ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

১০ দফা না মানলে কর্মবিরতির ঘোষণা ট্যাংকলরি শ্রমিকদের

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৭, ২০২২
১০ দফা না মানলে কর্মবিরতির ঘোষণা ট্যাংকলরি শ্রমিকদের

ঢাকা: ১০ দফা দাবি না মানলে দেশব্যাপী জ্বালানি তেল পরিবহনে কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্যাংকলরি শ্রমিক ফেডারেশন। আগামী ২৩ অক্টোবর থেকে লাগাতার এ কর্মবিরতি শুরু হবে।

সোমবার (১৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের পক্ষ থেকে এ ঘোষণা দেন সাধারণ ম্পাদক রেজাউল করিম রেজা। এ সময়  উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সভাপতি শাহজাহান ভূইয়া, সিনিয়র সহ সভাপতি আবদুল মতিন মুন্সি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

লিখিত বক্তব্যে রেজাউল করিম রেজা বলেন, পরিবহন সেক্টরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বৈষ্যমের শিকার ট্যাংকলরি শ্রমিকরা। বিদেশ থেকে জ্বালানি তেল এনে সরকার আমাদের কাঁধে তুলে দেয়। আমরা তা ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দিয়ে রাষ্ট্রীয় ও মানবিক দায়িত্ব পালন করি । বিপিসি বা মন্ত্রণালয় আমাদের মূল্যায়ন করেন না। তাছাড়া অংশীজন হিসেবে নূন্যতম আলোচনা বা শুভেচ্ছাতেও অংশ নেওয়ার সুযোগ দেয় না।

অন্যদিকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ ও বিআরটিএ মোটরযান আইন মোতাবেক ট্যাংকলরির ভিন্ন সিরিয়ালে নম্বর, রেজিষ্ট্রেশন, ট্যাক্স গ্রহণ, শ্রমিকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানসহ পরিবহনের সব কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে।

তিনি বলেন, অনাকাঙ্খিত বা কোনো অদৃশ্য শক্তির ইশারায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত থাকার পরও বাংলাদেশ ট্যাংকলরী শ্রমিক ফেডারেশনকে কোনো আলোচনায় অংশ নিতে দেয় না। এটি দুঃখজনক। যে কারণে আমরা সরকারের সিদ্ধান্ত জানতে পারি না এবং তা মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগও করতে না পারার কারণে অনেক অনাকাঙ্খিত ও আপত্তিকর ঘটনা ঘটছে।

তিনি আরও বলেন, সরকারের কোনো কোনো সংস্থার পক্ষ থেকে আমাদের সঙ্গে বিমাতাসূলভ আচরণ করা হয়েছে। অনেক সংগঠনকে সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান, শ্রেণি পরিবর্তনের সুবিধা, সহজ নবায়নের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। সরকারের সঙ্গে ট্যাংকলরির জন্য আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে সহজে লাইসেন্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নির্ধারিত করা হয়নি। তাছাড়া বিআরটিএ’র এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতায় ভুয়া নিয়োগপত্র দ্বারা গাড়ির রুট পারমিট নবায়ন করা হয়।

রেজাউল করিম রেজা বলেন, দেশের ট্যাংকলরির সংখ্যা অন্যান্য যানবাহন থেকে অনেক কম। তাই এখানে প্রয়োজনের তুলনায় শ্রমিকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় বেকার শ্রমিক বাড়ছে। এমতাবস্থায়, ট্যাংকলরিতে মালিক পক্ষ বাস, ট্রাক, লেগুনা ও বেবিট্যাক্সির ড্রাইভার নিয়োগ দিলে বিশৃংখলা বাড়তে থাকবে। তাছাড়া জ্বালানি সেক্টরে শ্রমিকরা কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দলের সমর্থক নয়। এ সংগঠন স্বাধীন ধারার গঠনমূলক উন্নয়নমূখী ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন অনুসরণ করে। তাদের শিল্পে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন জন্ম নিলে বিদ্বেষ, বিদ্রোহ, বিশৃঙ্খলাসহ গোষ্ঠী ও পাল্টা গোষ্ঠীর জন্ম হবে। তাই ট্যাংকলরিতে যাতে একাধিক ট্রেড ইউনিয়ন সৃষ্টি না হয় তার দাবি জানাচ্ছি।

ট্যাংকলরি শ্রমিকদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-

১) নিয়োগপত্র, পরিচয় পত্র, সার্ভিস বুক দেওয়াসহ শ্রম আইন ও শ্রম বিধি অনুযায়ী শ্রমিকের যাবতীয় রেকর্ডপত্র সংরক্ষণ করতে হবে।

২) নূন্যতম মজুরী কাঠামো নির্ধারনের জন্য নিম্নতম মজুরি বোর্ড গঠন করতে হবে।

৩) ৫ (পাঁচ) লাখ টাকা দুর্ঘটনা বীমার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে।

৪) কেন্দ্রীয় ট্যাংকলরি টার্মিনালসহ সারাদেশে সব তেলের ডিপোর সঙ্গে অত্যাবশ্যকীয় সুবিধাসহ ট্যাংকলরি টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে।

৫) ট্যাংকলরি চালকদের সহজ শর্তে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতে হবে।

৬। সড়কে যত্র-তত্র চলন্ত ট্যাংকলরি থামিয়ে পুলিশী হয়রানি বন্ধ করতে হবে।

৭) শ্রমিকদের জন্য শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন থেকে পৃথকভাবে সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে।

৮) ট্যাংকলরি শিল্পে অপরাপর সেক্টরের শ্রমিকদের অনুপ্রবেশ ঘটানোর মালিকদের অপচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।

৯) ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন নামীয় সংগঠন থেকে ‘ট্যাংকলরি’ শব্দটি বাদ দিতে হবে এবং

১০) দাহ্য পদার্থবাহী ট্যাংকলরির ক্ষেত্রে একই প্রতিষ্ঠানে একটির বেশি ইউনিয়ন গঠন করা যাবে না মর্মে ধারা সংশোধন করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫০ ঘণ্টা, ১৭ অক্টোবর, ২০২২
এনবি/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।