আমার ‘মা’

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৫:৩৩, মে ১৩, ২০১২

পৃথিবীতে সব সম্পর্ক সময়ের ফাঁদে পড়ে বদলায়। শুধু বদলায় না সন্তানের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যে মানুষটি মমতার বাহুতে নিজ সন্তানকে আগলে রাখার চেষ্টা করেন তিনিই হচ্ছেন মা।

মায়ের জন্য প্রতিটি দিন উ‍ৎসর্গ হোক। তারপরও একটি দিন মায়ের জন্য ভিন্ন কিছু করার ইচ্ছে জাগুক পৃথিবীর প্রতিটি সন্তানের মাঝেই। যা মায়ের মুখে হাসি ছড়িয়ে দেবে। মায়ের সারা জীবনের গ্লানি ধুয়ে মুছে যাবে।

স্বপ্নযাত্রার বিভিন্ন বয়সের পাঠকদের কাছে ‘আমার মা’ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। বলতে বলা হয়েছিল ‘মা’ নিয়ে তাদের অনুভূতি। প্রত্যেকের কণ্ঠেই ছিল মায়ের জন্য অসীম ভালোবাসা মাখা কথা।  

abdulমো: আব্দুল মমিন, পরমাণু চিকিৎসা প্রযুক্তিবিদ, সিঙ্গাপুর
আশির দশকের কথা। আমরা রাজবাড়ি থেকে ঢাকায় এসেছি।বাবার অল্প আয় দিয়ে কোনোরকম পরিবার চলতো। তখন আমাদের পড়াশোনা করাতে অনেক কষ্ট করেছেন মা। নিজের সাধ বা ইচ্ছাকে উৎসর্গ করেছিলেন আমাদের জন্য। মায়ের উদ্যোগ না থাকলে হয়তো আজ এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না।

মায়ের হাতের রান্না! কোনো দেশে কি পাওয়া যায়?  মায়ের বকা খেয়েছি অনেক। মার বকা হজম করতে পারলে উন্নতি অবধারিত। মনটা খুব খারাপ হয়, যখন মা অসুস্থ থাকেন। মায়ের সেবা করতে চাই সবসময়। এর চেয়ে তৃপ্তির আর কি আছে।
মায়ের মতো আপন আর কে আছে! আমার মা রিজিয়া সুলতানা। আমার প্রিয় মানুষ। বিদেশের মাটিতে পা দিলে সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে তাকে।

prithaপৃথা প্রণোদনা, পঞ্চম শ্রেণি, নালন্দা বিদ্যালয়, ঢাকা
মাকে আমি খুব ভালোবাসি। মা যখন আমাকে আদর করে, ঘুরতে নিয়ে যায় তখন আমার ভালো লাগে।একবার খালামণির বাসায় বেড়াতে গিয়ে খুব মন খারাপ হয়েছিল।মনে হয়েছে মাকে কেন আনলাম না!

মা আমাকে অনেক কষ্ট করে বড় করছেন।আমি বড় হয়েও মার জন্য বড় কিছু করব। আমি পাইলট হলে মাকে নিয়ে দেশবিদেশে ঘুরবো।

আমার মা সবার সঙ্গে খুব ভালো ব্যবহার করে। বাড়িতে দিদা-দাদার সেবা করে। আমার সবচেয়ে ভালো লাগে মায়ের মুখের হাসি। মা যখন কোন কারণে কাঁদে, তখন আমার ভালোলাগে না।আমি চাই মায়ের মুখে যেন সবসময় হাসি ফুটে থাকে।
মা বকা দিলে একটু মন খারাপ হয়। কিন্ত কিছুক্ষণ পর সেটা আর থাকে না।মা ফুল খুব পছন্দ করে।তাই আমি বড় হয়ে মাকে অনেক অনেক ফুল কিনে দেব।আমি মাকে কষ্ট দিতে চাই না। মায়ের মতো হতে চাই। আমার মা সবার চেয়ে শ্রেষ্ঠ।

sadia-afrinসাদিয়া আফরীন, শিক্ষার্থী, গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজ
মায়ের কথা কি বলব? অনেক কথা তো। পরিবারে যে মানুষটা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেন তিনি তো মা। মা আমাকে মমতা দিয়ে, যত্ন দিয়ে আগলে রেখেছেন।

ছোটবেলা থেকে আজ পর্যন্ত আমার পায়ে মোজা পরিয়ে দেন আমার মা। এটি আমার মায়ের এক ধরণের আদর। মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী ছিলেন তিনি। মেয়ে হিসেবে নয়, মানুষ হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার উ‍ৎসাহ সবসময় পেয়েছি মায়ের থেকে।আমার সামান্য অসুস্থ্যতায় মা ভীষণ চিন্তিত হন।আমিও চাই মা যেন কখনও কষ্ট না পান।
মাঝে মাঝে মা বকা দেন, অনেক জায়গায় যেতে নিষেধ করেন- তখন আমার অনেক মন খারাপ হয়। বুঝি ভালোর জন্যই বলেন। যত কিছুই হোক মাতো মা-ই।আমার মায়ের নাম নাসরিন আক্তার। আমি শুধু একটি কথা বলব- ‘আম্মু আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি।’

Shimulশিমুল সালাহ্উদ্দিন, তরুণ কবি
মা আমার সেরা বন্ধুটি। মাকে নিয়ে কিছু বলতে গেলে সবার আগে মনে পড়ে এই সেদিনও মা গল্প করছিল আমি ছেলেবেলায় খুব ন্যাওটা ছিলাম। আমি আমার মায়ের রাজা পোলা।

ক্রমশ বড় হতে হতে মার থেকে অনেক দূরে থাকি। একা। মাঝে মাঝে হাজারো অপ্রাপ্তির মধ্যে, হাজারো বাঁধার মধ্যে, শত ব্যস্ততার মধ্যে মা, অন্য এক স্বত্ত্বা হয়ে প্রশান্তিপরশ হিসেবে কাজ করে আমার মধ্যে।

আমার মায়ের কোলে শুয়েই আমি প্রথম কবিতা শুনেছি। মা আমাকে ঘুম পাড়ানোর জন্য পড়তেন, "রাত থম থম স্তব্ধ, নিঝুম, ঘোর-ঘোর-আন্ধার,
নিঃশ্বাস ফেলি, তাও শোনা যায়, নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বিসয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।"
(পল্লীজননী, জসীম উদ্দীন)

আমার মা একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার কাছেই শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষাগ্রহণ আমার। প্রাইমারি স্কুলে মায়ের ক্লাসে রোলকলে সবাই যখন মা`কে জ্বি-আপ্প, ইয়েস ম্যাডাম বলতো, আমি খুব লজ্জ্বায়, আস্তে আস্তে বলতাম ইয়েস-মা।
মা খুব অল্প অপরাধেও আমাকে বেশি মার দিতো। জালি বেত দিয়ে পেটানোর জন্য মা এখন্ও স্কুলে বিখ্যাত। এখন বুঝি অন্য সহপাঠীদের কাছে যেন বৈষম্য না মনে হয় এজন্য মা আমাকে বেশি মারতো।

ছেলেবেলায় একবার মা স্কুলে ছিলো। বাড়িতে ছিলাম আমি আর দাদীজান। তখন ক্লাস টু-থ্রিতে পড়ি। ওমে বসা মুরগীর ডিম খেয়ে ফেলেছিলাম ভেজে। মা এসে জিজ্ঞেস করলে বলেছিলাম খাই নাই। মিথ্যা বলার জন্য মা আমাকে চৌকাঠে ফেলে গলায় পাড়া দিয়ে ধরেছিল, বলেছিল, মিথ্যা যেহেতু বলেছিস তুই মরে যা। এখনো যে কাউকে মিথ্যা বলতে গেলে মা`র ওই পিটুনির কথা মনে পড়ে। মিথ্যা বলতে পারিনা। মিথ্যা বললেই সবাই ধরে ফেলে।

মা দিবস থাকার জরুরৎ আছে। মা দিবস না থাকলে সকালবেলার কাচা আবেগে এইসব স্মৃতিচারণ করতাম না। মাকে ফোন দিয়েছিলাম মা দিবস উপলক্ষ্যে। ঘন্টাখানেক কথা হলো। মা কত কিছুর খোঁজ যে নিলেন, অথচ তাকে বলতে পারলাম না ‘মা, আজকে মা দিবস, তোমার জন্যই আজকের আমি, তোমার জন্যই আমার সকল গান’।
মাকে কি বলা যায়, ‘হেপি মাদার্স ডে মম’, বলেনতো!?

tania-aktherতানিয়া আক্তার, গৃহিনী
কেউ যখন আমাকে বোঝে না, তখন মনে পড়ে মাকে। আমি চোখ বন্ধ করে দেখি তার মুখটি। চোখের জলে বুক ভেজাই। তবুও মা আমাকে দেখতে আসে না। আসবেই বা কিভাবে! মা তো স্বর্গে চলে গেছেন সেই এক যুগ আগে। মা আসলে কি? যাদের মা নেই তারা তা অনুভব করতে পারে।

মা ছিলেন আমার আত্মার আত্মা। আমি যখন রেগে যেতাম তিনি তখন চুপ থাকতেন। কিছুক্ষণ পরেই আদর করে ভাত খাওয়াতেন। মাথায় হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়াতেন। মনটা যদি খারাপ থাকতো মা কিভাবে যেন বুঝে যেতেন। নানাভাবে আমার মন ভালো করতে চাইতেন। মা জড়িয়ে ধরলেই আমার মন ভালো হয়ে যেত।

এখন আমিও মা হয়েছি। মায়ের মতো মমতাময়ী মা হওয়ার চেষ্টা করছি সবসময়। মায়ের কথা মনে পড়লে আমি আমার দুই মেয়েকে জড়িয়ে ধরি।এখন তারাই তো আমার মা। এক মাকে হারিয়ে দুই মা পেয়েছি। আমার মায়ের নাম শাহেদা বেগম। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ মানুষ তিনি।


linaলীনা ফেরদৌস, লেখক

মা

তীব্র মাঘের যন্ত্রণা তবু ভালবাসার ওম
সাদা পালক ছুঁয়ে গেছে
আমার জন্মলগ্নে!  নাকি জন্ম জন্মান্তরের
সাদা বালিহাঁস ছিলে মা?

তোমার সদ্য কৈশোর পেরুনো দুহাতে
ছোট্ট এ হাত ছুঁয়ে ছিলে তুমি?
পিদিমের আলোয় কেঁপেছিলে তুমি?
মনে নেই মা
কিছূ মনে নেই। ।

সাদা মোমবাতি, সাদা তুলো, খুব সাদা ভিজে ন্যাতা
অসংবৃত রাত্রিতে প্রথম আলো-
ছোট্ট হৃদপিন্ড দেখে কেঁদেছিলে তুমি?
নারীর বন্ধন ব্যাথায় হেসেছিলে তুমি?
মনে নেই মা
কিছূ মনে নেই ।

আজ আরো একবার
তোমার আঁচলে খুঁজে পেতে চাই
সাদা পালকের ওম
তোমার পাঁজর ছুঁয়ে হতে চাই
স্রোতস্বিণী ফেনীল চিৎকার।

বাংলাদেশ সময়: ১৫১০ ঘণ্টা, মে ১৩, ২০১২

সম্পাদনা: শেরিফ আল সায়ার, বিভাগীয় সম্পাদক


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান