সশস্ত্র বাহিনী দিবস আজ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১০:০৫, নভেম্বর ২১, ২০১০

ঢাকা: যথাযথ মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনায় রোববার উদযাপন করা হচ্ছে সশস্ত্র বাহিনী দিবস।

দেশের সব সেনানিবাস, নৌঘাঁটি ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটির মসজিদগুলোতে দেশের কল্যাণ ও সমৃদ্ধি এবং সশস্ত্র বাহিনীর উত্তরোত্তর উন্নতি ও অগ্রগতি কামনা করে ফজরের নামাজ শেষে মোনাজাতের মধ্য দিয়ে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়েছে।

প্রসঙ্গত, স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের এ দিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সমন্বয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী। সেদিন এ বাহিনী জনগণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। ঐতিহাসিক এ দিনটিকে প্রতি বছর ‘সশস্ত্রবাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিক মো. জিল্লুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘স্বাধীনতা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই মহান স্বাধীনতার স্থপতি। দীর্ঘ দু’যুগ ধরে বাঙালি জাতিকে স্বাধিকার আদায়ে উদ্বুদ্ধ করে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ। যুদ্ধের বিজয়কে ত্বরান্বিত করতে ১৯৭১ সালের এদিনে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সমন্বিত আক্রমণের সূচনা করে। এর ফলে আমাদের বিজয় অর্জন ত্বরান্বিত হয়। আমাদের জাতীয় ইতিহাসে তাই দিনটির গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাধীনতা যুদ্ধে সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যদের মহান আত্মত্যাগ ও বীরত্ব গাথা জাতি গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে।

দিবসটি উপলক্ষে আমি সশস্ত্রবাহিনীর সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই। দেশের জন্য শাহাদৎ বরণকারী সশস্ত্রবাহিনীর বীর শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের অতন্দ্র প্রহরী সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি দুর্যোগ মোকাবেলা ও জাতিগঠনমূলক কাজে অংশ নিয়ে দেশবাসীর আস্থা ও প্রশংসা অর্জনে সমর্থ হয়েছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে তাদের অবদান দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে এবং বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়েছে।’

নেতৃত্বের প্রতি অনুগত ও শ্রদ্ধাশীল থেকে পেশাগত দক্ষতা ও দেশপ্রেমের সমন্বয় ঘটিয়ে সশস্ত্রবাহিনী তার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, ‘সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল।

আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে পরিচালিত মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর দেশপ্রেমিক জনতা, মুক্তিবাহিনী, সশস্ত্রবাহিনী ও বিভিন্ন আধাসামরিকবাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মিলিত আক্রমণের সূচনা করে। ফলে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করে ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির অগ্রযাত্রা ও বিজয়ের স্মারক হিসেবে প্রতি বছর ২১ নভেম্বর ‘সশস্ত্রবাহিনী দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক সামরিকবাহিনী গড়ে তোলার কাজ শুরু করেন। তার হাতে গড়া সে বাহিনী আজ পেশাদারিত্ব, উৎকর্ষ ও দক্ষতার স্বাক্ষর রাখছে তাদের কর্মকাণ্ডে।’

তিনি বলেন, ‘সরকার সশস্ত্রবাহিনী আধুনিকায়নে সর্বাত্মকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সশস্ত্রবাহিনী সবসময় দেশের দুর্যোগ মোকাবেলা, অবকাঠামো নির্মাণ, আত্মমানবতার সেবা, বেসরকারি প্রশাসনকে সহায়তা এবং বিভিন্ন জাতিগঠনমূলক ও গণমুখী কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আমাদের সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে।

তিনি সশস্ত্রবাহিনী দিবস উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচিসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করেন।

দিবসটি উপলক্ষে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মৎসর্গকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধার নিদর্শন স্বরূপ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী রোববার ঢাকা সেনানিবাসের শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এরপর সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল মোহাম্মদ আবদুল মুবীন, নৌবাহিনী প্রধান ভাইস অ্যাডমিরাল জেড ইউ আহমেদ ও বিমানবাহিনী প্রধানের পক্ষে সহকারী বিমানবাহিনী প্রধান (প্রশাসন)  এয়ার ভাইস মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী নিজ নিজ বাহিনীর পক্ষ থেকে শিখা অনির্বাণে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সেনা ও নৌবাহিনী প্রধান এবং বিমানবাহিনী প্রধানের পক্ষে সহকারী বিমান বাহিনী প্রধান বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হবেন।

প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এই দিবস উপলক্ষে ঢাকা সেনানিবাসের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বীর শ্রেষ্ঠদের উত্তরাধিকারী ও খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের উত্তরাধিকারীদের সম্মানে এক সংবর্ধনার আয়োজন করবেন।

দিবসটি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে এক বৈকালিক সংবর্ধনার আয়োজন করবেন। জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, সাবেক রাষ্ট্রপতিরা, জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা, সাবেক প্রধান উপদেষ্টা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রতিমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র, সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা, ডেপুটি স্পিকার, বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের প্রধান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কমিশনার, বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব, মুখ্য সচিব, সাবেক বাহিনী প্রধান, অ্যাটর্নি জেনারেল, মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, মহাপুলিশ পরিদর্শক ও উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা, ২০০৯ সালের স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদক প্রাপ্ত ব্যক্তি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, সব সচিব, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর বেসামরিক কর্মকর্তা, দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্য, ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা ও সামরিক অ্যাটাশে, রাজধানীতে অবস্থানরত স্বায়ত্তশাসিত ও আধা-স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার প্রধান, সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, রাজনৈতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তি, স্বাধীনতা যুদ্ধের সব বীর শ্রেষ্ঠের উত্তরাধিকারী, প্রখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা, পদস্থ বেসামরিক কর্মকর্তা এবং তিন বাহিনীর চাকরিরত ও অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এ সংবর্ধনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।

এছাড়া বগুড়া, চট্টগ্রাম, ঘাটাইল, কুমিল্লা, যশোর, রংপুর, রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে অনুরূপ সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য ঢাকার বাইরে দেশের অন্যান্য সেনা গ্যারিসন, নৌ জাহাজ ও স্থাপনা এবং বিমানবাহিনী ঘাঁটিতেও বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা (সদরঘাট), নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও মংলায় বিশেষভাবে সজ্জিত নৌবাহিনী জাহাজগুলো ২১ নভেম্বর দুপুর ২টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত জনসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

এদিকে, বাংলাদেশ টেলিভিশন দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে শনিবার রাত ৮টার বাংলা সংবাদের পর এক বিশেষ অনুষ্ঠান ‘অনির্বাণ’ সম্প্রচার করে। বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলো সশস্ত্রবাহিনী দিবসের ওপর বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান এবং টক শো প্রচার করছে। এছাড়া বাংলাদেশ বেতারও রোববার সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে বিশেষ দুর্বার অনুষ্ঠান প্রচার করবে।

এদিকে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক দিবসটি উপলক্ষে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং জার্নাল প্রকাশিত হবে। সশস্ত্রবাহিনীর আওতাধীন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রচনা, চিত্রাঙ্কন ও কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১০০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২১, ২০১০


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান