ফরিদপুরে ক্ষুরা রোগে শতাধিক গরুর মৃত্যু, দুশ্চিন্তায় খামারিরা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৪:৫৫, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩

ফরিদপুর: ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে গবাদিপশুর সবচেয়ে মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ যা সংক্ষেপে এফএমডি নামে পরিচিত। সাধারণত গবাদিপশুর ক্ষুরে এ রোগ বেশি হয় বলে একে ক্ষুরা রোগ বলা হয়। সম্প্রতি উপজেলার দুটি ইউনিয়নে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় শতাধিক গরু মারা গেছে। 

এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে কয়েক শতাধিক গরু। ভ্যাকসিন ও ওষুধ দিয়েও রোগ নিরাময় হচ্ছে না। ফলে ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত গবাদিপশু নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন প্রান্তিক পর্যায়ের গরুর খামার মালিক ও কৃষকরা। অনেক খামারি ক্ষুরা রোগের ভয়ে খামারের সব গরু বিক্রি দেওয়ার কথা ভাবছেন। দুশ্চিন্তায় ঘুম নেই এ অঞ্চলের খামারিদের।

অনেক খামারি অভিযোগ করেছেন, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে ঘুরে মেলেনি ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন। সরকারি ভ্যাকসিন প্রকৃতি খামারিদের না দিয়ে অন্যত্র বাড়তি দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে খামার মালিক ও কৃষকদের ৩৫ হাজার গরু রয়েছে। গত তিন সপ্তাহ আগে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে।   

উপজেলার বানা ইউনিয়নের গরানিয়া গ্রামে এক মাস আগে গরুর ক্ষুরা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। সম্প্রতি ওই গ্রামে সাদিক ডেইরি ফার্মে তিনটি গরু, সুলতান শেখের তিনটি, আজাদ শেখের চারটি ও কামাল মোল্যার তিনটি গরুসহ ওই অঞ্চলে অনেক গরু ক্ষুরা রোগে মারা গেছে। যার প্রত্যেকটি গরুর বাজার মূল্যে ৮০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। বানা ইউনিয়নে অর্ধ শতাধিকের বেশি গরু মারা গেছে, যার বাজার মূল্যে প্রায় কোটি টাকা। 

সাদিক ডেইরি ফার্মের মালিক দুলাল বলেন, আমার খামারের সাত-আট মাসের তিনটি বাছুর ক্ষুরা রোগে মারা গেছে, যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৬ লাখ টাকা। বাকি গরু নিয়ে বড় দুশ্চিন্তার মধ্যে আছি। গরুকে ভ্যাকসিনসহ ওষুধ দিয়েছি, তবে কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না। চোখের সামনে তিনটি বাছুর হারিয়েছি। অবশিষ্ট গরু বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছি। 

একই গ্রামের প্রবাসী কামাল মোল্যার স্ত্রী দিদারা জামান পিয়া জানান, তাদের পালন করা ১০টি গরুর মধ্যে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনটি গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। মারা যাওয়ার এক মাস আগে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে লোক এসে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন দিয়ে যান। মারা যাওয়া তিনটি গরুর বাজার মূল্যে প্রায় ৬ লাখ টাকা। খামারে একটি গাভী অসুস্থ আছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৪ লাখ টাকা। এখন খামারের অবশিষ্ট গরুগুলো বিক্রি করে দেওয়ার কথা ভাবছেন তিনি।

উপজেলার বুড়াইচ ইউনিয়নের একাধিক খামারি ও কৃষকের বেশ কিছু মারা গেছে ক্ষুরা রোগে। 

বুড়াইচ ইউনিয়নের শৈলমারী গ্রামের খামারি শরিফুল ইসলাম পলাশ জানান, তার দুইটি গরুসহ শৈলমারী গ্রামে একাধিক ব্যক্তির গরু ক্ষুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তাদের প্রত্যেকটি গরুর খামারে ক্ষুরা রোগের ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও আক্রান্ত রোধ করা যাচ্ছে না। সরকারি ভ্যাকসিনের জন্য অফিসে গেলে আমাদের বলা হচ্ছে, কোনো ভ্যাকসিন সরবরাহ নেই। অথচ অফিসের ড্রেসারের কাছে বাড়তি টাকায় মেলে ভ্যাকসিন। 

মিলন ডেইরি ফার্মের মালিক বুড়াইচ ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. মিলন জানান, তার খামারে ১৪টি গরুর মধ্যে গত সপ্তাহে একটি গরু ক্ষুরা রোগে মারা গেছে। বাকি গরুগুলো কয়েকদিন ধরে কোনো খাবার খাচ্ছে না। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের লোকজন এসে দেখে গেছে। সরকারি ভ্যাকসিনের জন্য অনেক বার অফিসে গিয়েও মেলেনি ভ্যাকসিন। পরে বাজার থেকে ভ্যাকসিন ক্রয় করে প্রয়োগ করতে হয়েছে। এখন গরু নিয়ে আমি মহা দুশ্চিন্তায় রয়েছি। 

উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, খামারিদের কিছু গরু মারা যাচ্ছে সঠিক চিকিৎসার অভাবে। অনেক খামার মালিক রয়েছেন, তারা ভেটেরিনারি চিকিৎসক থেকে একটু বেশি বোঝেন এবং নিজেদের বড় চিকিৎসক ভাবেন। যে কারণে তারা নিজেদের গরুর চিকিৎসার করার পাশাপাশি অনেক খামার মালিকদের ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসার পরামর্শও দিয়ে থাকেন। এর সেসব খামারিদের কথা শুনে অনেকেই ভুল চিকিৎসা দেন। এ জন্য অনেক গবাদিপশুর সঠিক চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে। অনেক খামারি গরু যখন মৃত্যুর মুখোমুখি হয়, তখনই প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে আনা হয়। তখন অফিসে যোগাযোগ করে পশু চিকিৎসক ডাকেন। বর্তমান ক্ষুরা রোগে গরুকে ওষুধ ও ভ্যাকসিন দেওয়ার পরেও অনেক গরুকে বাঁচানো সম্ভব হয়ে ওঠে না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ভবেন বাইন প্রশিক্ষণে থাকায় ভেটেরিনারি সার্জন ডা. শওকত আলী জানান, এ রোগের প্রতিষেধক হিসেবে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। মানুষের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং উঠান বৈঠক ও মেডিকেল ক্যাম্প করে রোগ ও প্রতিকার সম্পর্কে অবগত করতে হবে। গবাদি পশুর রোগ নিয়ে শৈলমারীতে আমাদের একটি মেডিকেল ক্যাম্প করার কথা রয়েছে। এ বছর ক্ষুরা রোগে মারা যাওয়া গরুর মধ্যে ৭০ শতাংশই বাছুর গরু।

ভ্যাকসিন সরবরাহ সংকট দেখিয়ে বাইরে বাড়তি দামে বিক্রি করার বিষয়ে বলেন, এসব আমাদের জানা নেই। তথ্য প্রমাণ থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০২৩
এসএম/এসআরএস


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান