ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল কোটা আন্দোলনে নিহত তামিমের

সুজন বর্মণ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:২৩, জুলাই ৩১, ২০২৪

নরসিংদী: তাহমিদ ভুঁইয়া তামিম (১৫) ক্রিকেট খেলতে খুব ভালোবাসতো। লেখাপড়ার পাশাপাশি সবসময় ক্রিকেট খেলা নিয়ে মেতে থাকতো। স্বপ্ন দেখতো দেশের স্বনামধন্য ক্রীড়া প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে ভর্তি হওয়ার। এবং নিজেকে দেশের একজন বড় ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলবে। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

গত ১৮ জুলাই ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদী শহরের জেলখানার মোড়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় রাবার বুলেটের আঘাতে ঘটনাস্থলেই মারা যায় তামিম।

নিহত তামিম সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়ার ছেলে। সে নরসিংদীর নাছিমা কাদির মোল্লা হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল। পল্লী চিকিৎসক বাবা ও গৃহিণী মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিল তামিম।

তামিমদের বাড়ি ঘটনাস্থল জেলখানার মোড় থেকে ৫০০ গজ দূরে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, তারা টিনশেড পাকা বাড়িতে বসবাস করে। বাড়িতে একেবারে সুনসান নিরবতা। তামিমের মৃত্যুর পর তার মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাড়ির সদস্যরা সাংবাদিকদের নিকট দূরত্ব বজায় রাখছেন। তারা কোনো কথা বলতে চাইছেন না।

তামিমের স্বজনেরা জানায়, ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার দুপুরে পরিবারের সবাই একসঙ্গে দুপুরের খাবার খেয়েছেন। পরে বিছানায় শুয়ে তাহমিদ ও তার ছোট বোন লিনাত মুঠোফোন নিয়ে খেলছিল। একপর্যায়ে তাহমিদ ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। এ সময় মা রান্নাঘরে কাজ করছিলেন। পাশের ঘরে ঘুমাচ্ছিলেন বাবা। 

পরে তামিম জেলখানার মোড়ে গিয়ে আন্দোলনকারীদের কাছে যায়। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া চলছে। চলছে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও গোলাগুলি। একপর্যায়ে তামিম রাবার বুলেটে বিদ্ধ হয়। আন্দোলনরতরা গুলিবিদ্ধ তামিমকে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তারপর স্ট্রেচারে করে লাশ নিয়ে আন্দোলনস্থলে নিয়ে আসে আন্দোলনকারীরা।

এদিকে তামিমকে খুঁজতে তার বাবা-মা জেলখানার মোড়ে আসেন। তারা ভিড়ের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পায়নি। পরে ছেলেকে না পেয়ে মা বাড়িতে গিয়ে দেখতে পায় ছেলের মরদেহ আন্দোলনকারীরা নিয়ে এসেছে। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

তামিমের ফুফা লুৎফর রহমান বলেন, তাহমিদ ছোট থেকেই মেধাবী ছিল। সে একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে পড়তো। পরে তার মধ্যবিত্ত বাবার পক্ষে সেই খরচ কুলিয়ে উঠতে না পারায় তাকে এনকেএম স্কুলে ভর্তি করায়। সে লেখাপড়ার পাশাপাশি ক্রিকেট ভালোবাসতো। সে ভালো খেলতেও। স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ার, তার সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না।

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক এ এন এম মিজানুর রহমান বলেন, রাবার বুলেটে বিদ্ধ তামিমকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। তাকে মৃত ঘোষণা করার পরপরই উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালে ভাঙচুর করে। আমরা চেয়েছিলাম, তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠাতে। শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে আমরা সেটা পারিনি।

তামিমের বাবা রফিকুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরদেহের ময়নাতদন্ত করার জন্য বলা হয়েছিল। তবে আমি রাজি হইনি। সবার সামনেই গুলি করে ছেলেকে মারা হয়েছে, ময়নাতদন্ত করে আর কী হবে? আমার ছেলেকে তো আর ফেরত পাব না। পরে বৃহস্পতিবার রাতে তামিমের স্কুলে ও স্থানীয় ঈদগাহে দুই দফা জানাজা শেষে চিনিশপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২২ ঘণ্টা, জুলাই ৩১, ২০২৪
এসএম


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান