
ঢাকা: মতাদর্শিক দ্বন্দ্বে আবারও ভাঙল বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। ১৯৮০ সালে বাসদ প্রতিষ্ঠার পর এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ভাঙল দলটি।
এর আগে ১৯৮২ সালে আদর্শগত ও ব্যক্তি সম্পর্ককে কেন্দ্র করে বাসদ (মাহবুব) ও বাসদ (খালেকুজ্জামান) নামে দলটি দুই ভাগে বিভক্ত হয়। এরপর ২০০৫ সালে বাসদের ছাত্রসংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের তৎকালীন সভাপতি নুরুল ইসলামসহ একটি বড় অংশের নেতারা বাসদ ও ছাত্রফ্রন্ট থেকে পদত্যাগ করেন।
২০১০ সালের জুলাই মাসে তৃতীয় বারের মতো বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আবদুল্লাহ সরকার (প্রয়াত), সাইফুর রহমান তপনসহ কয়েকজন নেতা দল ছেড়ে যান। যদিও পরবর্তীতে তারা অন্য কোনো দলে যোগ দেননি বা নতুন দল গঠন করেননি।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিপ্লবী রাজনীতির তাত্ত্বিক শিবদাস ঘোষকে নিয়ে মতভিন্নতা, জোট-মহাজোটের বাইরে বাম বিকল্প শক্তি গড়ে তুলতে সিপিবির সঙ্গে বাসদের রাজনৈতিক ঐক্য, গণজাগরণ মঞ্চ নিয়ে দলীয় অবস্থান ও দলের সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিষয়ে এবার এ ভাঙনের ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার বেলা ১১টায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)’র ভিআইপি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন বাসদের কেন্দ্রীয় কনভেনশন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক মুবিনুল হায়দার চৌধুরী এবং কেন্দ্রীয় নেতা শুভ্রাংশু চক্রবর্তী তাদের রাজনৈতিক এবং মতাদর্শিক অবস্থান তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনে নেতারা বাসদের রাজনীতিতে নিজেদের মূলধারার দাবি করে মুবিনুল হায়দার চৌধুরী বলেন, “নীতিনিষ্ঠ সমর্থনের কারণে বাম মহলে বিশিষ্টতা অর্জন করেছে বাসদ। কিন্তু এক পর্যায়ে দলের এই আদর্শগত ও সাংগঠনিক বিকাশ স্থবির হয়ে পড়েছে। যার কারণে ঘোষিত নীতিমালা থেকে প্রতিষ্ঠিত নেতৃত্বেও ক্রমাগত বিচ্যুতি ঘটে।”
তিনি বলেন, “কোন আদর্শের ভিত্তিতে দল গড়ে উঠেছে ও কোন চিন্তার ভিত্তিতে পরিচালিত হবে তা নিয়ে দলের অভ্যন্তরে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কমরেড শিবদাস ঘোষের চিন্তাকে আগে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তা এখন অজ্ঞাত প্রষূত বলে মন্তব্য করা হচ্ছে।”
তিনি আরও জানান, দলের নেতাকর্মীদের কাছে বিষয়টি গ্রহনযোগ্য হয়নি। এই ভিন্নমতকে কেন্দ্র করে দলের ভেতরে যে দ্বন্দ্ব চলছিল তা আলোচনার মাধ্যমে নিরসন করা সম্ভব হয়নি।
মুবিনুল হায়দার বলেন, “আগামী ছয় মাসের মধ্যে তাদের পক্ষ থেকে কনভেনশন করা হবে। সেখানেই বোঝা যাবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা আমাদের সঙ্গেই আছে।”
দলের ৩২টি ইউনিটের মধ্যে ১১টি মবিনুল হায়দারের পক্ষে ও ১৮টি খালেকুজ্জামানের পক্ষে দাঁড়ায়। বাকি তিনটি ইউনিট কোনো পক্ষে অবস্থান নেয়নি।
এর মধ্যে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের ৭০ জন সদস্যের ৫২ জন এবং মহিলা ফ্রন্টের ২৯ জনের মধ্যে ২০ জন মবিনুল হায়দার ও শুভ্রাংশু চক্রবর্তীর পক্ষে অবস্থান নেয়।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ১২, ২০১৩
ইউএম/এমএইচপি/ সম্পাদনা: জনি সাহা ও মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর