দেয়ালে দেয়ালে দ্রোহ-প্রতিবাদ

দেলোয়ার হোসেন বাদল, সিনিয়র ফটোকরেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৬:০২, আগস্ট ১৪, ২০২৪
রং-তুলিতে গ্রাফিতি। ছবি: ডিএইচ বাদল

রং-তুলিতে গ্রাফিতি। ছবি: ডিএইচ বাদল

কেউ দেয়াল ঘষে পরিষ্কার করছেন, কেউবা সেখানে রঙের প্রলেপ দিচ্ছেন। কেউবা সেই প্রলেপ দেওয়া জায়গায় আঁকছেন লাল-সবুজের পতাকা। কেউ আবার ব্যস্ত স্লোগান লেখায়। রাজধানীর দোয়েল চত্বর, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা, জগন্নাথ হল, ফুলার রোড, ভিসি চত্বর, টিএসসি, শাহবাগ ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।



ছাত্র-জনতার বিক্ষোভে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বহু ভবনের দেয়াল, সীমানাপ্রাচীর, সড়কদ্বীপ, মেট্রো রেলের স্তম্ভ, উড়াল সড়কের স্তম্ভে গ্রাফিতি আঁকছেন শত শত শিক্ষার্থী।

এসব গ্রাফিতিতে অভ্যুত্থানে প্রাণ হারানো ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও তাদের প্রতি শ্রদ্ধার পাশাপাশি উঠে এসেছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, সমাজের-রাষ্ট্রের সংস্কার, ঘুষ-দুর্নীতি বন্ধ করা, স্বৈরতন্ত্রের অবসান, বাক-স্বাধীনতা, সম-অধিকার থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ আর প্রতিরোধের অগ্নিময় উক্তি, গান ও নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নের কথা।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এলাকার দোয়েল চত্বর মোড়ে গেলেই প্রথমেই চোখে পরবে ‘তোমার ভয় নেই মুগ্ধ আমরা প্রতিবাদ করতে জানি’ আমি সুপার বাংলাদেশ’ শহীদ মিনার এলাকার পথ ধরে এগোতে থাকলে নজরে আসবে ‘জুলাই আমার আহংকার’ পানি লাগবে পানি??? বুক পেতেছি গুলি কর, আয়নাঘর, চোখের পানি সঞ্চয় করলে দীঘি বানানো যেতো, কারো বাপের প্রয়োজনে আসি নাই, রক্তে কেনা বাংলাদেশসহ রং-বেরঙের নানান গ্রাফিতি।



ঢাবির উপাচার্যে বাস ভবনের সামনের দেয়ালগুলো অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গ্রাফিতি আঁকছিলেন ইশরাত জাহান, আবরার হাফিজ, রানাসহ অনেকেই।  রয়েছে উদয়ন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরাও। তাদের দেয়ালে আঁকা গ্রাফিতিতে দেখা যাচ্ছে,নতুন দিনের নতুন সূর্য, জাগ্রত হউক বাংলাদেশ,বল বীর চির উন্নত মম শির,শিক্ষক রাজনীতি নিপাত যাক, মেধা পাচার থেমে যাক, ছাত্ররাজনীতি নিপাত যাক,শিক্ষাঙ্গন মুক্তি পাক।



ফুলার রোডের শিক্ষকদের আবাসিক এলাকার দেয়ালে লেখা চলো রাষ্ট্র সংস্কার করি, অরুণ প্রাতের তরুণ দল, মনে হয় রক্তই সমাধান বারুদই অন্তিম তৃপ্তি। এমন নানা উক্তিসহ গ্রাফিতিতে বর্ণিল পুরো রাজধানী।



টিএসসি মিলনায়তনের দেয়ালে সব চেয়ে বেশি শোভা পেয়েছে দুটি গ্রাফিতি। যেখানে আঙুল তুলে দেখিয়ে দিচ্ছে, বিকল্প কে? আমি, তুমি, আমরা, অন্যটি শোন ধর্ম আর দেশকে মিলাইতে যায়ো না, পড়ে ফুলের নাম কি দিবা ফাতেমা চূড়া? পরে কারা যেন নিচের লাইনটি মুছে দিয়ে লিখেছে ধর্মকে ধর্মের সামনে দাঁড় করিও না।



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আইইবি, মুন্সী আবদুর রউফ কলেজ,নুর মোহাম্মদ কলেজ, ব্রাক, ইউআইও, বিসিএসআইআর, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান,  গ্রাফিতি আঁকার জন্য উজালা ও ডিলাক্স পেইন্ট রং সরবরাহ করছে। কিন্তু নাস্তা, পানি, খাবার, তুলিসহ আঁকার সরঞ্জাম কিনে মেতে উঠেছেন দেয়াল পরিষ্কার করে গ্রাফিতি লেখাসহ নানা পঙ্ক্তি লেখার কাজে। যাবতীয় খরচ তাদের নিজেদের টাকা জোগাড় করে খরচ করছেন। ইতোমধ্যে তারা, শাহবাগ সায়েন্সল্যাব,কাটাবন,বাটা সিগন্যাল, ভিসি মোড় শেষ করে রোকেয়া হলের দেয়ালে গ্রাফিতি আঁকছেন। 

তারা বলেন, নিজেদের পকেটের টাকা খরচ হলে তৃপ্তি পাই। কারণ আমরা ইতিহাস গড়তে চাই। দুর্নীতিমুক্ত, স্বৈরাচারমুক্ত নতুন বাংলাদেশ দেখতে চাই। শিক্ষার্থীরা সকাল ১০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত টানা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ প্রতিরোধ গ্রাফিতি আঁকতে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০২ ঘণ্টা, আগস্ট ১৪, ২০২৪
এএটি


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান