বায়ু দূষণে বাড়ছে ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকি

রেজাউল করিম রাজা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১৯:২৪, মার্চ ৩, ২০২৩

ঢাকা: দূষিত শহরের তালিকায় শুক্রবার (৩ মার্চ) ছুটির দিনেও শীর্ষে ছিল রাজধানী ঢাকা। বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকালেও দূষণের শীর্ষে ছিল এ নগর। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক দিন দুর্যোগপূর্ণ বায়ুর মধ্যে কাটিয়েছে ঢাকাবাসী। বছরের প্রথম মাসটির মোট ৯ দিন রাজধানীর বায়ুর মান দুর্যোগপূর্ণ ছিল, যা গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘আইকিউ এয়ার’ দূষিত বাতাসের শহরের তালিকা প্রকাশ করে। প্রতিদিনের বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা একিউআই সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বায়ু কতটুকু নির্মল বা দূষিত, তার তথ্য প্রদান করে।

একিউআই স্কোর শূন্য থেকে ৫০ ভালো হিসেবে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ মাঝারি হিসেবে গণ্য করা হয়। আর সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। আর ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বায়ুদূষণ মানুষের শরীরে অনেক ধরণের রোগ তৈরি করে। এটা সব বয়সী মানুষের জন্য ক্ষতিকর। শিশু, অসুস্থ ব্যক্তি, প্রবীণ ও অন্তঃসত্ত্বাদের জন্য বায়ুদূষণ মারাত্মক ক্ষতিকর। বায়ু দূষণ কমানো না গেলে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে, যার মাসুল দিতে হবে সবাইকে।

বায়ু দূষণের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে শ্যামলীর বক্ষব্যাধি হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আক্তার শিল্পী বাংলানিউজকে বলেন, বাতাসে বিভিন্ন ধরনের ধূলিকণা থাকে; এসবের পরিমাণ যখন বেড়ে যায় তখন বায়ু দূষণ হয়। কার্বন-ডাই-অক্সাইড, কার্বন-মনো অক্সাইড, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন, বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া বাতাসের সাথে মিশে যাচ্ছে। এসব বিষাক্ত এবং ক্ষতিকর পদার্থ শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে মাধ্যমে ফুসফুসে যাচ্ছে। এতে ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। রক্তের মাধ্যমে হৃৎপিণ্ডে চলে যাচ্ছে। বায়ু দূষণের প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী। দীর্ঘদিন ক্ষতিকর পদার্থ শরীরে প্রবেশের ফলে ফুসফুস, কিডনি, লিভার, হৃৎপিণ্ডে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। এক পর্যায়ে দেখা যায় বিভিন্ন ধরনের অঙ্গ পতঙ্গ বিকলাঙ্গ হয়ে যায় এবং মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়।

তিনি আরও বলেন, যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে, তাদের দূষিত বায়ু গ্রহণের ফলে শ্বাসকষ্ট বাড়ে। আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ শ্বাসকষ্টের রোগীরা আমাদের হাসপাতালে আউটডোরে চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের ডাস্ট এলার্জি রয়েছে, তাদের এলার্জিক রিয়েকশান বেশি হয়। যাদের ফুসফুসের প্রদাহ জনিত রোগ রয়েছে, দূষিত বায়ু গ্রহণের ফলে তাদের রোগের তীব্রতা বেড়ে যায়। দূষিত পদার্থ শরীরে প্রবেশের ফলে প্রদাহ তৈরি হচ্ছে। যেকোনো প্রদাহ দীর্ঘ মেয়াদী হলে শরীরের বিভিন্ন কোষ নষ্ট এবং পরিবর্তন হয়ে যায়। যত বেশি আমরা দূষিত পদার্থ গ্রহণ করছি ততই শরীরের ক্ষতি হচ্ছে।

বায়ু দূষণের ফলে শিশুদের ক্ষতিকর প্রভাব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কিছু কিছু পদার্থ রয়েছে যা বাচ্চাদের জন্য অনেক ক্ষতিকর। এগুলো সরাসরি বাচ্চাদের মস্তিষ্কে চলে যায়। ফলে তাদের মস্তিষ্কের গঠন ঠিকমতো হয় না। মস্তিষ্কের গঠন ঠিক না হলে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়। ছোট থেকে বড় সব বয়সীদের জন্যই বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে।

প্রতিরোধ বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ধুলাবালি এড়িয়ে চলতে হবে, বাইরে বের হলে মাস্ক পরতে হবে। পরিবেশ দূষণ রোধ, বিশুদ্ধ অক্সিজেনের জন্য আমাদের বেশি বেশি করে গাছ লাগানো উচিত। বাড়ি ঘর এবং আশেপাশে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। রাস্তাঘাটে পানি ছিটাতে হবে। কলকারখানা শহর থেকে দূরে স্থাপন করলে বিষাক্ত ধোঁয়া শহরে কম আসবে। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পরিবেশ এবং বায়ু দূষণ কমাতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের আবহাওয়া পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে, শীতের সময় শীত নেই, আবার গরমে প্রচণ্ড গরম, ঋতু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। এটা শুধু আমাদের দেশে জন্য নয় সারা বিশ্বের জন্যই জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে। তাই সকলেই সম্মিলিতভাবে চেষ্টা করতে হবে দূষণ প্রতিরোধে।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯২৫ ঘণ্টা, মার্চ ৩, ২০২৩
আরকেআর/এমজে


ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান