আজ বিশ্ব শান্তিরক্ষী দিবস

মনোয়ারুল ইসলাম,স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ০০:৪৬, মে ২৯, ২০১২

ঢাকা: আজ মঙ্গলবার বিশ্ব শান্তিরক্ষী দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করবে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সৈন্য প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান শীর্ষে। বর্তমানে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ১০টি শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের প্রায় ১০ হাজার ৫০০ সেনা ও পুলিশ সদস্য কাজ করছেন। জাতিসংঘ শান্তি মিশনে সাফল্যের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের অবদান এখন অনুকরণীয় হয়ে উঠেছে। এ পর্যন্ত ৬৩টি শান্তি মিশনে অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। ৮২ হাজার ৯৬৫ শান্তি কর্মী বাংলাদেশ থেকে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন মিশনে।

নিরাপত্তার কারণে বিভিন্ন মিশনে কাজ অসমাপ্ত রেখে জাতিসংঘ বাহিনী ফিরে এসেছে। কিন্তু একমাত্র বাংলাদেশিরাই হচ্ছে এর ব্যতিক্রম। সিয়েরা লিয়নে আজ বাংলাকে দ্বিতীয় রাষ্ট্র ভাষা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। রাস্তাঘাটের নামকরণ করা হয়েছে বাংলাদেশের নামে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সন্ত্রাস, সংঘাত ও দাঙ্গা দমন করে শান্তি স্থাপন, তথা সে সব দেশ পুনর্গঠনে এ দেশের শান্তিসেনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এসব কারণে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সেনা ও পুলিশ বাহিনী সাফল্যের শীর্ষে অবস্থান করছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিপুল পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে আকর্ষণীয় শান্তিরক্ষার দায়িত্ব ব্যাপক জনপ্রিয়।  কারন এতে অংশগ্রহণকারীদের মিশনের পর বাড়ি কেনার ও অবসরের জন্য সঞ্চয়ের সুযোগ করে দেয়। সামরিক বাহিনীতে কর্মরতরা এই মিশনে যাবার জন্য অপেক্ষা করে।

গত ৩০এপ্রিল জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি আব্দুল মোমেনের বরাত দিয়ে এএফপি জানায়, বাংলাদেশের শান্তি রক্ষীরা গত তিন বছরে দেশে তাদের পরিবারবর্গের কাছে ৭৫ বিলিয়ন টাকা (৯১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) প্রেরণ করেছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা (ইউএনপিএসও)-এর সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত। বিশ্ব শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের ইতিবাচক পদক্ষেপের ফলে বিশ্বে শান্তিপ্রিয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পরিচিত হয়েছে। ১৯৮৮ সাল থেকে জাতিসংঘের অধীনে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীরা সর্বোচ্চমানের পেশাদারি মনোভাব, সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী প্রশংসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

পরবর্তীতে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী উপসাগরীয় এলাকা, বেনিন, নামিবিয়া, কম্বোডিয়া, সোমালিয়া, উগান্ডা/রুয়ান্ডা, মোজাম্বিক, প্রাক্তন যুগোস্লাভিয়া, লাইবেরিয়া, হাইতি, তাজিকিস্তান, পশ্চিম সাহারা, সিয়েরা লিওন, কসোভো, জর্জিয়া, পূর্ব তিমুর, কঙ্গো, আইভরি কোস্ট ও ইথিওপিয়ায় শান্তি রক্ষা কাজে অংশগ্রহণ করে।

আইএসপিআর পরিচালক শাহীনুল ইসলাম সেমাবার বাংলানিউজকে জানান, দিবসটি উপলক্ষে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু সম্মেলন কেন্দ্রের শান্তিরক্ষী দিবসের সকল অনুষ্ঠান সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

দিবসটি উপলক্ষে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রী লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেছেন , শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী  বিশ্বের দরবারে দেশকে সুনাম এনে দিয়েছে। এখন তিনি বাহিনী ও পুলিশরাও সুনামের সাথে কাজ করছে। স্বাধীনতার পর অনেকেই আমাদের স্বশন্ত্র বাহিনী না রাখার জন্য পরামশ দিলেও বঙ্গবন্ধু তা করেনি। বঙ্গবন্ধু সেই সময়ে যুগান্তকারী সিন্ধান্তে কারনে আজকে আমাদের সেনাবাহিনী শান্তি রক্ষা মিশনে কাজ করার সুযোগ পেয়েছে।  কোনোভাবেই সেনাবাহিনী বির্তকিত করা যাবে না।

মানবাধিকার কমিশন চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় পালন করা হয় এবং এর প্রয়োজনীয়তা আছে।  গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে পৃথিবীর কোনো দেশেই মানবাধিকার রক্ষা করা সম্ভব নয়। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের শান্তিসেনারা গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় কাজ করছে।

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহীম বীর প্রতীক বাংলানিউজকে বলেন, বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে সারাবিশ্বে অনেক ইজ্জত পায়। দেশের ভেতরেও তেমনি ইজ্জত করা উচিত। সামরিক বাহিনী আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সামরিক বাহিনীকে ‌রাজনীতিকরণ  প্রবনতা রোধ  করতে হবে ।

দিবসটি উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে পিস কিপার্স রানের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে। বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকট-আত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা, স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার আয়োজন করা হয়েছে।
দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ টকশো প্রচার করবে। এছাড়াও বিশ্ব শান্তিরক্ষায় বিপসট এর কার্যক্রম সংক্রান্ত এ সেন্টার অফ এক্সসেলেন্স Gবং শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ভূমিকা সংক্রান্ত  বিশ্ব শান্তির অন্বেষ†Y শিরোনামে দুটি প্রামাণ্য চিত্র বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারি চ্যানেলে প্রচারিত হবে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, তিন বাহিনী প্রধান, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও), পুলিশের মহাপরিদর্শক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী, গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বসহ উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন।

গতকাল সোমবার এক তথ্যবিবরণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।       
                             
বাংলাদেশের হাজারো সমস্যার মাঝে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের সাফল্য আমাদের আশাবাদি করে তোলে।

বাংলাদেশ সময় ০০৩৫ ঘণ্টা, মে ২৮, ২০১২
এমআইআর/সম্পাদনা: শাফিক নেওয়াজ সোহান, নিউজরুম এডিটর


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান