ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ধীরগতি, জবাব চেয়েছে আইএমইডি

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ৮, ২০১৭
মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রে ধীরগতি, জবাব চেয়েছে আইএমইডি মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

ঢাকা: ‘মহেশখালীর মাতারবাড়ি কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র’ নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার  দশটি অগ্রাধিকার প্রকল্পের একটি। অথচ গত তিন বছর তিনমাসে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৪ হাজার ৫৩২ কোটি ১৮ লাখ টাকা, যা মোট ব্যয়ের মাত্র ১৩ শতাংশ।

একে হতাশাব্যঞ্জক বলে উল্লেখ করে কাজের ধীরগতির জবাব চেয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তদন্ত কমিটি। প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডকে (সিপিজিসিবিএল) চিঠি দিয়ে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

মাতারবাড়ি বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন দু’টি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে। ৩৫ হাজার ৯৮৪ কোটি ৪৬ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির চূড়ান্ত অনুমোদন পায় ২০১৪ সালের জুলাই মাসে। ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে কাজ সম্পূর্ণ হওয়ার কথা।

আইএমইডি’র প্রধান শেখ নজরুল ইসলাম ও প্রকল্প পরিচালক আবুল হাশেমসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গত ২৭ সেপ্টেম্বর প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। অক্টোবর মাসে প্রতিবেদন তৈরি করে নভেম্বরের শুরুতে সিপিজিসিবিএল’র কাছে প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতির ব্যাখ্যা চেয়েছে বিভাগটি।

এ গতিতে কাজ চললে ২০১৮ সালের মধ্যে প্রথম পাওয়ার প্ল্যান্টের কাজ সম্পন্ন হবে না বলে আশঙ্কা করছে আইএমইডি। তাই প্রকল্পের সমন্বিত অগ্রগতি ও সময়মতো সমাপ্তির লক্ষ্যে সিপিএম (ক্রিটিক্যাল পথ ম্যাথড) প্রণয়ন ও অনুসরণের নির্দেশনা দিয়েছে সিপিজিসিবিএলকে।

আইএমইডি’র সচিব মফিজুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘সরেজমিন পরিদর্শনে প্রকল্প বাস্তবায়নে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখেছি। ধীরগতির ব্যাখ্যা চেয়ে সিপিজিসিবিএলকে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে এসব ত্রুটি-বিচ্যুতিও তুলে ধরেছি’।
 
সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু ধীরগতির কারণগুলো জেনে সংশ্লিষ্টদের দ্রুততম সময়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে বলতে পারবো। প্রাপ্ত তথ্য পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে জানাবো। পরে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন’।
 
আইএমইডি’র প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রকল্পটির আওতায় চকরিয়া-মাতারবাড়ি ১৩২ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের নির্মাণ কাজ চলমান। ট্রান্সমিশন লাইনের লে-আউটের নকশা অনুমোদিত হয়েছে। ৬৮টি টাওয়ারের পাইলিং কাজের মধ্যে ৫৬টি শেষ হয়েছে। এছাড়া আংশিক সরঞ্জাম সাইটে পৌঁছেছে এবং কিছু শিপমেন্ট প্রক্রিয়াধীন।
 
১ হাজার ৪১৪ একর ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন করে সীমানা পিলার স্থাপিত হয়েছে। ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন সহায়তা দিতে ‘অন টাইম অ্যাসিসট্যান্স ফর লস অব ইনকাম’ খাতে চেক বিতরণ ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জীবন-মানের উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান।
 
২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতরের ক্লিয়ারেন্সও পাওয়া গেছে। প্রকল্পের কাছে বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্বাসনের কাজ চলছে।

তবে মাতারবাড়ি ১৩২/৩৩ কেভি সাব-স্টেশন নির্মাণের মাঠ পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে মাত্র। মূল কেন্দ্রের মেকানিক্যাল, পূর্ত, স্থায়ী টাউন শিপ নির্মাণ ও আবাসিক কাজেরও তেমন অগ্রগতি নেই। এমনকি প্রকল্প এলাকা লেভেলিং ও অবকাঠামোর নির্মাণ কাজও পিছিয়ে আছে। ফ্লু গ্যাস ডি সালফারাইজেশন ইউনিট স্থাপনের কাজ শুরুই হয়নি।

সিপিজিসিবিএলকে দেওয়া আইএমইডি’র নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, প্রকল্প এলাকার লোকজনের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন ও অসন্তুষ্টি এড়ানোর লক্ষ্যে মাটির কাজ ও শ্রমঘন কাজে স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সাধারণ প্রকৌশল  কাজেও স্থানীয় যোগ্য লোক পাওয়া গেলে সম্পৃক্ত করতে হবে।   বাস্তবায়নের কাজ যেন সুষ্ঠুভাবে সম্পূর্ণ হয় এবং প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিরা যেন ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত না হন, সে বিষয়ে নিবিড়ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

সিপিজিসিবিএল’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক আবুল হাশেম বাংলানিউজকে বলেন, ‘আইএমইডি প্রকল্পটি পরিদর্শন করে চিঠি দিয়েছে, আমরা এর উত্তর দেবো। তারা (আইএমইডি) তাদের দৃষ্টিতে কম অগ্রগতি দেখছে। কিন্তু আমাদের দৃষ্টিতে আমরা এ প্রকল্পের বেশি অগ্রগতি দেখছি’।
 
বাংলাদেশ সময়: ১০১৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৮, ২০১৭
এমআইএস/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।