
মাগুরা: মাগুরায় ১০টি সিনেমা হলের মধ্যে এখন মাত্র চালু রয়েছে ২টি । সেখানেও দর্শক খুবই কম। ফলে প্রতিবছরই লোকসানের ঘানি টানছে এ দুই হলের মালিক।
সিনেমার রুচিশীল পরিবেশ, মানসম্মত সিনেমার অভাব, আকাশ সংস্কৃতির প্রভাবসহ বিভিন্ন কারণে মাগুরার অধিকাংশ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে ইতোমধ্যে।
এ অবস্থায় এ শিল্পকে বাঁচাতে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা একান্ত জরুরি বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
ক্রমাগত লোকসানের মুখে পড়ে জেলার ১০টি সিনেমা হলের ৮টিই বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া এ হলগুলো গোডাউন, দোকান, আবাসনসহ নানা কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
জেলা শহরে মোট ৩টি সিনেমা হল ছিল। এগুলো হলো পূর্বাশা, মধুমিতা ও ছায়াবাণী। এর মধ্যে সম্প্রতি ছায়াবাণী হলটি বন্ধ হয়ে গেছে। হলটি ভেঙে সেখানে বিপণি বিতান করার কথা ভাবছেন মালিকপক্ষ। পূর্বাশা ও মধুমিতা চলছে লোকসান নিয়ে।
এছাড়া, শ্রীপুর উপজেলার রাধানগর বাজার, সাচিলাপুর বাজার, শ্রীপুর সদর, লাঙ্গলবাঁধ বাজারে একটি করে সিনেমা হল ছিল যা বর্তমানে বন্ধ।
শালিখা উপজেলার আড়পাড়া বাজারের একমাত্র সিনেমা হলটি দুই বছর আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সেটি বর্তমানে মার্কেট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
মহম্মদপুর উপজেলা সদরে সিনেমা হলের একটি অবকাঠামো তৈরি হলেও সামাজিক বাধার কারণে এ হলটি আলোর মুখ দেখেনি। মহম্মদপুরের নহাটা বাজারে একটি সিনেমা হল কিছুদিন চললেও লোকসানের কারণে বন্ধ হয়ে তা বর্তমানে পাটের গুদাম করা হয়েছে।
মাগুরা শহরের ভায়নার মোড়ের ছায়াবাণী সিনেমা হল প্রসঙ্গে রমজান আলী নামে এক যুবক বাংলানিউজকে জানান, বর্তমানে মানুষের বিনোদনের জন্যে ঘরের বাইরে যাওয়ার তেমন প্রয়োজন হয় না। স্যাটেলাইটের কল্যাণে টেলিভিশনে অসংখ্য চ্যানেলের সমারহ, কম্পিউটারের মাধ্যমে ইন্টানেটে সব বিনোদনের ব্যবস্থা রয়েছে।
তাছাড়া সিনেমা হলগুলোর ভেতরের বসার ব্যবস্থাও ৩ ঘণ্টা বসে থাকার উপযোগী নয়। সাধারণ বেঞ্চে বসে দর্শকদের সিনেমা দেখতে হয়। এসব কারণে এখন আর সাধারণ মানুষ সিনেমা হলে আসতে চান না।
এদিকে, চলতি বছরের শুরু থেকে ইমপ্রেস টেলিফ্লিমের পক্ষ থেকে সুস্থ ধারার ছবির মাধ্যমে দর্শকদের হলমুখি করতে দেশের ২০টি জেলার মতো মাগুরা সদরের পূর্বাশা সিনেমা হল ইজারা নিয়ে বেশকিছু সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শণ করেছেন হল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু সেখানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত কয়েক মাসে তেমন দর্শক হলে ভিড় করেননি।
এ প্রসঙ্গে ইমপ্রেস টেলিফ্লিমের ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, “বাংলাদেশে প্রায় ৮০ ভাগ সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। ইমপ্রেস টেলিফ্লিম এর পক্ষ থেকে আমরা বন্ধ সিনেমা হলগুলো লিজ নিয়ে সেগুলো মেরামত করে সুস্থ ধারার চলচ্চিত্র প্রদর্শণের ব্যবস্থা করছি।”
“তবে সেক্ষেত্রে দর্শকদের আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। দর্শক যদি সিনেমা হলে এসে ছবি দেখেন সেক্ষেত্রে আমরা হলগুলো পরিবেশ আরও উন্নত করতে পারবো। হলগুলোতে ডিজিটাল সাউন্ড সিস্টেম, উন্নত মানের বসার চেয়ার ও এসির ব্যবস্থা করে দর্শকদের জন্যে আরও সুন্দর ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা আমাদের আছে।”
মাগুরা শহরের সৈয়দ আতর আলী সড়কে অবস্থিত মধুমিতা সিনেমা হলের মালিক বাবর আলী বাংলানিউজকে বলেন, “স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে চায়ের দোকান থেকে শুরু করে মুদি দোকানে পর্যন্ত সিনেমা দেখানো হচ্ছে। ভিডিও পাইরেসির মাধ্যমে বাংলা সিনেমাগুলোর সহজ লভ্যতা করে এ সমস্ত চ্যানেলে দেখানোর ফলে আমাদের দর্শক কমে যাচ্ছে।
“যেকারণে সিনেমা হলের ব্যবসায় বর্তমানে আমরা উভয় সংকটে আছি। দর্শক না থাকায় হলগুলো চালাতে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। অপরদিকে প্রচুর পরিমাণ লগ্নি করার কারণে আমরা ব্যবসা ছাড়তেও পারছি না।”
মাগুরা পূর্বাশা সিনেমা হল চত্বরে পানের দোকানদার রওশন আলী বাংলানিউজকে জানান, আগে হাজার হাজার মানুষ সিনেমা হলে এসে সিনেমা দেখতেন। বিভিন্ন এলাকা থেকে বাস টেম্পু ভাড়া করে মানুষ সিনেমা দেখতে মাগুরায় আসতেন। এখন আর সেরকম দেখা যায় না।
শহরের ভায়না এলাকার ব্যবসায়ী দুলাল শেখ (৬০) জানান, তিনি এক সময় মাগুরা শহরের ৩টি প্রেক্ষাগৃহে আসা ছবি প্রতি সপ্তাহে নিয়মিত দেখতেন। অনেক সময় সিনেমা দেখতে পাশের জেলা ঝিনাইদহ ও যশোরের মনিহার প্রেক্ষাগৃহে চলে যেতেন। এমন অনেক সিনেমা আছে তিনি ৫ থেকে ১০ বার দেখেছেন। কিন্তু গত প্রায় ১৫ বছর হলো কোনো ‘হলে’ গিয়ে সিনেমা দেখেন না।
এর কারণ হিসেবে তিনি জানান, আগেকার দিনের পরিবারিক কাহিনী নির্ভর সিনেমা তৈরি হতো। কিন্তু এখন সে ধরনের ভালো ছবি দেখাই যায় না। তাছাড়া বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রতিদিন একাধিক সিনেমা দেখানো হয়। যার কারণে তিনি ঘরে বসেই তা উপভোগ করেন।
এ প্রসঙ্গে মাগুরা জেলা তথ্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বাংলানিউজকে জানান, মূলত সিনেমা হলগুলোর পরিবেশ, সিনেমার দর্শকদের রুচি অনুযায়ী ছবি তৈরি করতে না পারা এবং নগ্নতার কারণে সিনেমা হলে দর্শক কমে গেছে।
তবে, হুমায়ুন আহমেদের ছবিসহ সুস্থ ধারার কাহিনী নির্ভর সিনেমা দেখতে এখনও এ হলগুলোতে ব্যাপক দর্শক সমাগম ঘটে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে শ্রাবণ মেঘের দিন।
পাঠক আগামীকাল বুধবার পড়ুন মেহেরপুরের একমাত্র সিনেমা হলের প্রতিবেদন।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১২
সম্পাদনা: প্রভাষ চৌধুরী ও মাহাবুর আলম সোহাগ, নিউজরুম এডিটর