টাঙ্গাইলে কাদের সিদ্দিকীর অনুষ্ঠানে মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আ.লীগ নেতা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম | আপডেট: ১১:১২, জানুয়ারি ২৫, ২০২৩
বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক -বাংলানিউজ

বক্তব্য রাখছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক -বাংলানিউজ

টাঙ্গাইল: মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর বঙ্গবন্ধুর কাছে অস্ত্র জমা দেওয়ার ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস। সরকার ও দলের পক্ষ থেকে এই দুই জন আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর (বীর উত্তমের) অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত দলের সভাপতি মণ্ডলীর সাবেক সদস্য ও কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ওই অনুষ্ঠানে যোগ না দিলেও একজন মন্ত্রী ও একজন কেন্দ্রীয় নেতার উপস্থিতির কারণে রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের মাঝে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা মনে করছেন, আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের ঐক্য হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধকালীন কাদেরিয়া বাহিনীর সাবেক প্রশাসক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিম জানান, ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। তারপর ঢাকার বাইরে তিনি প্রথম সফর করেন টাঙ্গাইল। ওই বছর ২৪ জানুয়ারি টাঙ্গাইল শহরের বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কাদের সিদ্দিকী তার বাহিনীর সব অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দেন। বিভিন্ন প্রকারের এক লাখ চার হাজার অস্ত্র সেদিন বঙ্গবন্ধুর কাছে দেওয়া হয়েছিল। সেই ঐতিহাসিক দিনটির ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে কাদেররিয়া বাহিনীর পক্ষ থেকে টাঙ্গাইল শহীদ মিনারে এই আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় কাদের সিদ্দিকী বলেন, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর আদর্শে পথ চলতে চাই। বাংলার বাপ একটাই, তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলার বাপ ২, ৩, ৪ টা নয়। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আমি এতিম হয়েছি। আমার, আমার ভাই ও পরিবারের অনেক বড় ক্ষতি হয়েছে।

তিনি বলেন, ১৯৭২ সালের ২৪ জানুয়ারি বিন্দুবাসিনী সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে যে অস্ত্র জমা দিয়েছিলাম, তা নতুন প্রজন্ম জানেই না। সেই স্মৃতি ধরে রাখতে স্মৃতিস্তম্ভ করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজ্জামেল হকের প্রতি দাবি জানাই।

অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান খানকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসতে অপারগতা প্রকাশ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন কাদের সিদ্দিকী।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক বলেন, কাদের সিদ্দিকী ইতিহাসের গর্বিত সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধের মহামানব। তার বীরত্বগাঁথা ইতিহাসে বিরল। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী হয়ে তিনি এক লাখ চার হাজার অস্ত্র বঙ্গবন্ধুর কাছে জমা দিয়েছিলেন। এটি একটি বিষ্ময়। বাংলাদেশ সৃষ্টিতে কাদেরিয়া বাহিনীর গৌরবোজ্জল ভূমিকা রয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, কাদের সিদ্দিকীর বক্তব্যে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সম্পর্কে যে মনোভাব প্রকাশ তা আমার জন্য বিব্রতকর। আমরা এই অনুষ্ঠানটিকে জাতীয় রাজনীতির প্রেক্ষাপটে দেখতে চাই। সম্পর্কের কোনো অবনতি থাকলে তা জাতীয়ভাবে নিতে চাই না। জাতীয়ভাবে আমরা মনে করি এটি একটি ঐতিহাসিক দিন।

আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক সংসদ সদস্য মৃণাল কান্তি দাস বলেন, দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তাকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

তিনি কাদের সিদ্দিকীকে বঙ্গবন্ধুর স্বার্থক আদর্শিক পুত্র অবহিত করে বলেন, আসুন আমরাও আপনাকে নিয়ে পথ চলতে চাই। ২৪ সালে যে নির্বাচন হবে সে নির্বাচনে এক বৃত্তে থাকবেন মুক্তিযুদ্ধের বীরসেনানীরা। স্বার্থক পিতার স্বার্থক উত্তরসূরী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়ব।

কাদেরিয়া বাহিনীর অস্ত্র জমাদান দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক আবু মোহাম্মদ এনায়েত করিমের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী, বীর মুক্তিযোদ্ধা কবি বুলবুল খান মাহবুুব, কবি আল মুজাহিদী, আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিনী নাসরিন সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা হামিদুল হক মোহন, জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস ছালাম চাকলাদার, আবুল কালাম আজাদ (বীরবিক্রম), হাবিবুর রহমান তালুকদার (বীরপ্রতীক) প্রমুখ।

প্রসঙ্গত গত ২৩ ডিসেম্বর কাদের সিদ্দিকী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে স্বপরিবারে গণভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তারপর থেকেই রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন রয়েছে তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটে যাচ্ছেন। ওই সাক্ষাতের পর এটিই ছিল কাদের সিদ্দিকীর টাঙ্গাইলে প্রথম কোনো সভা।

এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তাদের বক্তব্য এটা জেলার বিষয় নয়, কেন্দ্রের বিষয়। কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নেবে তারা তা মেনে নেবেন।

এদিকে অনুষ্ঠানে আসা কালিহাতীর পটল গ্রামের মোস্তাক হোসেন বলেন, মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতার বক্তব্য শুনে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে তাদের জোট হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১১১০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০২৩
এমএমজেড


সম্পাদক : তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু

ফোন: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮১, +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২১৮২ আই.পি. ফোন: +৮৮০ ৯৬১ ২১২ ৩১৩১ নিউজ রুম মোবাইল: +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৬, +৮৮০ ১৭২ ৯০৭ ৬৯৯৯ ফ্যাক্স: +৮৮০ ২ ৮৪৩ ২৩৪৬
ইমেইল: [email protected] সম্পাদক ইমেইল: [email protected]
Marketing Department: +880 961 212 3131 Extension: 3039 E-mail: [email protected]

কপিরাইট © 2006-2025 banglanews24.com | একটি ইস্ট-ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের (ইডব্লিউএমজিএল) প্রতিষ্ঠান