দুই ইস্যুতে মুখোমুখি অবস্থানে খুলনার জুলাইযোদ্ধারা

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৯:৩৩, জুন ৩০, ২০২৫

খুলনা: খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগ দাবিতে ফের সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলকারীরা। সোমবার (৩০ জুন) বিকেল থেকে কেএমপি সদর দপ্তরের সামনে খানজাহান আলী সড়কের মাঝে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন আন্দোলনকারীরা।

সাধারণ ছাত্র-জনতার ব্যানারে এই কর্মসূচিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একাংশ, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতারা অংশ নেয়।

এদিকে কেএমপি কমিশনারের পদত্যাগ ও জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তির মাসব্যাপী কর্মসূচি নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া পক্ষগুলো। উভয়ের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর প্রতিহত করার ঘোষণায় বাড়ছে উত্তাপ উত্তেজনা। একটি পক্ষ মেলা ও কনসার্ট আয়োজন করতে চাইলে কোন ধরনের অনৈসলামিক কাজের অনুমতি না দিতে প্রশাসনকে স্মারকলিপি দিয়েছে ইমাম পরিষদ।  

জানা গেছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান চলাকালে আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি বর্ষণ, গণগ্রেফতার ও বর্বরোচিত নির্যাতনের দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন পুলিশের এসআই সুকান্ত দাস। মঙ্গলবার (২৪ মে) খুলনায় একটি মামলায় সাক্ষী দিয়ে বর্তমান কর্মস্থল চুয়াডাঙ্গায় ফেরার পথে নগরীর ঈস্টার্ন গেট এলাকায় স্থানীয় জনতার হাতে আটক হন সুকান্ত। জনগণ তাকে লাঞ্ছিত করে পুলিশে সোপর্দ করে। পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা প্রদানের পর ছেড়ে দেয়। পরদিন বিষয়টি জানাজানি হলে নগরীতে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ৫ আগস্টের পরে সুকান্তর বিরুদ্ধে থানায় ও আদালতে চারটি মামলা হয়। অবিলম্বে সুকান্তকে গ্রেফতার ও শাস্তির দাবিতে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে নগরী। ছাত্র জনতার ব্যানারে বুধবার (২৫ জুন) খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেড কোয়ার্টার ঘেরাও করে বিক্ষোভ হয়।

ওই রাতেই খুলনা ও চুয়াডাঙ্গা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে সুকান্তকে গ্রেফতার করে। এরপর আন্দোলকারীদের একটি অংশ রাজপথ থেকে সরে আসলেও অপর অংশ নগরীর আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি, খুন রাহাজানি, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং বৃদ্ধি, মাদকের ভয়াল ছোবল বন্ধে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ তুলে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো: জুলফিকার আলী হায়দারের পদত্যাগ দাবি করেন। এক দফা দাবিতে তারা সড়ক অবরোধ করে, কেএমপির সদর দরজায় তালা ঝুলিয়ে ও রাস্তায় টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে কর্মসূচি পালন করে। এ পর্যায়ে ঘোষণা দিয়ে কর্মসূচির সাথে যুক্ত হয় বিএনপির অঙ্গ-সহযোগী সংগঠন, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল।  

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব খুলনা প্রেসক্লাব পরিদর্শনে আসেন। সে সময় কেএমপি অবরোধ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বিক্ষোভকারীরা প্রায় তিন কিলোমিটার পথ মিছিল করে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে এসে অবস্থান নেয় এবং কেএমপি কমিশনারের বিষয়ে সরকারের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দাবি করে। তারা দুই ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান নেন। ঢাকায় ফিরে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে কথা বলে সমস্যার সুরাহা করবেন- প্রেস সচিবের এমন আশ্বাসের পর ফিরে যান তারা।  

এদিকে রোববার জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে মাসব্যাপী কর্মসূচির অংশ হিসেবে নগরীর শিববাড়ি মোড়ে মেলা আয়োজনের অনুমতি চেয়ে খুলনা জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আবেদন দিতে যান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এখানে মেলার আয়োজন নিয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে মতবিরোধ দেখা দিলে তারা তিন ঘণ্টারও বেশি সময় সেখানে অবস্থান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।  

নগরীতে একের পর এক মব সৃষ্টির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সোমবার (৩০ জুন) দুপুর দেড়টায় খুলনা প্রেসক্লাবে প্রেস ব্রিফিং করে জুলাই বিপ্লবের সমমনা ৮টি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। তারা ঘটে যাওয়া ঘটনাসমূহের নিন্দা জানিয়ে বলেন, জুলাই আন্দোলন দমনে এসআই সুকান্তর নির্মম আচরণের জন্য তাকে গ্রেফতারের দাবিতে আমার আন্দোলন শুরু করেছিলাম। কোনো ব্যক্তিকে টিকিয়ে রাখা বা নামানো জন্য আন্দোলন করিনি। সুকান্ত গ্রেফতার হওয়ায় আমার আন্দোলন থেকে সরে আসি। কিন্তু একটি বিশেষ মহল আমাদের গুটিকয়েক সহযোদ্ধাকে ব্যবহার করে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করছে। তারা বলেন, সরকার ও কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে খুলনায় জুলাই মাসব্যাপী কর্মসূচি পালন করবো। এমন কোনো কাজ করবো না যা জুলাই আন্দোলনকে বিতর্কিত করে। কেউ এমন কাজ করতে চাইলে তাদেরকে প্রতিহত করা হবে বলে ঘোষণা দেন। জুলাই আন্দোলনের বর্ষপূর্তির সাথে মেলা বা কনসার্টের কোন সম্পর্ক নেই বা থাকতে পারে না বলে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেন তারা।  

ব্রিফিংয়ে বক্তব্য রাখেন জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো যোদ্ধা আব্দুল্লাহ আল শাফিল। উপস্থিত থেকে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক আল শাহরিয়ার, রেড জুলাইয়ের মিরাজুল ইসলাম ইমন, জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্সের শেখ জাহিদুল ইসলাম জিহাদ, জাস্টিস ফর জুলাইয়ের সাঈফ নেওয়াজ, ইনকিলাব মঞ্চের আব্দুল মুহাইমিন আদীব, আপ বাংলাদেশের ফয়জুল্লাহ ইকবাল শাকিল, রঙ মশালের মুনতাসির এবং প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্সের প্রতিনিধিবৃন্দ।  

একটি পক্ষের প্রেস ব্রিফিং ও আন্দোলন কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হলে জহুরুল তানভির বলেন, আমরা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ব্যানারে কর্মসূচি পালন করছি না। ফলে অন্যদের আপত্তি জানানোর কোনো সুযোগ নেই। আজ যারা প্রেস ব্রিফিং করেছেন, তাদের অধিকাংশরই কোন পদ নেই। বরং যারা আন্দোলন করছি তারাই বিভিন্ন পদে আছি। এভাবে প্রেস ব্রিফিং করে তারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছেন। কেএমপি হেড কোয়ার্টার ছাড়াও আজ পুলিশের ডিসি (সাউথ) ও ডিসি (নর্থ) অফিস ঘেরাও করার কথা ছিল। কিন্তু জনগণের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে শুধু হেড কোয়ার্টার ঘেরাও পালিত হচ্ছে। আজকের কর্মসূচি রাত ৯টা পর্যন্ত চলবে। দাবিপূরণ না হলে খুলনা অচল কর্মসূচির চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।  

নগরীর শিববাড়ি মোড়ের জিয়া হল প্রাঙ্গণে মেলার আয়োজন বন্ধের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে ইমাম পরিষদ। সোমবার সকালে ইমাম পরিষদের নেতারা এই স্মারকলিপি দেন।  

জেলা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপিতে বলা হয়, খুলনা শহরের অত্যন্ত ব্যস্তময় স্থান বাবরি চত্বরে (শিববাড়ি মোড়) ও পরিত্যক্ত জিয়া হল এলাকায় মাসব্যাপী মেলার আয়োজনের চেষ্টা চলছে। অতীতে আমরা দেখেছি যেখানেই মেলার আয়োজন করা হয়েছে সেখানে নগ্নতা ও অনৈতিকতা থাকে। লটারি, জুয়াসহ অনেক অসামাজিক ও অনৈসলামিক কাজ চলে থাকে। ফলে সমাজে ও রাষ্ট্রে অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। এ ধরনের কোনো মেলার অনুমতি না দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয় স্মারকলিপিতে।  

এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইমাম পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এএফএম নাজমুস সউদ, মাওলানা নাসির উদ্দিন কাসেমী, অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুর রহমান প্রমুখ।

জানা গেছে, গত বুধবার জিয়া হলের উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে জুলাই উদযাপনের জন্য মাসব্যাপী নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের অনুমতি চেয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়। আবেদনে সেখানে একটি জুলাই মঞ্চ, জুলাই কর্নার, জুলাই প্রদর্শনী, বইয়ের দোকান, কিছু দেশীয় কুটির শিল্প, সাংস্কৃতিক ও দেশীয় খাবারের দোকান থাকবে বলে উল্লেখ করা হয়। প্রদর্শনী ও দোকান স্থাপনের কথা বলা হলেও সেখানে মেলার আয়োজন চলছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।  

এদিকে আবেদন করার পরপরই মেলার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের মালিক পতিত প্রধানমন্ত্রী হাসিনার চাচাতো ভাইদের আস্থাভাজন যুবলীগ নেতা রাসেল মিয়া তার ফেসবুকে পেজে মেলা নিয়ে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। এ নিয়ে সচেতন মহলে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ, চলছে নানা সমালোচনা।  

এমআরএম


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান