
ঢাকা: ব্যাংকার, রেভ্যুলুশনারি এবং ভিশনারি- এই তিনটি শব্দ একসঙ্গে শুধু ড. ইউনূসের জন্যই মানানসই বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্টজনেরা।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মাননা ‘কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল’ গ্রহণ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশিষ্ট নাগরিকরা তাকে উদ্দেশ্য করে এ মন্তব্য করেন।
তারা বলেন, “দারিদ্র্য বিমোচনে ক্ষুদ্রঋণের প্রবক্তা ড. ইউনূসের সাফল্য ও অবদান বিশ্ববাসী অকুণ্ঠচিত্তে মনে রাখবে।”
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনের দোতলা রোটান্ডায় প্রতিনিধি পরিষদ এবং সিনেট নেতাদের উপস্থিতিতে ‘কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল’ সম্মাননা আর শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে তাঁর হাতে এ পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
মার্কিন কংগ্রেসের স্পিকার জন বোয়েনারের হাত থেকে এ সম্মাননা পদক নেন ড. ইউনূস। এরপর তিনি কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে বক্তব্য দেন। এর মধ্য দিয়ে ড. ইউনূসের পাশাপাশি বাংলাদেশও অনন্য এক উচ্চতায় স্থান করে নিল।
শান্তিতে ২০০৬ সালে নোবেল পাওয়ার পর ড. ইউনূসের ২০০৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড লাভ এবং বুধবার বিশ্বের একক পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল’-এ ভূষিত হওয়ায় বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে আবারও অনন্য উচ্চতায় স্থান পেল।
১৭৭৬ সালের ২৫ মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটনকে দিয়ে শুরু হওয়া এই কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেলপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর ড. মুহম্মদ ইউনূস বিশ্বের বিরল সম্মানের অধিকারী সাত ব্যক্তির কাতারে স্থান পেলেন। একই সঙ্গে নোবেল পুরস্কার, মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল- এই তিনটি অত্যন্ত সম্মানজনক পুরস্কারই লাভ করেছেন তিনি। এছাড়া ড. ইউনূস হচ্ছেন প্রথম কোনো মুসলিম, যিনি এ পুরস্কার লাভ করলেন। এ তথ্যটি এদিন অনুষ্ঠানে ঘোষিত হলে উপস্থিত কংগ্রেসম্যানরা একযোগে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে ড. ইউনূসের উদ্দেশে হাততালি দেন।
ইলিনয়েস সিনেটর রিচার্ড ডার্বিনের বক্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত অপেরা শিল্পী ড. ইউনূসের কন্যা মনিকা ইউনূস অনুষ্ঠানে বাবা ইউনূসের জন্য উৎসর্গ করে সংগীত পরিবেশন করেন।
অনুষ্ঠানে স্পিকার জন বোয়েনার বলেন, “যুগ যুগ ধরে সৃষ্টিশীল ধারণার ওপর আমেরিকা গড়ে উঠেছে। ড. ইউনূস তাঁর ক্ষুদ্রঋণ ধারণার মাধ্যমে দারিদ্র্য বিমোচনে পৃথিবীতে যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছেন, তার ধরন অতিমাত্রায় আমেরিকান। আমি তাই ড. ইউনূসকে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কংগ্রেসে আমার সহকর্মীদের ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।”
পুরস্কার গ্রহণ করে প্রদত্ত বক্তব্যে ড. ইউনূস বলেন, “আমেরিকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের সর্বোচ্চ পদে নির্বাচিত বন্ধু কংগ্রেস সদস্যরা আমার সম্পর্কে এতক্ষণ ধরে যা বলেছেন, তা শুনে আমি চোখে পানি ধরে রাখতে পারছি না। আমার কান্না পাচ্ছে। তবে আমাদের সবারই একটি মহান উদ্দেশ্য হলো মানবতার মুক্তি।”
ড. ইউনূসই প্রথম বাংলাদেশি, যিনি এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা হিসেবে প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল প্রদান করা হয়। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা প্রথম দফায় নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৯ সালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ওই সম্মাননা দেন। এর মধ্য দিয়ে ড. ইউনূস হলেন সপ্তম ব্যক্তি, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল ও প্রেসিডেনশিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম লাভ করেন। এর মাধ্যমে তিনি নরম্যান বরলগ, মারটিন লুথার কিং জুনিয়র, নেলসন ম্যান্ডেলা, এলি ওয়াইসেল, অং সান সু চি ও মাদার তেরেসার সঙ্গী হলেন, যাঁরা কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল ও প্রেসিডেনশিয়াল মেডেলে ভূষিত হন।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিরা ড. ইউনূসের এ সম্মাননাপ্রাপ্তিতে বেশ আনন্দিত। তাঁরা মনে করছেন, বিশ্ব পরিস্থিতির বর্তমান সময়ে তাঁর এ সম্মাননাপ্রাপ্তি বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করবে। গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান।
বাংলাদেশ সময় : ০৭৫৫ ঘণ্ট, এপ্রিল ১৮,২০১৩
এনএম/সম্পাদনা: আবু হাসান শাহীন, নিউজরুম এডিটর