই প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের জন্য কাজ করছি।”
সূত্রে জানা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সম্প্রতি শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন বলে অথবাতার লোক বলে পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবির অনেক ঘটনা ঘটেছে। বিশিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে মোবাইল ফোনে সন্ত্রাসীরা নিজেদের সুব্রত বাইন অথবা সুব্রত বাইনের লোক বলে পরিচয় দিয়ে মোটা অংকের চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা না দিলে তারা সপরিবারেও হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। প্রাণভয়ে অনেকেই চাঁদা দিচ্ছেন টাকা দিচ্ছেন।
উত্তরা এলাকায় বসবাসরত এক ভুক্তভোগী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, “গত সপ্তাহে বিকেলের দিকে তার মোবাইলে ফোন করে সুব্রত বাইনের লোক বলে পরিচয় দিয়ে ২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে সপরিবারে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেয়।”
তিনি বলেন, “এরপর আমি ভয়ে ৮০ হাজার টাকা দিই। তিনদিন পর বাকি টাকা চেয়ে আবারো ফোন আসে। এরপর আমি টাকা না দিয়ে র্যাবে অভিযোগ করি।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরা এলাকাতে-ই অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তির কাছে সুব্রত বাইনের লোক পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ভয়ে কয়েকজন টাকা দিয়েছেন। পরে আবারো তাদের কাছে টাকা চাইলে তারা উপায় না দেখে পুলিশ ও র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন।
জানা যায়, র্যাব-পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন বলে পরিচয় দিয়ে উত্তরা ছাড়াও রাজধানীর গুলশান, বনানী, ধানমণ্ডিসহ বিভিন্ন এলাকাতে চাঁদা দাবি করা হচ্ছে।
হঠাৎ করে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজির ঘটনায় অনেকে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যারা চাঁদা না দিয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেছেন তাদের মনে কাজ করছে অজানা আতঙ্ক।
ভুক্তভোগীরা এই প্রতারক চক্রের সদস্যদের দ্রুত গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।
মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর আলম মাতবর বাংলানিউজকে বলেন, বিভিন্ন সময় রাজধানীর শীর্ষ সন্ত্রাসীদের পরিচয় দিয়ে চাঁদা দাবির ঘটনায় আমরা অভিযোগ পেয়ে থাকি। তবে অধিকাংশই ক্ষেত্রে দেখা যায় এরা এক ধরনের প্রতারক চক্র। তাই এ ধরনের ফোনে আতঙ্কিত না হতে এবং চাঁদা না দিতে নগরবাসীর প্রতি আহবান জানাই।
তিনি বলেন, “আমরা এ ধরনের প্রতারক চক্রকে গ্রেফতারের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।”
আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, রাজধানীতে সুব্রত বাইনসহ পুরস্কারঘোষিত ১১ সন্ত্রসীর নাম ভাঙ্গিয়ে প্রতারকচক্রটি মাঝেমধ্যেই চাঁদা দাবি করে থাকে। এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে যেন কেউ পা না দেন।পাশাপাশি এ ধরনের কেউ চাঁদা চাইলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, রাজধানীর পুরস্কারঘোষিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমতী সুব্রত বাইন ২০০৪ সালে পুলিশের তাড়া খেয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে প্রথমে পশ্চিমবঙ্গের নদীয়ার তেহট্টে যান। এখানে তিনি “ফতে আলী” বা শুভ্র পরিচয়ে বসবাস শুরু করেন। এরপর তিনি চলে যান নদীয়ার করিমপুরে।
২০০৫ সালে স্ত্রী বিউটির নামে বাড়ি কিনে দক্ষিণ কলকাতার কড়েরা থানার পাম এভিনিউ ও মেফেয়ার রোডের সংযোগস্থলে থাকতে শুরু করেন। নিজস্ব বাড়ি থেকে তাকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের বিশেষ টাস্কফোর্স-এসটিএফ’র গোয়েন্দারা।
এসময় তার কাছ থেকে বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করা হয়। অস্ত্র আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। জামিনে মুক্তি পেয়ে সুব্রত প্রথমে শিলিগুড়িতে যান। সেখান থেকে নেপালের ঝাপা জেলার সীমান্ত এলাকা কাঁকর ভিটার সুসারি এলাকায় থাকতে শুরু করেন।
২০০৯ সালের ২২ শে সেপ্টেম্বর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্কফোর্সের দুই কর্মকর্তা সুব্রত বাইনকে ধাওয়া করে নেপাল সীমান্তের কাঁকরভিটা শহরে ঢুকে পড়লে সেখানকার পুলিশ তিনজনকেই গ্রেফতার করে। এর এক সপ্তাহ পর নেপালে ভারতীয় দূতাবাসের হস্তক্ষেপে ছাড়া পান কলকাতা পুলিশের দু’কর্মকর্তা।
সুব্রত বাইনকে প্রকাশ্যে অশোভন আচরণের (নুইসেন্স ইন পাবলিক) দায়ে পূর্ব নেপালের ভদ্রপুর জেলে রাখা হয়। ইন্টারপোলের রেড নোটিশ অনুযায়ী তাকে গ্রেফতার করে রাখা হয়েছিল ভারতীয় সীমান্তের কাছে ভদ্রপুর জেলে। সেখান থেকে পালিয়ে আত্মগোপনে যান সুব্রত বাইন। পরে গত ২৮ নভেম্বর কলকাতা পুলিশ বড়বাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। বর্তমানে সুব্রত বাইন কলকাতা জেলে রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে অন্তত ৩০টি খুনের মামলা রয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭২০ ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৩
আইএ/সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর