‘মৃত্যুই হুমায়ূনকে মহান করেছে’

সাব্বির আহমেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৫৭, আগস্ট ৬, ২০১২

সিলেট: হিমু আর মিসির আলীর সমাবেশে ভরে গেছে মিলনায়তন। পেছনে দেয়ালের ছবি হয়ে হুমায়ূন আহমেদ যেন দেখছেন হিমু মিসির আলীদের। মিলনায়তন ভর্তি এই হিমু মিসির আলীদের মনে শোক নেই। হুমায়ূন যে শোক পছন্দ করেন নি। তাই স্মরণ স্মরণে অশ্রুসজল নয়নে মহান ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন চলছে। তারা বলছেন- ‘মৃত্যুই হুমায়ূনকে মহান করে দিয়েছে’।

সোমবার দুপুরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(শাবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে হুমায়ূন আহমেদের স্মরণ সভায় সমাবেশ ঘটেছিল হাজারো হিমু আর মিসির আলীদের। শুধু ছাত্রছাত্রীরাই হিমু মিসির আলী সাজেনি, খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও খালি পায়ে হলুদ পাঞ্জাবি পরে হয়েছিলেন হিমু।

স্মরণ সভায় যোগ দেন  হুমায়ূন আহমদের মা আয়েশা ফয়েজ, সাবেক স্ত্রী গুলকেতিন ও মেয়ে শিলা, বিপাশা আহমেদসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা।

সভায় বক্তব্যে হুমায়ূন আহমেদের ছোটভাই ও প্রফেসর ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন,  ‘১৯৪৮ সালে যেদিন ইংল্যান্ডের প্রিন্স চার্লসের জন্ম হয়েছিল সেদিন জন্ম নিয়েছিলেন হুমায়ূন আহমেদও। বিশ্বের সকল মিডিয়ায় প্রিন্স চার্লসের জন্মের খবর ফলাও করে ছাপা হলে তাদের বাবা বলেছিলেন আমার ছেলের জন্মটা বিখ্যাত হচ্ছে কি? হুমায়ূন আহমেদের মা বলেছিলেন, দেখবে একদিন আমার ছেলে সারাদেশের গর্ব হয়ে গড়ে উঠবে।’

এ দিনের জন্য বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি হুমায়ূনকে এমনটাই উল্লেখ করে কথা সাহিত্যিক আনিসুল হক বললেন, মাত্র ২৪ বছর বয়সে নন্দিত নরকের উপন্যাস থেকে শুরু করে তিন যুগ পর্যন্ত তিনি জনপ্রিয়তার চূড়ায় আসন গড়েছিলেন। যা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল। তার সৃষ্টিকর্মের জন্য মৃত্যুর পর তিনি মহান হয়ে উঠেছেন।

এতো মানুষ মিসির আলী আর হিমু ভক্ত হতে কেন চায় তা বুঝতে পারা যায় কথা সাহিত্যিক জফির সেতুর বক্তব্যে।

আলোচকের বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ১৮ বছর আগে সেই কিশোর বয়সে তিনি গ্রাম থেকে দূরে দেড় কিলোমিটার হেঁটে এসে একমাসে হুমায়ূন আহমেদের ৩৩ টি বই পড়েছিলেন।

হুমায়ূন আহমেদের মাধ্যমেই বই পড়া শুরু হয়েছে অনেকের এমন কথাই জানা গেল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেওয়া অর্থনীতি বিভাগের ছাত্র শাব্বিরের কণ্ঠে- ‘প্রাইমারিতে একটি প্রতিযোগিতায় পুরস্কার হিসেবে পাওয়া হুমায়ূন আহমেদের ‘আমি মিসির আলী’- উপন্যাসটি আমার জীবনের প্রথম পাঠ্যপুস্তকের বাইরে পড়া কোনো বই।’

তার মতো আরো অনেকের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছে হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে যেমনটি বললেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করা হুমায়ূন আহমেদের ছাত্রী শাবিপ্রবির রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. রোকশানা বেগম।

বক্তব্যে ড. রোকশানা বলেন, ‘এক দফায় হুমায়ূন আহমেদের বই পড়া শেষ করলে স্যারের প্রতি এতো শ্রদ্ধা ছিলো যে তাকে বলতে পারিনি স্যার আমি আপনার লেখা উপন্যাস পড়েছি।’

শাবি’র কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. ইলিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস তার বক্তব্যে বলেন, হুমায়ূন আহমেদ যেখানেই হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। শিক্ষাজীবনেও মেধার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। ২০০০ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরণে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে সপরিবারে এসে অনশনও করেছিলেন তিনি।

মেয়ে শীলা আহমেদ তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, ‘লেখক বাবার সন্তান হিসেবে বাবার মৃত্যুর পর মানুষের যে ভালবাসা দেখেছি তাতে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে।’

অনুষ্ঠানে বক্তব্যে শাবি উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদ চিরদিন মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকবেন। বাংলাদেশে এমন কোনো বাড়ি ঘর নেই যেখানে হুমায়ূন আহমেদের ৫/৭ টি বই পাওয়া যাবে না।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রফেসর ইয়াসমিন আহমেদ বলেন, আমেরিকায় ছাত্রীথাকা অবস্থায় হমায়ূন আহমেদের পরিবারের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ার আগে পরিচয় হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে। জাফর ইকবালের দাদা ভাই হিসেবে তাকে তখন দাদা ভাই হিসেবে ডাকতেন তিনি।

দাদা ভাইয়ের হাত ধরে আমেরিকায় ঘুরে বেড়ানো এখন শুধুই স্মৃতি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১৯ জুন যখন নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে হুমায়ূন আহমেদের জীবন ক্রমশ অবনতির দিকে যাচেছ তখন গুলতেকিন কান্না জড়িয়ে তাকে ফোনে বলেছিলেন, ইয়াসমিন তুমিই আমেরিকায় হুমায়ূন আহমেদকে প্রথম বরণ করেছিলে, তুমিই আবার বিদায় দিচ্ছো।’

স্মরণ সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ভিসি সুশান্ত কুমার দাস, কথা সাহিত্যিক প্রশান্ত মৃধা, শাবির সহকারী অধ্যাপক মুহাম্মদ শফিকুল ইসলাম, হুমায়ুন আহমদ স্মরণ সভা কমিটির আহবায়ক ও ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইউনুছ প্রমুখ।

স্মরণসভার ফাঁকে ফাঁকে হুমায়ুন আহমেদের লেখা ও পছন্দের গানগুলো পরিবেশন করা হয়। এছাড়া অনুষ্ঠানে মধ্যভাবে সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের সাক্ষরিত একটি শোকবই হুমায়ূন আহমেদের রত্নগর্ভা মায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৪ ঘণ্টা, ০৬ আগস্ট, ২০১২
এসএ/সম্পাদনা: বেনু সূত্রধর,নিউজরুম এডিটর; নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান