দশ শীর্ষ আলেমকে খুনের পরিকল্পনা শিবিরের

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ও স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ২০:০৬, মার্চ ৪, ২০১৩
ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

ছবি:বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংস তান্ডবের ধারাবাহিকতায় চট্টগ্রামের ১০ শীর্ষ আলেমকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল শিবির ক্যাডাররা। এজন্য ৮ সদস্যের একটি কিলিং স্কোয়াডও গঠন করেছিল শিবির।

কিন্তু সোমবার পুলিশে আট শিবির ক্যাডারকে আটক করতে সক্ষম হওয়ায় শীর্ষ আলেমদের হত্যার পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। এর ফলে দেশ মুক্তি পেয়েছে বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা এবং অনিশ্চিত পরিস্থিতি থেকে।

পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘শিবির ক্যাডাররা ১০ শীর্ষ আলেমের ঘরবাড়ি রেকি করছিল। খুব দ্রুত তারা বড় ধরনের হত্যাকান্ড ঘটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। কিন্তু আমরা তাদের সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিয়েছি।’

শিবিরের খুনের টার্গেট হওয়া ১০ শীর্ষ আলেম হচ্ছেন, নগরীর ষোলশহরের জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ও জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদের খতিব জালাল উদ্দিন আল কাদেরী, উপাধ্যক্ষ ছগির আহমেদ ওসমানী, একই মাদ্রাসার মোহাদ্দিস ওবায়দুল হক নঈমী, মোহাদ্দিস আশরাফুজ্জামান আল কাদেরী, মুফতি অছিউর রহমান, মুফতি আব্দুল ওয়াজেদ, শিক্ষক ইউনূস, শিক্ষার্থী তাওহীদ এবং পাহাড়তলীর নেছারিয়া আলীয়া সুন্নীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদিন জুবাইর ও সুন্নী আলেম আবুল কাশেম নূরী।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশ থানার বিবিরহাটে মাদ্রাসার পাশে শ্যামলী আবাসিক এলাকায় ওবায়দুল হক নঈমীকে খুঁজতে যায় শিবির ক্যাডার মাহমুদুল হাসান। তিনি নঈমীর বাসার ঠিকানা এবং একই মাদ্রাসার আরও কয়েকজন শিক্ষকের খোঁজ করতে থাকলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। 

স্থানীয় জনতা মাহমুদুলকে আটক করে গণপিটুনি দেয়। এসময় তার কাছে থাকা ১০ শীর্ষ আলেমের নামসহ তালিকাটি পাওয়া যায়।

এদিকে এক শিবির ক্যাডারকে আটকের খবর পেয়ে বায়েজিদ বোস্তামি ও পাঁচলাইশ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। তারা মাহমুদুলকে আটক করে নিজেদের হেফাজতে নেন।

পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আটকের পর মাহমুদুল শীর্ষ আলেমদের হত্যার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে কিলিং স্কোয়াডের বাকি সদস্যদের তথ্য আমাদের দেয়। এরপর আমরা বাকলিয়ায় এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরও ৭জনকে আটক করি।’

আটক বাকি সাত শিবির ক্যাডার হল, আব্দুর রহমান, রেজাউল করিম, ওসমান গণি, আরিফুর রহমান, ইউনূস, আশরাফউল্লাহ এবং জসীম উদ্দিন।

ওসি জানান, রোববার রাতেই পুলিশ নিজস্ব সূত্রে ১০ শীর্ষ আলেমকে হত্যার পরিকল্পনার কথা জানতে পারে। এরপর পুলিশ যখন এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছিল, তখন মাহমুদুল শ্যামলী আবাসিক এলাকায় আটক হন। 

আটক শিবির ক্যাডারদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ সূত্র জানায়, ১০ শীর্ষ আলেমের মধ্যে ৪-৫ জনের ঘরবাড়ি, ঠিকানা, তাদের যাতায়াতস্থল রেকি করা সম্পন্ন করেছে শিবির ক্যাডাররা। এর মধ্যে সোমবার ওবায়দুল হক নঈমীর বিষয়ে তাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবার কথা ছিল। এ বিষয়ে শিবির ক্যাডার আব্দুর রহমানের বাসায় কয়েক দফা বৈঠক হয়। বৈঠকে আব্দুর রহমানকে কিলিং মিশন সমন্বয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।

সূত্র জানায়, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় ঘোষণার পর দেশে যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সে সুযোগকে কাজে লাগিয়েই ১০ শীর্ষ আলেমকে খুনের পরিকল্পনা তাদের ছিল।

আদর্শিক বিরোধে টার্গেট আলেমরা

সুন্নী মতাদর্শে বিশ্বাসী চট্টগ্রামসহ সারাদেশে খ্যাতনামা আলেমদের হত্যার পরিকল্পনা কেন করেছিল শিবির ক্যাডাররা এ বিষয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা সৃষ্টি হয়েছে।


খুনের তালিকায় থাকা ষোলশহর জামিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসার মোহাদ্দিস ওবায়দুল হক নঈমী বাংলানিউজকে বলেন, ’জামায়াত শিবিরের যিনি আদর্শিক গুরু, সেই আবু আলা’ মওদুদীর আকিদা আমরা সমর্থন করিনা। আমরা মনে করি সেই আকিদা কোরআন সুন্নাহ’র বরখেলাপ, প্রকৃত ইসলামের পরিপন্থী। জামায়াত-শিবির যেহেতু সেই আদর্শে বিশ্বাস করে, আমরা তাদেরও সমর্থন করিনা।`

তিনি বলেন, ‘পাকিস্তান আমল থেকেই আমাদের সঙ্গে আদর্শিক এ বিরোধ আছে। এজন্য আমরা বারবার জামায়াত-শিবিরের খুনের টার্গেট হয়েছি। এবারও একটি বিশেষ পরিস্থিতিতে জামায়াত-শিবির তাদের উদ্দেশ্যে হাসিল করতে চেয়েছিল।’

তবে নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ মনে করেন, শীর্ষ আলেমদের হত্যা করতে পারলে দেশে আরেকটি অনিশ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হত। এতে সরকার বেকায়দায় পড়ত। মূলত সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই শীর্ষ আলেমেদের হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

হিটলিস্টে যা লেখা আছে

এদিকে শীর্ষ ১০ আলেমের বাসস্থান ও যাতায়াত পথের বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে শিবিরের হিট লিস্টে। তালিকায় দেখা গেছে, এই শীর্ষ ১০ আলেমরা নগরীর কোথায় বসবাস করেন তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ রয়েছে। তারা ভবনের কোন তলায় থাকেন এমনকি ভবনের রঙ কি তাও বর্ণনা দেয়া হয়েছে এ তালিকায়।

বাংলানিউজের হাতে আসা এ তালিকা থেকে শীর্ষ দু’আলেমের বাসস্থানের বিবরণ পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।

আশরাফুজ্জামান আল কাদেরী: ঠিকানা: খতিবের হাট সুন্নিয়া মাদ্রাসা রোড। নিজস্ব বাসা প্রসিদ্ধ শালকরের দোকান এর সোজা পূর্ব পাশে। নবম তলা বিশিষ্ট সবুজ রঙের বাসার দ্বিতীয় তলায়।

জালাল উদ্দীন আল কাদেরী: ঠিকানা: সুন্নিয়া মাদ্রাসার পশ্চিম দিকে রেসকো স্কুল ও কলেজ এর গলি দিয়ে প্রবেশ করে আনোয়ার ম্যানশনের দ্বিতীয় তলায়।

বাংলাদেশ সময়: ২০০০ ঘণ্টা, মার্চ ০৪, ২০১৩
এসজি/আরডিজি/টিসি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান