‘মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রাখা সাংবাদিকদের ইতিহাস সংরক্ষণ করতে হবে’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৮:৩১, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩

ঢাকা: ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের মুক্তি আন্দোলনে পথিকৃৎ ছিলেন সাংবাদিকরা। অবরুদ্ধ দেশে পাকিস্তানে হানাদারবাহিনীর বুটের নিচে শহীদ সাবের, শহিদুল্লাহ কায়সারদের মতো সাংবাদিকরা স্বাধীনতা সংগ্রামে জন্য কোনো আপস করেননি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোলতে এ মহান সাংবাদিকদের প্রকৃত ইতিহাসের সন্ধান করতে হবে। সঠিক ইতিহাস লিখতে হবে।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে আয়োজিত  ‘মুক্তিযুদ্ধ: ইতিহাস চেতনা ও অদম্য বাংলাদেশের গল্প’ বিষয় আলোচনা এসব কথা বলেন বক্তারা।

আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয় প্রেসক্লাব।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়ংকর দৃশ্যের কথা তুলে ধরে প্রধান বক্তার বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবের অঙ্গনটাও স্মৃতিকাতর করে তোলে। স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতেই, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর একটি গোলা জাতীয় প্রেস ক্লাবের দু'তলায় আঘাত করেছিল। তখন সাংবাদিক ফয়েজ আহমেদ সেখানে অবস্থান করেছিলেন। তখন তিনি আহত হয়েছিলেন। পরে চিকিৎসা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন।

তিন শহীদ সাংবাদিককে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে মফিদুল হক বলেন, শহীদ সাবের অল্প বয়সে সাহিত্য দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় এসে সাংবাদিকতায় যুক্ত হয়েছিলেন। সে সময়ে তিনি কারাবন্দি হন। প্রেস ক্লাব ও পত্রিকার সঙ্গে আত্মিক বন্ধন কখনও তিনি ছিন্ন হতে দেননি। সারাদিন প্রেস ক্লাবে কাটাতেন। চুল-দাড়িতে অবিন্যস্ত সাবের 'চকিতে' জ্বলে উঠতেন। চার আনা পয়সা নিয়ে খুঁজে জীবন চালাতেন। প্রেস ক্লাব ছিল তার আশ্রয়, সংবাদ (দৈনিক পত্রিকা) ছিল রাতের ঘুমের স্থান। ২৫ মার্চ যখন সংবাদের অফিস দগ্ধ হয় সেখানে তিনি পুড়ে অঙ্গার হয়ে যান।

মফিদুল হক বলেন, বামপন্থী আদর্শে বিশ্বাসী শহীদুল্লাহ্ কায়সার বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কারাবন্দি ছিলেন। আরেকজন শহীদ সিরাজউদ্দীন হোসেন। ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার শিকার। অবরুদ্ধ সময়ে ইত্তেফাক পত্রিকার 'হাল' (দায়িত্ব পালন করা) ধরেছিলেন।

অবরুদ্ধ দেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বুটের নিচে তিনি স্বদেশি মুক্তির আকুতি ইত্তেফাক পত্রিকায় তুলে ধরেছিলেন। সাংবাদিক জগতে তিনি নজির স্থাপন করেছেন। এমন আরও আছেন -তোফাজ্জেল হোসেন মানিক, সিরাজউদ্দীন হোসেন। বঙ্গবন্ধু যে জাতীয় জাগরণ তৈরি করেছেন, সেখানে সাংবাদিকদের ভূমিকা আমাদের নানাভাবে অনুপ্রাণিত করে। তারা মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা রেখেছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতা যুদ্ধে দুইজন পশ্চিমবঙ্গের সাংবাদিক নিখোঁজ হয়েছেন। সাংবাদিকরা আপসহীন মনোভাব দেখিয়েছেন, তাই তাদের হত্যা করা হয়েছে। আমাদের সাংবাদিকতায় কতটুকু তাদের (মুক্তিযুদ্ধের সময়কালের) আদর্শ ধরে রাখতে পেরেছি?

সভাপতির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, সাংবাদিকতায় সবসময় নিরপেক্ষতা থাকে না। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্পষ্টভাবে সাংবাদিকরা দেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ২৫ বছর ধরে জনমত গঠন ভূমিকা রেখেছিলেন সাংবাদিকরা। তাই ১৪ ডিসেম্বর (বুদ্ধিজীবী দিবস) সাংবাদিক মেরে ফেলা হয়েছে। ভারতেরও কয়েকজন সাংবাদিক ছিলেন। তাদের পরিবার এখনও অপেক্ষায়। সেসময় সাংবাদিকরা ছিলেন আপসহীন। এখন সাংবাদিকদের হত্যা করার দরকার নেই। চাইলে কিনে নেওয়া যায়।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি ও যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, গত ৫১ বছর ধরে এ দিবস পালন করছি। কিন্তু মূল ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে।  সামরিক, অবৈধ ও অগণতান্ত্রিক সরকার সুষম বণ্টন ব্যবস্থা বাধা গ্রস্ত করেছে।  স্বাধীন গণমাধ্যমও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তবুও সব প্রগতিশীল আন্দোলনে সাংবাদিকরা ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক ইতিহাস লেখা হয়েছে। প্রকৃত ইতিহাস লিখতে হলে সময়ের প্রয়োজন। ১৪ ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে পেরেছি? বিচার করেছি?

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি  ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপত্বিতে আরও আলোচক ছিলেন বিএফইউজে বর্তমান সভাপতি ওমর ফারুক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক আইয়ুব হোসেন ভূইয়া।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৩২  ঘণ্টা, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৩
ইএসএস/জেএইচ 


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান