‘শহীদ জিয়া এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক’

অনিন্দ্য ইসলাম অমিত | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০২:১৫, মে ৩০, ২০২৫
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম

শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বীর উত্তম বাংলাদেশের ইতিহাসে এক ক্ষণজন্মা রাষ্ট্রনায়ক। ১৯৩৬ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন বগুড়ার গাবতলির বাগবাড়িতে। আমাদের জাতীয় জীবনের এক সংকট সন্ধিক্ষণে তার আবির্ভাব ছিল ধূমকেতুর মতো। চতুর্দিকে যখন হতাশা গ্রাস করছিল, নেতৃত্ব ছিল দিশেহারা ঠিক সে সময় জিয়াউর রহমান সংকটে হাল ধরেন। 

তার আবির্ভাব সদ্য স্বাধীন দেশের জনগোষ্ঠীকে বিপুল সম্ভাবনার দিকে নিয়ে গিয়েছিল। জাতি তার আত্মপরিচয় খুঁজে পায়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ব্যক্তিত্বের মধ্যে ছিল এক আকর্ষণীয় শক্তি। তার সততা,দেশপ্রেম আজও মানুষকে মুগ্ধ করে। তিনি সৈনিক ছিলেন। সৈনিকের প্রখর দেশপ্রেম নিয়ে তিনি দেশগঠনে আত্মনিয়োগ করেন। 

বাংলাদেশের ইতিহাসে আর একজন নেতাকেও খুঁজে পাওয়া যাবেনা যার দিনের সূচনা হতো গ্রামে। বাংলাদেশের ৬৮ হাজার গ্রামকে এক সুতোয় গেঁথে ফেলেছিলেন জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়কে পাঠ করতে পেরেছিলেন তিনি। দেশপ্রেমিক জিয়া- এটা ছিল তার আসল পরিচয়।

ছোট ছিলাম বিধায় জিয়াউর রহমানকে নিয়ে বিশেষ কোনো স্মৃতি আমার নেই এটা ঠিক। কিন্তু বাল্যকাল থেকেই তার আদর্শ আমাকে দারুণভাবে আপ্লুত করে। আমি একটি রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছি। আমার বাবা-মা দুজনই রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে সময় অতিবাহিত করেছেন। 

আব্বা মরহুম তরিকুল ইসলাম ছিলেন জিয়াউর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর। ফলে শৈশব থেকে যার আদর্শ আমাকে প্রবলভাবে আকৃষ্ট করেছে তিনি শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। আমার ক্যাডেট কলেজে পড়াশোনা করার পেছনেও তিনি ছিলেন সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। বাল্যকাল থেকেই দেখে এসেছি আব্বা রাজনীতির জন্য ঘরের বাইরেই বেশি থাকেন। মা আব্বাকে ছায়ার মত অনুসরণ করেন। আর যে রাজনীতি আমার শৈশবকালকে আন্দোলিত করেছে তা জিয়াউর রহমানের দেশগড়ার রাজনীতি। শহীদ জিয়ার ভাবনা কর্ম ও আদর্শ এক সুতোয় বাঁধা। এরমধ্যে কোনো বৈপরীত্য ছিল না। তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে রণাঙ্গনে অংশ নিয়েছেন। এই দুটি ক্ষেত্রে একই মানুষের নেতৃত্বদান ও অংশগ্রহণ বিরল এক ঘটনা। 
জিয়াউর রহমান নিজের জন্য কিছুই করেননি। তার ব্যক্তিত্ব ও মানসভাবনা সবই ছিল স্বদেশকেন্দ্রিক। দেশের কল্যাণ চিন্তা ছাড়া আর কোনো ভাবনা তার কখনোই ছিল না। তিনি চেয়েছিলেন আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একটি স্বাধীন জাতি নির্মাণ করতে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অভ্যুদয়ের পূর্বে রাজনৈতিক নেতৃত্ব যখন আত্মসমর্পণে ব্যস্ত- তখন জিয়াউর রহমানের কণ্ঠে ঘোষিত হয়, সেই ঐতিহাসিক ভাষণ, ‘উই রিভোল্ট। আই মেজর জিয়া। ডিক্লিয়ার দ‍্য ইন্ডিপেন্ডেন্স অব বাংলাদেশ।’

স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমান থেমে যাননি। কিংবা পালিয়েও যাননি। সম্মুখসমরে লড়েছেন। মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডার হিসেবে যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আবার স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে তিনি নিজেকে উজাড় করে দিয়েছেন। 
আমরা অনেকেই দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদ খুঁজতে বিদেশের দিকে দৃষ্টি দিই। কিন্তু শহীদ জিয়াউর রহমানের মত রাষ্ট্রনায়ক থাকতে দেশপ্রেমিক ও আদর্শবাদীতার জন্য অন্য কাউকে দেখার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। জিয়াউর রহমান ছিলেন এক বিরলপ্রজ দূরদর্শী নেতা। 

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দিশেহারা জাতির সামনেও তিনি ধ্রুবতারার মত নেমে আসেন। তিনি উচ্চাভিলাষী সেনা অফিসার ছিলেন না। জাতির সংকটকালে ত্রাণকর্তার ভূমিকা পালন করেছেন। একটি স্বাধীন দেশ পুনর্গঠনে সে সময় প্রয়োজন ছিলেন সমন্বয়ের রাজনীতি। জিয়াউর রহমান সে কাজটি করেছেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই যাতে দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করতে পারে সে ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি। বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় বিশ্ব-দরবারে পরিচিতি দেন শহীদ জিয়া। তার সততা ছিল প্রশ্নাতীত। ব্যক্তি জীবনে তিনি কোনো আড়ম্বরতা মোটেই পছন্দ করতেন না। তার যাপিত জীবনের সবটুকু অবলম্বন ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে। বাংলাদেশকে আধিপত্যবাদী শক্তির বিপরীতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সম্মানের জায়গায় তিনি নিয়ে গিয়েছিলেন। 

একটি স্বাধীন জাতির জাতিসত্তা নির্মাণে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন আত্ম জাগরণ। শহীদ জিয়াউর রহমান সেই জাগরণ তৈরির এক মহাকারিগর। দেশে উৎপাদনের রাজনীতি,স্বনির্ভর অর্থনীতি,শিক্ষিত জনগোষ্ঠী- এসবই তার চিন্তাধারার ফসল। তিনি ছিলেন দূরদর্শী নেতা। বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের সমন্বয়ের রাজনীতি তার অমর কীর্তি। বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের সম্মানজনক ইমেজ তৈরি করতে তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে অপবাদ ছিল তিনি তা দূর করেন। একটি আদর্শ কল্যাণ রাষ্ট্রের দিকে যখন তিনি দ্রুত বাংলাদেশকে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই দেশি বিদেশি ষড়যন্ত্রের কারণে তাকে জীবন দিতে হয়। 

বাংলাদেশের বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় জিয়াউর রহমানের নাম মুখে নেওয়া প্রায় নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়। তাকে অসম্মান করার হেন চেষ্টা নেই যা ফ্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী করেনি। কিন্তু শহীদ জিয়ার নাম রয়ে গেছে কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ে। যেখানে পৌঁছানোর শক্তি পরাজিত ফ্যাসিবাদের ছিল না। 

এসএএইচ


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান