মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে নারীকে নির্যাতন-চুল কর্তন, গ্রেপ্তার ৩

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ২০:২৬, জুন ১১, ২০২৫
প্রতীকী ফটো

প্রতীকী ফটো

কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে একটি বাসার ফ্রিজ থেকে মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীকে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর এবং মাথার চুল কেটে গ্রামের রাস্তায় ঘুরানোর অভিযোগ উঠেছে।

একইসঙ্গে গ্রাম্য সালিসের নামে ‘মব ভায়োলেন্স’ করে ওই নারীর বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু-ছাগল-স্বর্ণালঙ্কার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে ছয়জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাতপরিচয়দের বিরুদ্ধে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

এ মামলার এজাহারনামীয় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে পরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন (ওসি, তদন্ত) আমিরুল ইসলাম।

তিনি জানান, চুল কর্তনের অভিযোগে এজাহারনামীয় যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তারা হচ্ছেন, উপজেলার শিলাইদহের মির্জাপুর গ্রামের রিপনের স্ত্রী মুক্তি খাতুন, মোমিনের স্ত্রী পারভীন খাতুন ও বক্করের স্ত্রী লিপি খাতুন।

বুধবার (১১ জুন) দুপুরে গ্রেপ্তার আসামিদের ছাড়িয়ে নিতে কিছু সংখ্যক লোকজন থানার সামনে ভিড় জমিয়েছিল বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

সোমবার (৯ জুন) রাত ৮টার দিকে ওই নারীকে নির্যাতন করা হয়।

বর্তমানে ভিকটিম কুমারখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানায়।  ভিকটিমের শরীরের একাধিক স্থানে গুরুতর রক্তাক্ত জখমের চিহ্ন রয়েছে এবং মাথার চুল কাটা।

ঘটনার কয়েকটি ভিডিও সামাজিকযোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দাবি, ‘সোমবার বিকেলে ওই নারী তার প্রতিবেশী রিপনের ঘরে ঢুকে ফ্রিজ থেকে মাংস চুরি করে নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় টের পেয়ে রিপনের স্ত্রী মুক্তি তাকে ধরে ফেলেন। পরে তাকে বাড়ির উঠানে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। খবর পেয়ে ওই নারীর স্বামী তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় নজরুল, কাশেম, রিপনের নেতৃত্বে কয়েকশ নারী-পুরুষ সোমবার রাত ৮টার দিকে ভিকটিমের বাড়িতে ভাঙচুর করে ও ভিকটিমকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে রিপনের বাড়িতে নিয়ে এসে ভিকটিমকে আবারও ব্যাপক মারধর ও মাথার চুল কেটে দেয়। সেখানে উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের নয় নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. শাহ আলমের নেতৃত্বে সালিশ বসিয়ে মাংস চুরির জরিমানা হিসাবে ভিকটিমের দুটি গরু, একটি ছাগল ও স্বর্ণালঙ্কারের বিনিময়ে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

নির্যাতিত নারী অভিযোগ করেন, তার প্রতিবেশী রিপন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি। সোমবার বিকেলে তিনি (ভিকটিম) রিপনকে ডাকতে ওই বাড়িতে গিয়েছিলেন বাড়ির কাজ করানোর জন্য। কিন্তু রিপনের স্ত্রী মুক্তি মাংস চুরির অপবাদ দিয়ে তাকে (ভিকটিম) গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখেন। কিছুক্ষণ পর ভিকটিমকে ছেড়ে দেয়। এরপর রাতে গ্রামের লোকজন নিয়ে রিপন ভিকটিমকে বাড়ি থেকে তুলে এনে গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করেন। এ সময় রিপনের স্ত্রী মুক্তি ও পারভীন তার মাথার চুল কেটে দেয়।

ওই নারী আরও জানান, তার বাড়িতে ভাঙচুর ও গরু-ছাগল, স্বর্ণালঙ্কারসহ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে গেছে। এরপর ভয়ে তার স্বামী পালিয়েছেন। তিনি এই নির্যাতনের বিচার চেয়েছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রিপনের বাড়িতে পড়ে আছে ভিকটিমকে বেঁধে রাখা দড়ি ও তার কাটা চুলের অংশ। আর ভিকটিমের ঘরের দরজায় তালা লাগানো। ভেতরে আসবাবপত্র ভাঙচুর, গোয়ালঘরে নেই কোনো গরু-ছাগল।

ইলেকট্রিক মিস্ত্রি রিপন জানান, তার ঘর থেকে টাকা চুরি করে পালানোর সময় ওই নারী (ভিকটিম) হাতেনাতে ধরা পড়েন। ওই নারী এর আগেও বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করেছেন। সেই রাগেই লোকজন তাকে ধরে মারধর করে চুল কেটে দিয়েছেন।

অভিযুক্ত রিপনের স্ত্রী মুক্তি স্বীকার করে বলেন, আমি শুধু দড়ি দিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখেছিলাম ওই নারীকে। পরে তাকে একটা চড় মেরেছি। কিন্তু চুল কেটেছে কারা তা আমি দেখিনি।

এ ঘটনায় জড়িত আরেক অভিযুক্ত কাশেম দাবি করে বলেন, ওই নারী এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে চুরি করে বলে সালিশে সেই ক্ষতিপূরণ হিসাবে ওইদিন রাতেই তার গরু-ছাগল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে মেম্বরের সঙ্গে কথা বললেই সব জানা যাবে।

এদিকে ওই নারীর বাড়ি থেকে গরু-ছাগল নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন ইউপি সদস্য মো. শাহ আলম। 

তিনি বলেন, আমি ঘটনাস্থল থেকে শুধু ভিকটিমকে উদ্ধার করে তার স্বজনদের হাতে তুলে দিয়েছি। পরে আর কি ঘটেছে তা আমার জানা নেই। এভাবে আইন হাতে তুলে নেওয়া ঠিক হয়নি।

কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সোলাইমান শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, চুরির অপবাদ দিয়ে এক নারীর চুল কেটে দেওয়া ও মারধরের ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আলামত সংগ্রহসহ তদন্ত শুরু করে পুলিশ। এ ঘটনায় বাদীর দেওয়া এজাহারনামীয় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অন্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

এএটি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান