বিডিআর বিদ্রোহ মামলা: সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রদান ও জেরা অব্যাহত

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৭:৩৫, অক্টোবর ৫, ২০১০

ঢাকা: বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় মঙ্গলবার ২৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়নের বিচার কার্যক্রমের ৪র্থ পর্যায়ে সাক্ষীর সাক্ষ্য দেওয়ার পাশাপাশি আসামিরা তাদের জেরা অব্যাহত রেখেছেন।

বুধবার সাক্ষী মেজর আসিফের জেরা চলবে।

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় পিলখানার বিডিআর সদর দপ্তরের দরবার হলে বিশেষ আদালত-৭ এ বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিচার কাজ শুরু হয়।

এর আগে সকাল ৯টার দিকে কাসিমপুর কারাগার থেকে ২৪ ব্যাটালিয়নের ৬ শ’ ৬৭ জন বিদ্রোহী বিডিআর সদস্যকে পুলিশি প্রহরায় আদালতে এনে আসামির কাঠগড়ায় হাজির করা হয়।

শুরুতেই তিন নম্বর সাী নায়েক মো. মোতালেব মিয়া প্রথমে ৩৩ জন আসামির বিরুদ্ধে স্যা দেন। এ সময় তিনি সাক্ষ্য প্রমাণ হিসাবে আদালতে কিছু ভিডিওচিত্র ও মোবাইল কললিস্ট দেখান। পরে তাকে একে একে জেরা শুরু করেন আসামিরা।

জেরার শুরুতে ১ নম্বর আসামি গোফরান মল্লিক সাক্ষী মোতালেব মিয়াকে জেরা করা শুরু করেন।

এ সময় তিনি সাক্ষীর কাছে জানতে চান, ‘আপনি কখন আমাকে দরবার হলের বাইরে যেতে দেখেছেন?’

জবাবে সাক্ষী জানান, ‘তখন আমার কাছে কোনো ঘড়ি ছিল না। দরবার হলের মধ্যে সবাই যখন “জাগো” বলে চিৎকার দিয়ে ওঠে, তখন আপনাকে আমি বের হতে দেখি।’

এরপর আসামি সাক্ষীর কাছে জানতে চান, ‘আমি যখন দরবার হলের স্টেজে উঠি, তখন আপনার সঙ্গে আমার দূরত্ব কতটুকু ছিল?’

জবাবে সাী বলেন, ‘আমি তখন ১৪নং পিলারের কাছে ছিলাম। ওখান থেকে দরবার হলের স্টেজের দূরত্ব যতটুকু, ততটুকু দূরত্বেই ছিলাম।’

আসামি আবারও জানতে চান, ‘কোন গেট দিয়ে আপনি আমাকে বের হতে দেখেছেন?’

উত্তরে সাক্ষী বলেন, ‘দক্ষিণ পাশের গেট দিয়ে।’

জেরার সময় আসামি নায়েক শাহেদ আলী মীর সাক্ষী মোতালেব মিয়াকে ‘ওস্তাদ’ সম্বোধন করলে বিচারক আসামিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘এটা আদালত। আদালতের নিয়মানুযায়ী সম্বোধন করা উচিত।’

আদালতে জেরার সময় অনেক আসামি একই প্রশ্ন করায় প্রশ্নগুলো অপ্রাসঙ্গিক বলে আদালতের সভাপতি সেগুলো গ্রহণ করেননি।

সে সময় আদালতের সভাপতি মেজর জেনারেল রফিকুল ইসলাম আসামিদের বলেন, ‘আপনারা আরও ভালো করে প্রস্তুতি নিয়ে জেরা করুন। তা না হলে আপনারা আপনাদের জেরাতেই দোষী হয়ে যেতে পারেন।’

এরপর ৪র্থ সাী ২৪ রাইফেল ব্যাটেলিয়নের প্রাক্তন অধিনায়ক লে. কর্নেল আসিফ আবদুর রউফ স্যা দেন। এ সময় তিনি সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সেদিন যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল তা বর্ণনা করেন।

সে সময় গোলাগুলির শব্দ শুনে তিনি তার ব্যাটালিয়নের গোফরান মল্লিককে ফোন করে কী হয়েছে জানতে চাইলে গোফরান তাকে চুপচাপ বাসায় থাকতে বলেন।

এরপর তার বাসায় কয়েকজন সশস্ত্র বিদ্রোহী আক্রমণ করে তার পরিবারের সদস্যসহ তাকে কোয়ার্টার গার্ডে বন্দি করে রাখে।

এ সময় সুবেদার মেজর গোফরান মল্লিকের নেতৃত্বে নায়েক সুবেদার মো. ওয়ালী উল্লাহ, হাবিলদার মো. মাহাব উদ্দিন, হাবিলদার মো. সিরাজুল ইসলামসহ ২০-২৫ জনের মতো জওয়ান সশস্ত্র অবস্থায় কোয়াটারগার্ডে আসে। তারা আটক সবাইকে বিভিন্ন হুমকি দেয়, ভয়-ভীতি দেখায় ও কটূক্তি করে।

এর পরপরই বেলা পৌনে তিনটায় আদালতের কার্যক্রম বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত মুলতবি ঘোষণা করা হয়।
 
গত ৪ ও ৬ সেপ্টেম্বর শুনানিকালে মামলার বাদী সুবেদার মো. মতিউর রহমান ও মেজর জায়েদী আহসান হাবিবের স্যা নেওয়া হয়।

বিশেষ আদালতের বিচারককে সহযোগিতা করেন লে. কর্নেল এ কে এম গোলাম রব্বানী, মেজর সাইদ হাসান তাপস ও অ্যাটর্নি জেনারেল’র প্রতিনিধি ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মো. সোহরাওয়ার্দী।

আদালতে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করেন লে. কর্নেল মো. সামছুর রহমান।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানা বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৩ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় সম্পৃক্ত ঢাকা সেক্টরের অধীন এ ব্যাটালিয়নের বিচার কাজ গত ৩১ মার্চ বিশেষ আদালত-৫ এ শুরু হয়। সংশোধিত বর্ডার গার্ড আইন অনুযায়ী এ বিশেষ আদালত এখন বিশেষ আদালত-৭ এ রূপান্তরিত হয়েছে।

আদালত শেষে প্রসিকিউটর লে. কর্নেল মো. সামছুর রহমান প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘আদালতে মঙ্গলবার আরও একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। আদালতে সাক্ষীর সাক্ষ্য প্রমাণ ডিজিটালি উপস্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে সেদিনের প্রকৃত অবস্থার প্রমাণ মিলছে।’

বাংলাদেশ সময়: ১৮১৪ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৫, ২০১০


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান