ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

আরএনপিপি

এখন চলছে সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ 

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭৩৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯
এখন চলছে সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ 

ঢাকা: রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (আরএনপিপি) প্রকল্পে মাটির নিচের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে মাটির উপরিভাগ থেকে সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণের কাজ। পাশাপাশি রাশিয়ায় চলছে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি-সরঞ্জামাদি (ইক্যুইপমেন্ট) তৈরির কাজ। 

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং এই প্রকল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই প্রকল্পের মাটির নিচের যেসব কাজ রয়েছে তা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এখন জিরো লেভেল থেকে কনস্ট্রাকশনের কাজ শুরু হয়েছে।

 

এই পর্যায়ে সুপার স্ট্রাকচার বা মূল ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে। এর মধ্যে রয়েছে রিঅ্যাক্টর ভবনের নির্মাণ কাজ। এই ভবনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের রিঅ্যাক্টর স্থাপন করা হবে।  

এই প্রকল্পের মূল অবকাঠামো ছাড়াও যে সহায়ক স্থাপনা রয়েছে সেগুলোর কাজও চলছে। এর মধ্যে রয়েছে আবাসিক ভবন নির্মাণ, সড়ক, নৌ ও রেলপথ নির্মাণ কাজ। এই কাজগুলোও এগিয়ে চলছে।  

জানা যায়, গত ৩ মে এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ইউনিটে স্থাপন করা হয়েছে স্বয়ংক্রিয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোর ক্যাচার। গত বছর প্রথম ইউনিটের কোর ক্যাচার স্থাপন করা হয়।  

>> রূপপুরের সেই দর নিয়ে ব্যারিস্টার সুমনের রিট

এদিকে এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ কনস্ট্রাকশনের কাজ হয়েছে তার মান ঠিক আছে কিনা সেটা ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে যাচাই করা হয়েছে। মে মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের(বুয়েট) উপাচার্যের নেতৃত্বে একটি টিম প্রকল্প এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।  

এই টিমটি প্রকল্পের যেসব কাজ সম্পন্ন হয়েছে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে। পরে এ বিষয়ে নির্মাণ কাজ মানসম্পন্ন হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের প্রতিবেদন দিয়েছেন টিমের সদস্যরা।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে,পরমাণবিক প্রকল্পের জন্য রাশিয়ার উদ্ভাবিত সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, দেশটির আর্থিক সহায়তা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে দেশের প্রথম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মিত হচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) অঙ্গ প্রতিষ্ঠান এটমস্ট্রয়এক্সপোর্টের (এএসই) গ্রুপ অব কোম্পানিজ এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। দুই ইউনিটের এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ৩+ প্রজন্মের রিয়্যাক্টর ভিভিইআর-১২০০ স্থাপন করা হবে।  

এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ হবে ২০২৩ সালে। আর ২০২৪ সালে শেষ হবে দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ।  

সংশ্লিষ্টরা কর্মকর্তারা বলেন, এখন পর্যন্ত যে কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং চলছে সেটা নির্ধারিত সময় থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। সিডিউল অনুযায়ী, কাজ ৬ মাস এগিয়ে রয়েছে। দ্বিতীয় ইউনিটের কোর ক্যাচার যে সময় স্থাপনের কথা ছিলো তার থেকে এক মাস আগে এটি স্থাপন করা হয়েছে।  

এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের মাটির নিচের সব কাজ শেষ হয়েছে। এখন মাটির উপরিভাগ থেকে সুপার স্ট্রাকচারের কাজ চলছে। এখন পর্যন্ত যে পরিমাণ কাজ হয়েছে আমরা তার মান পরীক্ষার জন্য বুয়েটের একটি টিম নিয়ে গিয়েছিলাম। তারা প্রকল্প পরিদর্শন করেন এবং অবকাঠামোসহ সার্বিক কার্যক্রম যন্ত্রপাতি দিয়ে পরীক্ষা করে দেখেছেন-তা মানসম্পন্ন হয়েছে।  

এদিকে প্রকল্পের ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের পাশাপাশি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের যন্ত্রাংশ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। এই কার্যক্রম চলছে রাশিয়ায়। সেখানে রিঅ্যাক্টর, টারবাইন ও এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিংযের কাজ চলছে। এখানই তৈরি হচ্ছে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ইক্যুইপমেন্ট।  


এরই মধ্যে এই কার্যক্রম পরির্দশন করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। গত এপ্রিলে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়ন সংক্রান্ত যৌথ কমিটির এক সভায়ও যোগ দেন তিনি।  

স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, রাশিয়ায় যেসব ইক্যুইমেন্ট তৈরি হচ্ছে সেই কারখানায় আমরা পরিদর্শন করেছি। আমাদের বিশেষজ্ঞরা সেখানে সার্বক্ষণিক কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছেন। সেখানে ভারতের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্যও ইক্যুইপমেন্ট তৈরি করা হচ্ছে। ভারতের বিশেষজ্ঞরা যারা সেখানে আছেন দেখা শোনা করছেন তাদেরও বলেছি যেনো আমাদের কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করেন। কারণ আমাদের চেয়ে এই বিষয়ে অভিজ্ঞতায় ভারত এগিয়ে রয়েছে।  

এদিকে রাশিয়ায় ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের পাশাপাশি প্রকল্প পরিচালনার জন্য জনবল প্রশিক্ষণের কাজও চলছে। এরই মধ্যে ১০০ জনের প্রশিক্ষণ শেষে হয়েছে। চলতি বছরে পর্যায়ক্রমে আরও ৩০০ জনকে পাঠানো হবে। এভাবে ৩ হাজারের বেশি জনবল রাশিয়ায় প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই হবেন এই প্রকল্পের চালিকা শক্তি।  

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের মধ্যে টেকনিক্যাল এক্সপার্ট ১ হাজার ৬০০ জন। যারা সরাসরি বিদ্যুৎকেন্দ্র চালানোর কাজে নিয়োজিত থাকবেন। আগামী ২০২২ সালের মধ্যে এই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শেষ হবে। আর ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞদের কাছে চূড়ান্তভাবে হস্তান্তর করা হবে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্ব।

এ বিষয়ে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর বাংলানিউজকে বলেন, প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। নির্ধারিত সময় থেকেও আমাদের কাজ এগিয়ে রয়েছে। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবো।  

বাংলাদেশ সময়: ০৩৩৬ ঘণ্টা, মে ২০, ২০১৯ 
এসকে/এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।