ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৮ রমজান ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘নিঝুম দ্বীপে সিঙ্গাপুরের সম্ভাবনা’

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ৪, ২০১২
‘নিঝুম দ্বীপে সিঙ্গাপুরের সম্ভাবনা’

ঢাকা: অপার সম্ভাবনার নিঝুমদ্বীপ হতে পারে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী। এ লক্ষ্যে সেখানকার প্রাকৃতিক গ্যাসনির্ভর শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হলে নিঝুমদ্বীপ বাংলাদেশের সিঙ্গাপুর হতে পারে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞদের এমনই অভিমত।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমজাদ হোসেন বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, বঙ্গোপসাগর বক্ষে প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের মাটির নিচে প্রাকৃতিক গ্যাসের বিশাল আধার রয়েছে বলে ধারণা করছেন খনিজ সম্পদ বিশেষজ্ঞরা। ভোলা জেলার এ দ্বীপের পাশেই শাহবাজপুরে গ্যাসের সন্ধান পাওয়ায় তাদের এ ধারণা আরও দৃঢ় করেছে।

আমজাদ হোসেন জানান, এখানে যথাযথ অনুসন্ধান কার্যক্রম হাতে নেওয়া গেলে গ্যাস পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। এখানকার গ্যাস মূল ভূখণ্ডে আনতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন পড়বে। তার চেয়ে ভালো হতে পারে সেখানেই সার ও বিদ্যুৎ কারখানা স্থাপন করা।

তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের উৎসাহ দেওয়ার মাধ্যমে নিঝুম দ্বীপে বিশেষ শিল্পাঞ্চল করা সম্ভব। সারা দেশ থেকে সব এনে ঢাকায় বসিয়ে ঢাকাকে আজ অচল নগরীতে পরিণত করা হয়েছে। ’

‘এভাবে ঐতিহ্যবাহী ঢাকাকে ধ্বংস না করে ঢাকার বিকেন্দ্রীকরণ খুবই জরুরি। সে দিক বিবেচনায় নিঝুম দ্বীপে বিশেষ শিল্পাঞ্চল হলে খুব চমৎকার আইডিয়া হতে পারে,’ বলেন আমজাদ হোসেন।

তিনি বলেন, ‘সমুদ্র গবেষকরা মনে করছেন, নিঝুম দ্বীপের আয়তন একসময় বাংলাদেশের মুল ভূ-খণ্ডের সমান হবে। এখন থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে যদি শিল্পনগরী করা হয় তাহলে ঢাকা সিটির উপর মানুষের চাপ কমবে। ’

‘এ ছাড়া নিঝুম দ্বীপে উৎপাদিত পণ্য দেশের অভ্যন্তরে এবং বিদেশে রফতানি করার জন্য সহজেই পানি পথ ব্যবহার হতে পারে। ’

‘বাংলাদেশের ভোলা, সন্দ্বীপ, হাতিয়া ও নিঝুমসহ দ্বীপগুলোতে ব্যাপক সিসমিক জরিপ করা গেলে গ্যাস-তেলের আধার পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তেল-গ্যাস পাওয়া গেলে বাংলাদেশ অতিদ্রুত সম্পদসমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারে। ’

বাপেক্স নিজের লোকবল ও অর্থ দিয়েই সিসমিক জরিপ করতে পারে দাবি করে আমজাদ হোসেন বলেন, দ্বীপগুলোয় সিসমিক জরিপ করা গেলে সাগরের ব্লকগুলো সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাবে। কারণ একই প্লেটে অবস্থিত এসব অঞ্চল। ’

তিনি আরো দাবি করেন, ‘শুধু নিঝুম দ্বীপ নয়, সংলগ্ন সাগরে গ্যাস পাওয়া গেলেও সে গ্যাস নিঝুম দ্বীপে নিয়ে সেখানে নগরায়ন করা হলে তা হবে আজকের দিনের জন্য উপযুক্ত সিদ্ধান্ত। ’

এ বিষয়ে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘আমরাও এমনটিই প্রত্যাশাই করি ও স্বপ্ন দেখি। আমাদের গ্যাস দিয়ে যদি আমাদের দেশে শিল্পায়ন এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় সেটাই তো আমরাও চাই। ’

কনোকো-ফিলিপসের প্রসঙ্গ টেনে আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘তাদের তৃতীয় পক্ষের কাছে গ্যাস বিক্রির সুযোগ দেওয়া হয়েছে। গ্যাস সংকটের কারণে আমাদের দেশের শিল্পায়ন স্থবির হয়ে পড়েছে। এই গ্যাস উত্তোলন করে আমাদের লাভ হবে না। তার চেয়ে না তোলাই ভালো। তাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাজে লাগানোর সুযোগ থাকবে। ’

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান হোসেন মনসুর বলেছেন, ‘বর্তমান সরকারের গ্যাস রফতানির কোনো পরিকল্পনা নেই। যেখানেই গ্যাস পাওয়া যাক, তা দিয়ে বাংলাদেশের কাজে লাগানো হবে। ’ তবে নিঝুম দ্বীপ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।

বাংলাদেশ সময়: ০৯১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৪, ২০১২
ইএস/
সম্পাদনা: রানা রায়হান, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।