বৃহস্পতিবার ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের ডাক

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:৫৩, জুলাই ১৭, ২০২৪

ঢাকা: কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষাথীদের ‘মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে অবমাননাকর বক্তব্যের’ প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ আহ্বান করা হয়েছে।

মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আয়োজনে এদিন বিকেল ৩টায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।

বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এই ঘোষণা দেন।

সমাবেশের বিস্তারিত তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেন, কোটাবিরোধী আন্দোলনের আড়ালে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত প্রতিহত করা এবং হত্যা, নাশকতা, অরাজকতা, অগ্নিসংযোগ প্রতিহত করার লক্ষ্যে স্বাধীনতার পক্ষের সব শ্রেণি-পেশার জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে তাদের প্রতিহত করার লক্ষ্যে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় মুক্তিযোদ্ধা শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের উদ্যোগে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, শ্রমিক, কর্মচারী, পেশাজীবী, বুদ্ধিজীবীসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী জনগণের এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। 

সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক, সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আসাদুজ্জামান খান ও অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধা এবং শ্রমিক-কর্মচারী নেতারা। সমাবেশে দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে উপস্থিত হওয়ার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।  

লিখিত বক্তব্যে শাহাজান খান বলেন, সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্য কোটা বাতিল, পরবর্তীতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকদিন যাবৎ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এই আন্দোলন করতে গিয়ে তারা রাস্তা অবরোধ, যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি, তথাকথিত ‘বাংলা ব্লকেড’ নামে কর্মসূচি পালন করে জনগণকে জিম্নি করাসহ জনদুর্ভোগ বাড়াচ্ছে। দেশের মানুষের জনজীবন বিপন্ন করে তুলেছে। 

তিনি বলেন, তারা স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উচ্চারিত শ্লোগান ‘তুমি কে আমি কে-বাঙালি বাঙালি’ শ্লোগানকে বিকৃত করে ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার’ শ্লোগান দিয়ে স্বাধীনতা সংগ্রামকে কটাক্ষ করেছে। 

শাজাহান খান আরও বলেন, ২০১৮ সালে কোটা বাতিলের দাবিতে পারিচালিত আন্দোলনের সময় তারা প্ল্যাকার্ড করেছিল, ‘আমি রাজাকার, আমার পিতা শেখ মুজিব।’ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমরা বিস্মিত হই এই ভেবে যে, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও দুই লক্ষাধিক মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে যারা নিজেদের রাজাকার বলতে গৌরববোধ করে তারা কি বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে। নাকি সরকারকে বিপদে ফেলার জন্য একটি বিশেষ মহলের নীল নকশা বাস্তবায়নে কাজ করছে।

তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে কোটা সংরক্ষণ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের উপর চার সপ্তাহের স্থিতাদেশ দিয়েছে আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের এই আদেশের পরে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের কোনো কার্যকারিতা বর্তমানে নেই। এরপরও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলমান থাকার যৌক্তিকতা নেই। এই আন্দোলনের ওপর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি ভর করেছে। 

শিক্ষার্থীরা কার বিপক্ষে আন্দোলন করছে প্রশ্ন করে শাজাহান খান বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আদেশ তো তাদের পক্ষেই আছে। এরপরে আন্দোলন চলমান থাকা প্রমাণ করে রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে হাসিলের জন্য কোনো গোষ্ঠী বা মহল এই আন্দোলনকে উস্কানি দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন চলমান রাখায় সাধারণ জনগণের ভোগান্তি বাড়ছে। জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনগণ এই আন্দোলনের কাছে জিম্মি হয়ে পড়লে তরুণ শিক্ষার্থীদের ওপর তারা আস্থাহীন হয়ে পড়ছে। একটি চিহ্নিত রাজনৈতিক মহল শিক্ষার্থী ও জনগণের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করে ফায়দা লোটার অপচেষ্টা করছে। আমরা বিশ্বাস করি না, কোমলমতি সব শিক্ষার্থী দেশের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করতে চায়। যারা শুধু রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তারাই আদালতের নির্দেশনাকে উপেক্ষা করে শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করছে। যা অবৈধ ও বেআইনি।
 
বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান খান বলেন, গত দুইদিন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নাশকতা, নৈরাজ্য ও অরাজকতা দেখেছি। তারা বিভিন্ন ছাত্রাবাসে হামলা করে অনেক কক্ষ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। ছাত্র-শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করেছে। নিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। গতকাল শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারী ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরের ইন্ধনে ছয়জন নিহত হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে। তারা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করেছে। আমরা মনে করি কোমলমতি ছাত্রদের কাঁধে ভর দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক কুচক্রি মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অগ্রসরমান বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা ব্যহত করাসহ সার্বিক পরিস্থিতি ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই, মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোনো অপমান বাঙালি জাতি সহ্য করবে না। বাঙালি জাতি বাংলাদেশে স্বাধীনতার পরাজিত অপশক্তির কোনো প্রকার অপতৎপরতা ও আস্ফালন মেনে নেবে না। একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী একজন মানুষও বেঁচে থাকতে শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে স্বাধীনতার পরাজিত অপশক্তির অপতৎপরতা প্রতিরোধ করবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সোনার বাংলা এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করবো। 

কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রতি আস্থা রেখে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, মনে রাখতে হবে একটি বিশেষ মহল এই আন্দোলনের ওপর ভর করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাদের অসৎ উদ্দেশ্যে যেন সফল না হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগ নেতা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, মহিউদ্দিন খান আলমগীরসহ মুক্তিযোদ্ধারা বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৪
এমআইএইচ/এইচএ/


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান