
ঢাকা: মুক্তিযোদ্ধা কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিলের মৃত্যুতে তার স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন তার ঘনিষ্ঠ সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও রাজনীতিকরা। একবাক্যে তারা বলেছেন, শাফায়াত জামিল শুধু দক্ষ সামরিক কর্মকর্তাই ছিলেন না, তিনি ছিলেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এক বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে যারা পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন, তাদের অন্যতম ছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি তার অবিচল আনুগত্য ও বিশ্বাস ছিলো। এ কারণেই তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নিতে সোচ্চার হয়ে ওঠেন।
শাফায়াত জামিলের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার কর্নেল (অব.) শওকত আলী বাংলানিউজকে বলেন, “কর্নেল শাফায়াত জামিল একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও দক্ষ সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।”
শওকত আলী জানান, শাফায়াত জামিল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে গঠিত ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অধীনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিদ্রোহ করে মুক্তিযুদ্ধ শুরু করেন। খালেদ মোশাররফের অধীনে শাফায়াত জামিল সহ-অধিনায়ক ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীন দেশে তিনি সেনাবাহিনীতে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ঢাকা ব্রিগেডের কমান্ডারের দায়িত্ব পান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড তিনি মেনে নিতে পারেননি। তখন বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা তাকে ব্রিগেড থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা চালায়।
এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে খালেদ মোশাররফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন শাফায়াত জামিল। এরপর ৩ নভেম্বর সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণে খালেদ মোশাররফকে তিনি সহযোগিতা করেন। ৭ নভেম্বর ঘাতকদের পাল্টা সামরিক পদক্ষেপে খালেদ মোশাররফ, কর্নেল হুদা, লেফটেন্যান্ট জেনারেল হায়দার নিহত হন। শাফায়াত জামিল বন্দি হন। সৈনিকদের চাপে ক্ষমতাসীন জিয়াউর রহমান তাকে মুক্ত করতে বাধ্য হন। তখন থেকেই তিনি অবসর জীবনযাপন করে আসছিলেন।
ডেপুটি স্পিকার বলেন, “আমি তার মৃত্যুর খবরে খুবই মর্মাহত হয়েছি। তিনি আমার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বর্তমানে আমি ঢাকার বাইরে। তার মৃত্যুর খবর পেতে আমার দেরি হয়েছে। আমি তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।”
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, “কর্নেল শাফায়াত জামিল একজন দক্ষ ও সাহসী সেনাকর্মকর্তা ছিলেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি তিনি বিশেষভাবে অনুগত ছিলেন।”
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কর্নেল শাফায়াত জামিল খুনিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। এ সময় তিনি ঢাকার ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। পরে তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
তোফায়েল আহমেদ প্রয়াত শাফায়াত জামিলের ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণ করে বলেন, “শাফায়ত জামিল আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। ঢাকার আগে তিনি রাজশাহীর ব্রিগেড কমান্ডার ছিলেন। আমি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ছিলাম। সেই হিসেবে তার সঙ্গে আমার প্রায়ই যোগাযোগ হতো। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তিনি একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তা, সর্বোপরি একজন সাহসী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তার অবদান জাতি দীর্ঘ দিন স্মরণ রাখবে।”
সাবেক সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল (অব.) কেএম শফিউল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “৭১-এ যারা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন কর্নেল শাফায়াত জামিল ছিলেন তাদের অন্যতম। শুধু তাই নয়, তিনি প্রতিশোধ নিয়েছিলেন।”
তিনি জানান, শাফায়াত জামিল ২৭ মার্চ বিদ্রোহ করে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে তার ব্যাটেলিয়ন নিয়ে বেরিয়ে আসেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৫ নং সেক্টরে আসেন।
তিনি বলেন, “স্বাধীনতার পর তিনি ব্রিগেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। একজন নিষ্ঠাবান, দেশপ্রেমিক সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন তিনি। তার বিদেহী আত্মার প্রতি আমি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।”
বাংলাদেশ সময়: ২১৪৭ ঘণ্টা, আগস্ট ১১, ২০১২
এসকে/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর, আহমেদ রাজু, চিফ অব করেসপন্ডেন্টস; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]