সাইয়েদ জামিলের দশটি কবিতা

সাইয়েদ জামিল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৬:৫০, ডিসেম্বর ২৩, ২০১২

কোরান শরীফ

   তোমার দিকে তাকাতেই পবিত্র গ্রন্থে মুদ্রিত
হ’লে তুমি। হে আমার কোরান শরীফ, আদত তুমি
এক স্কুল ড্রেস পরা দ্যুতিময় প্রাজ্ঞ বালিকা।
   তোমাকে দেখবার পরই তো আমি বায়তুল
মোকাররমের পাশ থেকে কিনে এনেছি রেহেল।
হে পবিত্র কিতাব, তোমাকে রেহেলে রেখে ৩ আলিফ
টেনে দাউদ নবীর কণ্ঠে আমি পাঠ করতে চাই
তোমার সমস্ত অক্ষর।


এত্তেকাফ

গোল্লায় যেতে যেতে আমি তোমার কাছে
গেলাম। অথচ বাবা আমাকে মসজিদে
যেতে বলেছিলো। আমি আল আকসার গম্বুজ
দেখেছি। আমি জানি, তোমার স্তনের সৌন্দর্য
থেকে মোল্লারা চুরি ক’রে নিয়ে গ্যাছে গম্বুজের
ধারণা। তুমি যাই বলো, আমি বিড়ি খেতে খেতে
হাত রাখি প্যান্টের জিপারে। ভয় নেই, আমি
তোমার ভেতর অনন্ত এত্তেকাফে বসতে চাই।


মসজিদ ভেঙে যাবার দৃশ্য

   তখন আমার মন মসজিদে ঢুকছিলো। মনের পা থেকে হাত খুলছিলো
জুতা। অদূরে দাঁড়িয়ে ছিলো মায়া। আর আমি দেখলাম, তাঁর দুই পাহাড়ের
উপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে কামাখ্যার কামরূপি মেঘ। আর সেই খাড়া দুই
পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ব’য়ে যাচ্ছে পুণ্যতোয়া স্বচ্ছ এক জলের ধারা।

   এই সব উত্তেজক দৃশ্য মূলত শয়তানের প্রবঞ্চনা। আর আমার মনে প’ড়ে
গ্যালো পেচ্ছাপের রাস্তা দিয়ে কিছু বের হ’লে অজু ভেঙে যায়। সুতরাং পুনরায়
অজুর জন্য আমি ওই খাড়া দুই পাহাড়ের মাঝ দিয়ে ব’য়ে যাওয়া নদীর কাছে
যেতেই হেসে উঠলো মায়া। আর ওর হাসির ভূমিকম্পে ভেঙে পড়লো মসজিদ।


কাঠঠোকরা

   গাছের যৌনাঙ্গ থেকে ঠিকরে পড়া রোদ্দুরের মতো শাদা শাদা
অনুভূতির প্রচ্ছন্ন আভায় পৃথিবী লেপ্টে আছে।
 
   সমস্ত অনুভূতিই তবে শুদ্ধ সঙ্গীত। আর খচ্চরের পায়ু পথ দিয়ে
যে ধ্বনি নির্গত হয় কখনও কখনও তাও কারও কারও মর্মে পশে যেতে
পারে ব’লে মনে হচ্ছে।
 
   দ্যাখো, একটি নারী আকাশের দিকে নিতম্ব দিয়ে শিশ্ন গর্জনের মতো
ধেয়ে আসা সৌরঝড় প্রতিহত করছে।
 
   এবং এইসব অশ্লীল ঘটনার মোকাবিলা করতে করতে পেরিয়ে যাচ্ছে
সূর্যের আয়ুষ্কাল। তবু একজন কাঠঠোকরা জীবনে কতো কিউবিক কাঠ
ঠোকরায় তা হিসেবের বাইরেই থেকে যাচ্ছে।


ক্লাসরুম থেকে ফিরে
 
   মা-কে ছেড়ে মাগির কাছে যাচ্ছি। প্রিয়তমা নারীকে ছেড়ে যাচ্ছি
ব্রোথেলে।
 
   এর মানে অবক্ষয় নয়।
 
   একাডেমির পাতি এক নাস্তিক প্রেজুডিস পোয়েট আমাকে বলে, ‘জানো
তো, রুদ্রকে ছেড়ে গ্যাছে তসলিমা!’
 
   এইসব অন্ধকার মার্কা কথাবার্তা শুনে যে হয় আলোকিত,— হোক;
আমি না। আমি জানি, সতী-সাদ্ধী মা মাসির মাই চাটে গোপন নাগর।
 
   আর ওই বুড়ো-ভাম কবি! তাঁকেও জানি। কুত্তার মতো লোলুপ দৃষ্টিতে
যিনি রোজই তাকিয়ে থাকেন রাস্তার ছিটিয়ে থাকা মাগি ও মাগির দিকে।
 
   ক্লাসরুমে সব শালী সতী। সব শালা সতীর ছেলে।   


যথারীতি সাবজেক্টিভ এবং একটি ফালতু কবিতা
 
   আমার বাবা আতাউর রহমানের বাবা ইয়াসিন আলি মোল্লা। আজ
হঠাৎ লোকটাকে মনে পড়লো। ক্যামন ছিলে হে তুমি, ইয়াসিন আলি?
দাদা অথবা পিতামহ যাই বলি শুনেছি তুমি দেশপ্রেমিক ছিলে। আর
শুনেছি আকবারুণ নেছা ছাড়াও আরও দুই উপস্ত্রী ছিলো তোমার।
তুমি  ছিলে কেতাবি ঢঙের অথচ সৌখিন। আমি তোমার সৌখিনতা
নিয়ে প্রশ্ন  তুলতে চাই না।
 
   শুনেছি, তোমার বাবার বাবার বাবা ছিলেন পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়।
আর তোমার সেই বাবার বাবার বাবা শ্রীযুক্ত পাঁচকড়ি মহাশয় ছিলেন
রীতিমতো হিন্দুত্ববাদের লোক। অথচ তুমি ছিলে মুসলমান। তোমার বাড়িতে
ছিলো মসজিদ। আর তুমি অশ্রু সজল চোখে পড়তে কারবালার পুঁথি।
হিন্দুইজম কনভার্টে খাঁটি ইসলামিস্ট। কিন্তু সেটাও আমার কাছে দোষণীয়
নয়। ধর্ম পাল্টানোটাও এক ধরনের সৌখিনতা।
 
   দেশপ্রেমিক ইয়াসিন আলি, তোমার দেশপ্রেমের বিষয়টি অত্যন্ত হাস্যকর।
তুমি জন্মেছো ভারতবর্ষে। তারপর পাকিস্তানকে স্বদেশ বলেছো। এবং তারপর
বাঙলাদেশকে। আমি জানি না, দেশপ্রেমিক হ’তে হ’লে ঠিক কতোগুলো দেশকে
বলতে হয় স্বদেশ। ক্যানো দেশ প্রেমিককে প্রেমিকার মতো বারবার পাল্টাতে
হয় দেশ! ক্যানো তুমি একটি স্বদেশ নিয়ে সন্তুষ্ট  হ’লে না? আসলে, স্ত্রী আর
উপস্ত্রীর মতো তুমি সৃষ্টি করতে চেয়েছো কেবলি  খণ্ড খণ্ড আনন্দ-উদ্যান।
 
   ভাগ্যিস, তোমার জীবন ও যৌবন নবী নুহের জীবন ও যৌবনের মতো
নয়শতো বছর প্রলম্বিত হয় নি। এ-রকম প্রলম্বিত হ’লে প্রত্যেক শতকেই,
আমি নিশ্চিত, একজন স্ত্রী এবং দুজন উপস্ত্রী থাকতো তোমার। এবং তুমি
প্রেমিকার মতো পাল্টাতে স্বদেশ। প্রত্যেক শতকেই তুমি জন্ম নিতে একটি
ভারতবর্ষে। এবং তারপর একটি পাকিস্তান থাকতো তোমার। এবং তারপর
একটি বাঙলাদেশ। নয়শতো বছরে তোমার স্বদেশের সংখ্যা হ’তো সাতাশ।
আমি কি ভুল বললাম, মোল্লা ইয়াসিন আলি?


শখ
 
   ঈশ্বর হ’তে চাই। অথচ ছেলেবেলায় খেলনার দোকানদার হ’তে
চেয়েছিলাম। একবার মা-র কাছে আবদার করেছিলাম একটা ট্রেন
কিনে দেবার জন্যে। হয়তো ট্রেনের চালক হ’তে চেয়েছিলাম। এখন
মনে নেই। বিষয়টি পুরোনো আর অস্পষ্ট হ’য়ে গ্যাছে।
 
   বাবার অফিসের সামনে ছিলো একটা কৃষ্ণচূড়ার গাছ। কৃষ্ণচূড়া
আমার খুব প্রিয়। আমি কৃষ্ণচূড়া গাছ হ’তে চেয়েছিলাম। কোকিলের
চেয়ে কাকের কণ্ঠেই আমি মুগ্ধ হই বেশি। আর কাককেই মনে হয় শ্রেষ্ঠ
গায়ক পাখি। আমি কাকও হ’তে চেয়েছিলাম।
 
   শখ ক’রে একবার একজন নারীকে ভালোবেসে ভেবেছিলাম, ওর
হাতে তুলে দেবো একগুচ্ছ লাল গোলাপ। কিন্তু ভালোবেসে ওই নারীটির
কাছে যেতেই মনে হ’লো ওকে উপর্যপুরি ধর্ষণ করি। ধর্ষণ করতে গিয়ে
মনে হ’লো এটা কোনো বর্বরতা নয়।
 
   অন্য আরেকবার সাবেক এক বিশ্বসুন্দরীর বিয়ে দিয়েছিলাম আমার
প্রপিতামহের লাগানো একটা বটবৃক্ষের সঙ্গে। আর ওদের বেডরুম থেকে
খুব গোপনে সরিয়ে রেখেছিলাম জন্মনিয়ন্ত্রণ  পিল ও কনডম। যাতে
ওদের বুঝতে কষ্ট না হয় পাখিরা ওদেরই সন্তান।

   মনে নেই, ক্যানো জানি একবার খুনি হ’তে চেয়েছিলাম। থ্রি নট থ্রি
হাতে বেরিয়ে পড়েছিলাম পথে। কাকে খুন করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না।
অকস্মাৎ দ্যাখা হ’য়ে যায় রুনা নাম্মী এক পতিতার সাথে। তাঁকে খুন
করতে গিয়ে ভালোবেসে ফেলি।
 
   শখ থাকা ভালো। কিন্তু আমার শখ মুণ্ডুহীন। হতচ্ছাড়া এসব শখের
কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একবার আকাশ ছোঁয় আবার পরক্ষণে মহাকালকে
হাতের মুঠোয় বন্দী ক’রে ঢুকে যায় ইঁদুরের গর্তে।


হেমন্ত ধারণা মাত্র

  মহাকাশে, কাল যে যুবকটি আত্মহত্যা করলো, সে
আন্ডারগ্রাউন্ড ব্যান্ডের ভোকাল। ওই তো, তাঁর-ই বন্ধু,
অন্ধ গিটারিস্ট, চিকিৎসার অযোগ্য উন্মাদ, এখন বসেছে
এসে সন্ধ্যার সিঁড়িতে। বলি তাঁকে, জ্যামিং হবে না আর।
হেমন্ত ধারণা মাত্র। তথাপি, প্রতিদিন ভোরবেলা, মগজের
ভেতর, বেহালা বাজায় এক নিঃসঙ্গ মহিলা। আর, বাবলা
ফুলের মতো মঞ্জুরিত হলুদ আত্মা তাঁর কিছুটা কুয়াশা
কাতর।


উন্মাদ বুলডোজার

   ট্রাক ড্রাইভার থাকাকালীন সময়ে আমি কি অন্ধ ছিলাম? সে-কথা
মনে করতে পারছি না। অথচ বুকের ভেতর দিয়ে রাস্তাটা সোজা
আখাউড়া গ্যাছে।

   মায়া আখাউড়া থাকে। সেখানে ব্যবহৃত কনডম আর বেলিফুলের
ঘ্রাণে অন্ধরা দৃষ্টি ফিরে পায়। এক গভীর শীতরাত্রির ভেতর আমি ওই
কুহক পাড়ায় এসে পড়িমরি অবস্থায় যে উল-জোছনার ওমের ভেতর
ঢুকি তাঁরই নাম মায়া।

   আর এ কথা সত্য, এখন, বুকের সড়কে যেহেতু আমি কোনো যানজট
মানছি না, সেহেতু, জেমস ওয়াট, এখানে তোমার ইঞ্জিন আবিষ্কার গ্রহণ
যোগ্য নয়। বরং একটি মাতাল রিকশায় চেপে, বাতাসে চুল উড়িয়ে,
প্রত্যেক গোধূলিতে নৈসর্গের ভেতর দিয়ে মায়াদের বাড়ি যাচ্ছি, এরকম
কল্পনায় স্বস্তি পাই।

   অথচ ঘর থেকে মায়ার উদ্দেশ্যে বার হলেই পৃথিবী থেকে রিকশা
উধাও, আর, এক চালকবিহীন উন্মাদ বুলডোজার ছুটে আসে আমার
দিকে। আমি পিষে মরবার আগেই লাফ দিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসি।   


মাতৃভক্তি

সেই নিঃসঙ্গ মহিলা, বেহালাবাদিনী, বিপন্ন বিষাদের সুরে পৃথিবী-পুত্রকে
ভুলিয়েছিলো যে; সে এখন পাহাড়ে পথ হারাবার অভিনয়ে ব্যস্ত। আর তুমি,
বুক-পুকুরে ডুবে মরা রাজহাঁস আর হে ঘাতিনী, আমার পাশা খেলবার
সময়ে দুর্গন্ধ ছড়িয়ো না। বরং বনের ভেতর থেকে উঠে আসা মহিষের
মতো যেখানে ইচ্ছে যাও। ওই তো, সূর্য ডুবে যায়, আর, পাখির আত্মার
সাথে উড়ে যায় প্রলুব্ধ হৃদয়। চেয়ে দ্যাখো, পেঁপলটি গাছের নিচে খ’সে
যাওয়া জীবনের হলুদ পালক। অতএব, এইবেলা, কুকুরকে চুমু খাওয়া
মমতাময়ী প্রতিটি মহিলার কাছে ভিক্ষা মাগো যৌনতা; যেহেতু পিতৃত্ব
এক ঈর্ষিত ধারণার নাম।

বাংলাদেশ সময় : ১৬৪০ ঘণ্টা, ২৩ ডিসেম্বর ২০১২


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান