
সমবেত দীর্ঘশ্বাস
একটি বুড়ো বটকে সাক্ষী রেখে নদী বলেছিল-‘আবার যদি ভালোবাসা হয়’
হতে পারে- এমন আশ্বাস দিয়েছিল আকাশ। আমি আকাশের পড়শি ছিলাম।
থাকতাম পাশের ফ্লাটে, জীর্ণ চাঁদের ছায়ায়।
আমি- তোমাকে ভালোবাসি, সেকথা কোনোদিনই বলতে পারিনি।
জানি অনেক ভালোবাসার কথা জানানো যায় না,
অনেক ফাঁকি দেয়া দুপুর ধরা পড়ে না জেলেদের জালে।
সমবেত দীর্ঘশ্বাসের মতো, ঢেউগুলো যখন হারায় ভোরের আড়ালে।
মাফলার
ওম দেবে বলে আমাদের গলা পেঁচিয়ে রেখেছে বিশ্বব্যাংক। পশমী
উলের ভেতর লুকিয়ে আছে আই. এম. এফ.- এর ট্যাগ। ঋণের অহংকার
নিয়ে আমরা নির্মাণ করছি নতুন আরেকটি মধুমতি সেতু। এর আগে
নৌকা বেয়ে নদী পাড়ি দিতেন যে মাঝি, তিনিও এখন মাজদা গাড়ি
কেনার স্বপ্ন দেখছেন। গলা ঝেড়ে পিতামহও পরখ করছেন বুকের
হলুদ কফ। দেনার প্রতি আপাততঃ কোন ক্ষোভ নেই। ঋণের বোঝা
এভাবেই না হয় সমৃদ্ধ করুক তিন পুরুষের দায়বসতি।
বাড়ি
অনেক আগেই গ্রহ থেকে মুছে গেছে চিঠির প্রচলন। ঠোঁটে অক্ষর
নিয়ে উড়ে যেতো যে পাখি, তার জন্য আর অপেক্ষা করে না বুকের
চলনবিল। শাপলা ফোটা ভোরের বিনয় এখন আর গুণে রাখে না
প্রেমের নামতা। মরচে ধরা পেরেক দেখে আমরা জেনে যাই, ঘরটির
পুননির্মাণ দরকার। ক`টি বেডরুম হবে, কিংবা ক`টি বাথরুম, তা
নির্ধারণ করে দেয় গুগল ডট কম। ঠিকানা এখন এ্যাট দ্যা রেট।
আলাপন ভুলে গিয়ে রাতের সাথে সমবেত জোনাকীরাও সেরে নিচ্ছে
গুচ্ছ গুচ্ছ এসএমএস বিনিময়।
শিকল
এ নগরে আর কোনোদিনই ফুটবে না ফালগুনের ফুল। বসন্তের বিকেলকে
কাছে টেনে কোনো প্রেমিকা তুলবে না সুর, হাতের সেতারে। বিষয়গুলো
জানার পর একজন বৃদ্ধা কেবলই হাসতে থাকেন। তৈলবিদ সমাজকর্মীরা
এগিয়ে আসেন তার সাহায্যার্থে। এবং বলেন, মানসিক চিকিৎসা দরকার।
ডাক্তার আসার পর বাকরুদ্ধ বৃদ্ধা শুধুই তাকিয়ে থাকেন। ডাক্তার দেখেন,
বৃদ্ধার দুহাতে জমে আছে চল্লিশ বছরের কালো জিঞ্জিরের দাগ।
উপজাতি
গাছের ভেতরে গাছ। টবের ভেতরে টব। নিজস্ব রং, রূপ সবই আছে।
তবু অন্য গাছে জন্মায় বলে আমরা তাকে বলি পরগাছা অথবা পালিত
বনসাই। মানুষ কোনো রাষ্ট্রে কখনওই পরমানব-পরমানবী নয়। কিংবা
যে নদী আমাদের সুখ অথবা দুঃখ বয়ে যায়, তার বুকে দেখি না কোনো
আদিবাসী জলের ঢেউ। তবু মাটি ভোগে, আমরা বার বার বিভক্ত করি
আমাদের জাতিসত্তা। একই সূর্যের আলো থেকে কিছু মানুষকে বঞ্চিত
করার জন্য প্রত্যহ খুলে বসি নগ্ন রাজনীতির খাতা।
ভাষাবিন্দু
আমাদের অর্জিত অহংকার কয়েক ফোঁটা বৃষ্টির ধ্বনি। পাখির সাথে
সবুজের কথোপকথন। ‘ভালো আছি প্রিয় নদী’- সম্বোধনে ভরাট বসন্তে,
সুরমায় পা ভেজানো কিশোরীর উচ্ছ্বাস। ভুলের গর্বিত নায়ক-নায়িকা
হয়ে বেঁচে থাকা আমাদের এক ধরনের সুখ। ভুল পথে হেঁটে যাওয়া
বাউল, যে পলাশ-শিমুল দেখে লাল রঙের বন্দনা গায়, আমরা হয়ে থাকি
তারও মুগ্ধ শ্রোতা। সূর্যের দিকে মুখ করে যে ফুল ফুটে থাকে পূর্বাচলে,
আমাদের ঘর জুড়ে মেঘ নামে মধ্যরাতে - ঘন এক ছায়ার বদলে।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১২