
ঢাকা: হেফাজতে ইসলামের দেওয়া ১৩ দফা দাবি দেশের সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপন্থি বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার।
হেফাজতে ইসলাম তাদের সমাবেশে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে উল্লেখ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও আহ্বান জানান তিনি।
সোমবার দুপুরে শহীদ মিনারে পতাকা মিছিল পৌঁছালে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ইমরান বলেন, ‘‘তাদের ১৩ দফা দাবির একটিও যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে দেশে মধ্যযুগীয় শাসন ব্যবস্থা ও তালেবানি শাসন ব্যবস্থা কায়েম হবে। তারা নারীদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখতে চায়। তারা দেশের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে চায়।’’
ইমরান এইচ সরকার বলেন, ‘‘দেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে নারীদের সব ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত করতে হবে। হেফাজতে ইসলাম তাদের সমাবেশে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে। কিন্তু সরকার কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র।
সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় হেফাজতে ইসলামের ডাকা হরতাল প্রতিরোধে গণজাগরণ মঞ্চের পতাকা মিছিলটি বের হয়। শাহবাগের গণজাগরণ চত্বর থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে শেরাটন মোড় হয়ে মিছিলটি শহীদ মিনারে যায়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে ফের গণজাগরণ চত্বরে ফিরে আসে পতাকা মিছিল।
মিছিলে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু, গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ডা. ইমরান এইচ সরকারসহ বিভিন্ন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা ছাড়াও সর্বস্তরের জনতা অংশ নেন।
গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম উদ্যোক্তা মারুফ রসুল সমাবেশে বলেন, ‘‘আমাদের আজকের সারা দেশব্যাপী পতাকা মিছিলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল। দিকগুলো হলো- জাতীয় পতাকা, শহীদ মিনার ও নারী।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের জাতীয় পতাকাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে অবমাননা করা হয়েছে, পতাকা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর তথ্য দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পতাকা আমাদের প্রাণের পতাকা। হেফাজতে ইসলাম স্বাধীনতাবিরোধী, তারা স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে না। জামায়াতও শহীদ মিনার ভেঙেছে, জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে। যা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে আঘাত করেছে।’’
মারুফ রসুল বলেন, ‘‘হেফাজতে ইসলাম নারীনীতি ও শিক্ষানীতি বাতিল করতে বলেছে। কিন্তু আমরা ৪২ বছরে যে পথ চলেছি সেখানে নারী-পুরুষের সম্মিলিত প্রয়াস ছিল। নারী-পুরুষের এ সম্মিলিত প্রয়াসের মধ্য দিয়েই আমরা সামনের দিনগুলো পাড়ি দিতে চাই। হেফাজতে ইসলাম নারীদের ঘরের মধ্যে বন্দি করে রেখে দেশকে মধ্যযুগীয় অন্ধকারে ঠেলে দিতে চায়। ১৯৭১ সালে প্রত্যেক মুক্তিযোদ্ধার কাছে একটা করে অস্ত্র ছিল। ৪২ বছর পর আমাদের সবার অস্ত্র হবে জাতীয় পতাকা।’’
‘‘এ স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তিকে প্রতিহত করতে হলে আমাদের সশস্ত্র হওয়ার প্রয়োজন নেই। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করবে জাতীয় পতাকা’’ বলেও উল্লেখ করেন মারুফ রসুল।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়ায় এর প্রতিবাদে ও তাকেসহ সকল যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে আন্দোলন শুরু হয়। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাকটিভিস্ট ফোরামের শুরু করা এ আন্দোলনে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের জনতা যোগ দেওয়ায় তা রুপ নিয়েছে গণআন্দোলনে। গণজাগরণ চত্বরে পরিণত হয়েছে শাহবাগ মোড়। পরে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধসহ ৬ দফা ঘোষণা করে এসব দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করে আসছে গণজাগরণ মঞ্চ।
এ গণআন্দোলনের ঢেউ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে পৌঁছে গেছে প্রবাসেও। সারা দেশে এবং প্রবাসে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের গণআন্দোলনে নানা শ্রেণী-পেশার লাখো মানুষ সমবেত হয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় জনজোয়ার সৃষ্টি করেছেন।
এরই মধ্যে গণজাগরণের কিছু সংগঠক ও ব্লগারদের বিরুদ্ধে ইসলাম ও মহানবীকে (সা.) অবমাননার অভিযোগ তুলে তাদের শাস্তিসহ ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছে হেফাজতে ইসলাম। সংগঠনটি এসব দাবিতে ও গণজাগরণ ঠেকাতে শনিবার ঢাকামুখী লংমার্চ ও মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করে সোমবার সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দিয়েছে।
অন্যদিকে হেফাজতের নামে নেপথ্যে জামায়াতের ছত্রছায়ায় এ লংমার্চ ও হরতাল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো ও তাদের বাঁচানোর জন্য বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রগতিশীল সংগঠন ও গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠকসহ আন্দোলনরত জনতা। এ কারণেই লংমার্চ প্রতিহত করতে গণজাগরণ মঞ্চ ও বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২২ ঘণ্টার অবরোধ ও ২৪ ঘণ্টার হরতাল পালন করে।
সোমবার গণআন্দোলনের ৬৩তম দিনে হেফাজতের হরতাল ঠেকাতে সারা দেশে চলছে পতাকা মিছিলসহ নানা কর্মসূচি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪০৮ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৮, ২০১৩
এমএন/এসএনএইচ/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর