জ্যোতি বসুর স্মৃতি বিজড়িত বারদী

তানভীর হোসেন, জেলা প্রতিনিধি | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৬:৩৯, জুলাই ৮, ২০১২

নারায়ণগঞ্জ : ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন আজ। ১৯১৪ সালের ৮ জুলাই কলকাতার ৪৩/১, হ্যারিসন রোডের বাড়ীতে জন্ম নেন জ্যোতিবসু। তাঁর বাবা ডা. নিশিকান্ত বসুর জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও থানার বারদীতে। উপমহাদেশের কমিউনিষ্ট আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা ও বামপন্থী রাজনীতির প্রবাদ পুরুষ খ্যাত জ্যোতি বসুর ছোটবেলার অনেকটা সময়ই কেটেছে বারদীর  পৈত্রিক বাড়িতে।

২০১০ সালের ৬ জানুয়ারি জ্যোতি বসু মারা যান। এরআগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত আগ্রহে জ্যোতি বসুর স্মৃতিবিজড়িত বাড়িটি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পুরাকীর্তি বিভাগের তত্ত্বাবধানে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। বাড়িটি সংস্কার করে এখানে একটি সমৃদ্ধ সাধারণ পাঠাগার, জ্যোতি বসুর ব্যবহƒত সামগ্রী দিয়ে একটি জাদুঘরসহ দর্শনীয় একটি কমপ্লে¬ক্স তৈরি করে জ্যোতি বসুর স্মৃতি চির জাগরূক রাখার পরিকল্পনা নেয়া হয়।

এ সিদ্ধান্ত মোতাবেক বর্তমান সরকারের বরাদ্দকৃত ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেখানে কাজ চলছে।

দুই একর ৪০ শতাংশ জমি নিয়ে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়ীটির অবস্থান। বাড়ীতে দুটি পুকুর ও দ্বিতল একটি ভবন রয়েছে। তাছাড়া রয়েছে আম, তাল ও বিভিন্ন ফলফলাদীর গাছ। খাবার পানির জন্য জ্যোতি বসুর পরিবার যে কুয়া ব্যবহার করতেন সেটি এথনও জরাজীর্ন অবস্থায় টিকে রয়েছে।

জ্যোতি বসুর পিতা ডা. নিশিকান্ত বসু ছিলেন একজন প্রখ্যাত হোমিওপ্যাথ চিকিৎসক। পেশা সূত্রে তিনি জ্যোতি বসুর জন্মের পূর্বেই বারদী থেকে কলকাতায় চলে যান। সেখানে চিকিৎসা পেশা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। অবিভক্ত বাংলায় বিভিন্ন ছুটি ছাটা ও পুজো পার্বনে নিশিকান্ত বসু সপরিবারে বেড়াতে আসতেন বারদীতে। সেই সুবাদে সোনারগাঁয়ের বারদীতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জ্যোতি বসুর অনেক স্মৃতি।

রাজধানী ঢাকা থেকে মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে বারদী গ্রামের অবস্থান। ঢাকা থেকে বাসে সোনারগাঁ মোগরাপাড়া বাসস্ট্যান্ড নেমে রিকশা অথবা স্কুটারে বারদী যাওয়া যায়। বারদীতে অবস্থিত জ্যোতি বসুর এই বাড়ীটি মূলত তার নানার। জ্যোতি বসুর নানা শরৎ চন্দ্র দাস ও নানী খিরদা সুন্দরী। তাদের সংসারে জ্যোতি বসুর মা হেমলতা ছিলেন একাই।

সেই সূত্রে এই বাড়ীর মালিক হন হেমলতা বসু। হেমলতা বসুর সঙ্গে ডা. নিশিকান্ত বসুর বিয়ের হওয়ার সুবাদে এই বাড়ীটির মালিক হন ডা. নিশিকান্ত বসু ও হেমলতা বসুর দুই সন্তান ডা. সুরেন্দ্র কিরণ বসু ও জ্যোতি বসু। ছোটবেলায় জ্যোতি বসু বারদীতে থাকাকালীন সময়ে তার দেখা শোনা করতেন আয়াতুন নেছা নামে এক মহিলা। পরবর্তীতে জ্যোতি বসুর পৈত্রিক বাড়ীটির  দেখা শোনার ভার দেন আয়াতুন নেছা ও তার ছেলে হাবিবুল্লার উপর। বর্তমানে ওই বাড়ী দেখা শোনা করছেন আয়াতুন নেছার নাতী ইউসুফ আলী।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে জ্যোতি বসু ১৯৮৭ সালের ২০ জানুয়ারি এবং ১৯৯৭ সালের ১১ নভেম্বর বারদীতে অবস্থিত তার পৈত্রিক বাড়ীটি দেখতে আসেন। ১৯৮৭ সালে জ্যোতি বসুর সঙ্গে আসেন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান। ভারত থেকে আসেন জ্যোতি বসুর স্ত্রী বাসন্তি ঘোষ (কমলা বসু) ও তার ছেলে চন্দন বসু। ১৯৯৭ সালে সঙ্গে আসেন বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। ভারত থেকে জ্যোতি বসুর সঙ্গে আসেন পশ্চিমবঙ্গের উপমুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্ ও অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্ত।

জ্যোতি বসুর বড় ভাই ডা. সুরেন্দ্র কিরণ বসু এবং বোন সুধা বসু।
জন্মের পর জ্যোতি বসুর নাম নির্ধারণের পূর্বে প্রথমে জ্যোতিন্দ্র এবং পরে রথীন্দ্র রাখারও সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু পিতা ডা. নিশিকান্ত বসু তাকে লরেটা কিন্ডার গার্র্টেনে ভর্তির সময় জ্যোতি বসু নাম রাখেন। কিন্ডার গার্টেনের পড়া শেষ করে তিনি সেন্ট জেভিয়ার কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন।

তিনি প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ১৯৩৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। এরপর লন্ডন চলে গিয়ে জ্যোতি বসু বার এট.ল পাশ করে ১৯৪০ সালে কলকাতা ফিরে আসেন এবং ভারতীয় কমিউনিস্ট দলের কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৪২ সালের ২০ জানুয়ারি বাসন্তি ঘোষের (কমলা বসুর) সঙ্গে তার বিয়ে হয়।

১৯৪৬ সালে তিনি রাজ্য পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি নয় জন পলিট ব্যুরো সদস্যসহ ১৯৪৬ সালে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির কার্যক্রম শুরু করেন। ১৯৬৭ এবং ১৯৬৯ সালে জ্যোতি বসু ইউনাইটেড ফ্রন্ট সরকারের উপ-প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি কমিউনিস্ট দলের সদস্য হিসেবে ১৯৭৭ সালের ২১ জুন থেকে ২০০০ সালের ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ২৩ বছর সাফল্যের সঙ্গে একটানা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে সুনাম অর্জন করেন।

জ্যোতি বসু ভারতীয় কমিউনিস্ট দলের প্রতিষ্ঠা লগ্ন ১৯৬৪ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত পলিট ব্যুরোর সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সালে জ্যোতি বসুকে ইউনাইটেড সরকারের অধীন ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব দেবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত অনুসারে তিনি প্রধানমন্ত্রীত্বের পদ গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। ২০০০ সালে স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে তার দলের অন্যতম সদস্য বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন।

২০১০ সালের ৬ জানুয়ারি চিকিৎসাধীন অবস্থায় জ্যোতি বসুর মৃত্যু হয়।

বাংলাদেশ সময় : ১৪২৭ ঘণ্টা, জুলাই ০৮, ২০১২
টিএইচ/


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান