খেজুর রসের গুড় তৈরিতে ব্যস্ত গাছিরা

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১১:১৬, জানুয়ারি ৩০, ২০২৪

সিরাজগঞ্জ: শীতকালে বাঙালির রসনার রসদ যোগাতে তৈরি হয় নানা ধরনের পিঠা ও পায়েস। চালের গুঁড়া, দুধ, কলা, নারিকেল, কিসমিস দিয়ে পিঠা-পায়েস তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গুড়। 

আর সেই গুড় যদি খেজুরের রসের হয়, তাহলে সব আয়োজন পূর্ণতা পায়। তাই তো শীতকালে খেজুর গুড়ের চাহিদা বেড়ে যায়।

আর বাঙালির চাহিদার কথা ভেবেই সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়ায় তৈরি হয় প্রচুর পরিমাণে খেজুরের গুড়। শীতের শুরু থেকেই খেজুরের রস থকে গুড় তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা গুড় বিক্রেতারা। 

ভোরে গাছ থেকে রস সংগ্রহ করে বিশাল আকৃতির কড়াইয়ের মধ্যে ঢেলে জ্বাল দেন কারিগররা। কয়েক ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি করা হয় চার কোণা, ডিম্বাকৃতি, ত্রি-কোণাসহ বিভিন্ন  আকৃতির সুস্বাদু গুড়। অনেক সময় লালি/ঝোলা গুড়ও (তরল) তৈরি করা হয়। 

রায়গঞ্জ উপজেলার ধামাইনগর ইউনিয়নের বাকাই ও তাড়াশ উপজেলার মাধাইনগর ইউনিয়নের ধানকুন্ঠি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা গাছিরা গুড় তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসব অঞ্চলের প্রতিটি রাস্তার দুই পাশে বা পুকুরের ধারে শোভা পাচ্ছে শত শত খেজুর গাছ।

গাছিরা জানান, শীত মৌসুম শুরুর আগে পাঁচ-ছয়জনের একটি দল তৈরি করে এ এলাকায় আসেন তারা। খেজুর গাছের মালিকদের গাছ প্রতি তিন/চার কেজি করে গুড় দেওয়ার শর্তে গাছ লিজ নিয়ে পরিচর্যা করতে থাকেন তারা। শীত পড়তেই তারা প্রতিদিন সন্ধ্যায় গাছে হাঁড়ি বা কলসি বেঁধে দেন। মিষ্টি রসে হাঁড়ি ভরে গেলে সকালে হাঁড়ি নামিয়ে রস জ্বাল দিয়ে সুস্বাদু ও হরেক রকমের গুড় তৈরি করেন। একটি দল প্রতিদিন প্রায় দুই থেকে আড়াই মণ গুড় তৈরি করেন। গুণগত মান ভালো থাকায় স্থানীয়দের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে গুড় কিনে যান।

কথা হয় একরাম হোসেন, রুহুল আমিন, কাজল, হাবিবুর রহমান ও খায়ইরুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন গাছির সঙ্গে। তারা বলেন, শীতের আড়াই মাস আগে এসে মালিকদের কাছ থেকে খেজুর গাছ লিজ নেওয়া হয়। শীত শুরু হলে রস সংগ্রহ করা হয়। প্রতিদিন ভোরে গাছ থেকে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। এরপর বড় কড়াইয়ে/ডিঙ্গিতে জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করা হয়। মান ভালো ও সুস্বাদু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাইকাররা এসে গুড় কিনে নিয়ে যান। বর্তমানে দেড়শ থেকে আড়াইশ টাকা কেজি দরে গুড় পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে।

ধামাইনগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য নিপেন্দ্রনাথ মাহাতো, স্থানীয় বাসিন্দা মাহমুদ হাসান, আসলামসহ অনেকেই বলেন, খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে তৈরি পিঠা-পায়েস অত্যন্ত সুস্বাদু। আত্মীয়-স্বজনদের এ গুড় দিয়ে তৈরি করা দুধের পিঠা ও পায়েসসহ নানা রকম মুখরোচক খাবার তৈরি করে আপ্যায়ন করা হয়। এছাড়া খেজুরের গুড় দিয়ে রুটি খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে এ অঞ্চলে। খেজুরের গুড় দিয়ে দই-চিড়াও খেতে মজা। 

সিরাজগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর জানান, খেজুরের গুড়ের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এজন্য খেজুর গাছ লাগাতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে কাঁচা রস পান না করারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০২৪
এসআই


 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান