ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে ব্যস্ত পিডিবি’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপেন্ডন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮৫৪ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৫, ২০১২
‘ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়তে ব্যস্ত পিডিবি’

ঢাকা: ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর হয়নি, চূড়ান্ত হয়নি বিদ্যুতের দামও। এমনকি বিদ্যুৎ আমদানি হবে কি-না, সে বিষয়ে নিশ্চিত না হলেও বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন স্থাপন করেছে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)।



আর একেই ‌‌`ঘোড়ার আগে পিডিবি গাড়ি জুড়তে ব্যস্ত’ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্মাণাধীন এই লাইন দিয়ে ভারত থেকে ২৫০ মে. ওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।

২০১১ সালের জানুয়ারির ১১ তারিখে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে ভারত থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি বিষয়ে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করা হয়।

এরপরে কয়েক দফা সময় পেছানোর পর ওই বছরের ৭ মার্চে দুই দেশের যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, চলতি মাসেই চুক্তি স্বাক্ষরের দিন চূড়ান্ত করা হবে।

এরপরও কয়েক দফা সময় বাড়ালেও বিদ্যুতের দামের জটিলতার কারণে বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে।

সর্বশেষ বলা হয়েছিল, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর হবে।

এর আগে চুক্তির খসড়া ২০ জুলাই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি রিভিউ করার জন্য ফেরত পাঠায়।

তবে এখনও মন্ত্রিসভায় খসড়াটির অনুমোদন হওয়ার বিষয়ে নিশ্চিত নন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী।

কারণ গত ২০ জুলাই ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভায় বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। এছাড়া যে সময়ে বিদ্যুৎ আমদানির কথা বলা হচ্ছে, সে সময়ে আমাদের আদৌ বিদ্যুতের প্রয়োজন রয়েছে কি-না, সে বিষয়েও বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেছিলেন, ২৫ বছর মেয়াদি এই চুক্তি হবে। এই দীর্ঘ সময় পরে আমাদের বিদ্যুৎ আমদানির প্রয়োজন নাও পড়তে পারে। সেদিকেও ভাবা হচ্ছে।

তবে সেপ্টেম্বরে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি স্বাক্ষর করা হবে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি।

বিদ্যুৎ বিভাগের সাবেক এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমান সরকার ২০১৩ সালে বিদ্যুতের উৎপাদন ঘাটতি থাকবে না বলে প্রচার করছে। তাহলে কার স্বার্থে এবং কেন এই লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে?

তিনি আরও বলেন, ধরে নিলাম, যথাসময়ে লাইন নির্মাণ শেষ হলো। কিন্তু ভারত যদি বিদ্যুৎ দিতে রাজি না হয়? তারা দিতে চাইলেও যদি দাম বেশি চায়? তাহলে এই লাইন নির্মাণের অর্থ কি দাঁড়াবে?

‘ প্রায় ১ বছর ধরে চেষ্টা করেও যখন বিদ্যুতের দামের জটিলতা নিরসন করা সম্ভব হচ্ছে না। তখন কেন এই হঠকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ?’ প্রশ্ন করেন ওই কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, ,‘ কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে, সে জটিলতা নিরসন হয়নি। এর সঙ্গে জড়িত রয়েছে দামের বিষয়টি। কারণ ভারতের একেকটি কেন্দ্রে বিদ্যুতের দাম একেক রকম। ’

পিডিবি সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রথম যখন এ নিয়ে আলোচনা হয় তখন জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিলো ভারতের। সমঝোতা স্মারকের আগেই সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ সংস্থা ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)।

এরপরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বহরমপুর থেকে বাংলাদেশের ভেড়ামারা পর্যন্ত ১৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ সঞ্চালন লাইন স্থাপন কাজ শুরু করা হয়।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের জনসংযোগ পরিদফতরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে এই বিদ্যুৎ আমদানি করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে বিদ্যুতের লাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। চলতি বছরেই শেষ হবে।

চুক্তি স্বাক্ষরে বিলম্ব হলেও কোনও সমস্যা নেই বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

চলতি বছরের প্রথম দিনে বিদ্যুৎ বিভাগের এক সংবাদ সম্মেলনে বিদ্যুৎ আমদানি চুক্তি বিষয়ে খোলাসা করে কিছু না বললেও ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে বলে মন্তব্য করেন অর্থমন্ত্রী।

যে লাইন স্থাপন করা হচ্ছে ওই লাইন দিয়ে ১ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা যাবে বলেও দাবি করেন তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫১ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৫, ২০১২

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।