ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

হুদার উদ্যোগ নিয়ে নানা মত, সাফল্য নিয়ে সংশয়

মান্নান মারুফ, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০
হুদার উদ্যোগ নিয়ে নানা মত, সাফল্য নিয়ে সংশয়

ঢাকা: দেশের শীর্ষ দুই নেত্রী আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে এক টেবিলে বসাতে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেওয়া উদ্যোগ সম্পর্কে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন রাজনীতিকরা।

অধিকাংশ রাজনীতিকই বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান নাজমুল হুদার নেওয়া এ উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন।

হুদার এ চিন্তাকে কেউ কেউ উদ্ভট বলে মত দিয়েছেন।   ‘পাগলামী’ বলতেও ছাড়েননি কেউ কেউ।

কারো মতে, দেশে এমন কোনো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে, একসঙ্গে বসাতে হবে দু’নেত্রীকে। কেউ বলছেন, দু’নেত্রীকে একত্রে বসানো আদৌ সম্ভবই নয়।

শেষ পর্যন্ত দু’নেত্রীকে একত্রে বসানো সম্ভব হলেও তা থেকে ভালো কিছু বেরিয়ে আসবে না বলেও মনে করছেন অনেকে।

আবার অনেক রাজনীতিকেরই সংশয়, দুই নেত্রীকে একত্রে বসানো মূল উদ্দেশ্য নয় নাজমুল হুদার। এর মাধ্যমে আসলে লাইমলাইটে আসতে চাইছেন তিনি।

এদিকে এতো বড়ো দায়িত্ব নেওয়ার মতো ব্যক্তিত্ব নাজমুল হুদা কি না এ নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

দুই নেত্রীকে একত্রে বসানো ইস্যুতে নিজ দল বিএনপিরও সমর্থন পাচ্ছেন না নাজমুল হুদা। তবে বিএনপির অনেক নেতাই চুপ থাকছেন এ প্রসঙ্গে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটি সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার দুই নেত্রীকে এক করতে নাজমুল হুদার নেওয়া উদ্যোগের কথা জানেন না উল্লেখ করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘তিনি (হুদা) কি করবেন তা আমার বিষয় নয়, সুতরাং এ বিষয় নিয়ে আমি কথা বলতেই চাই না। ’


বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুই নেত্রীকে একত্রে বসানোর দায়িত্ব নিতে জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য লোক দরকার। ড. মুহম্মদ ইউনুসের মত মানুষরাও এতো বড় দায়িত্ব নিতে সাহস পান না। তাই তিনি (হুদা) কি মনে করে দুই নেত্রীকে একত্রে বসানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বুঝতে পারছি না। ’

তিনি বলেন, ‘দুই নেত্রীকে একই স্থানে শুধু বসালেই হবে না। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সুসর্স্পক গড়ে তুলতে হলে আমাদের সবার মন মানসিকতার পরিবর্তন ঘটাতে হবে। ’

ব্যারিস্টার রফিক আরও বলেন, ‘যতটুকু জানি, নাজমুল হুদার এ উদ্যোগ সম্পর্কে বিএনপি কিছুই জানে না। ’

নাজমুল হুদার উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে আওয়ামী লীগের সভাপতি ম-লীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এমপি বাংলানিউজকে বলেন, ‘এ ধরনের উদ্যোগ নিয়ে কেউই দুই নেত্রীকে একত্রে বসাতে পারবেন না। কেবল সেনাবাহিনী তাদের একত্রে বসাতে পারে। এমন নজির আমরা বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে দেখেছি। ’

তিনি বলেন, ‘তার (হুদা) উদ্দেশ্য খারাপ তা বলবো না। তিনি হয়তো ভাল মন নিয়েই এই চিন্তা করছেন। তবে এ উদ্যোগে তার দলের সমর্থন আছে কি না তা বলা মুশকিল। ’

দুই নেত্রীকে কেবল একত্রে বসালেই সমস্যার সমাধান হবে না উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘প্রত্যেক দলেরই একটা আদর্শ আছে। তাই মতপার্থক্য থাকবেই। তবে এ ধরনের আয়োজনে সমাজ ও রাষ্ট্রের কিছু কিছু বিষয়ে দুই নেত্রীকে একমত করাতে পারলে তা দেশের জন্য অবশ্যই ভাল হতো। ’

তিনি আরও বলেন, ‘মনের মিল না থাকলে যেমন প্রেম হয় না। তেমনি আন্তরিকতা না থাকলে একদিনের জন্য দুই নেত্রীকে একত্রে বসিয়ে কোনো লাভ হবে না। এরকম উদ্যোগ দেশের জন্যও ভালো কিছু বয়ে আনবে না। তবে এ উদ্যোগ আমেরিকা, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন অথবা সেনাবাহিনী নিলে হয়ত ভাল কিছু আশা করা সম্ভব। ’

নাজমুল হুদার উদ্যোগকে ‘পাগলামী’ উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ বাংলানিউজকে বলেন, ‘এরকম  উদ্যোগ নাজমুল হুদার উদ্ভট চিন্তার ফল। ’

তিনি বলেন, ‘স্বপ্ন দেখা ভাল। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখলেন একরকম, ঘুম থেকে জেগে দেখলেন কিছুই না। এরকম স্বপ্নে লাভ কি?’

ফিরোজ রশীদ আরও বলেন, ‘আসলে নাজমুল হুদা নিজেই জানেন না তিনি কি করতে চাচ্ছেন। কারণ দেশে এমন কোনো সমস্যা তৈরি হয়নি যে দুই নেত্রীকে একত্রে বসতে হবে। সরকার দেশ চালাচ্ছে। বিরোধী দল তাদের মত করে সরকারের সমালোচনা করছে। সব কিছু স্বাভাবিকই রয়েছে। কিন্তু নাজমুল হুদার কথা শুনে মনে হচ্ছে, ছেলেমেয়েদের শখের কোনো অনুষ্ঠান হবে। ’
 
নাজমুল হুদার উদ্যোগকে কাল্পনিক উল্লেখ করে জাতীয় পার্টির (মন্জু) মহাসচিব শেখ শহিদুল ইসলাম বাংলানিউজকে বলেন, ‘দুই নেত্রীর মধ্যে মতাদর্শের পার্থক্য আছে। তাই নাজমুল হুদা যতো চেষ্টাই করুক দুই নেত্রীকে একত্রে বসানো যাবে না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার এই উদ্যোগে যতোটা না বাস্তবতা রয়েছে  তার চেয়েও বেশি রয়েছে নিজেকে লাইম লাইটে আনার প্রবণতা। ’ আমি এমন কোনো সমস্যা দেখছি না যে দুই নেত্রীকে এক সাথে বসাতেই হবে। ’

প্রসঙ্গত, নাজমুল হুদার নয়া উদ্যোগ সম্পর্কিত খবর গত ১৪ সেপ্টেম্বর প্রথম প্রকাশ পায় বাংলানিউজে। পরদিন ১৫ অক্টোবর স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এটিএন নিউজে প্রচারিত এক বিশেষ সাক্ষাতকারে নাজমুল হুদা তার পরিকল্পনা প্রকাশ করেন।

ওই সাক্ষাতকারে তিনি জানান, জাতীয় স্বার্থে দেশের শীর্ষ দুই নেত্রীকে একত্রে বসানোর জন্য জনমত গঠন শুরু করে দিয়েছেন তিনি।

নাজমুল হুদা আরও জানান, দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর পক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জনমত গঠন ও সচেতনতা তৈরি করতে বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা এরই মধ্যে প্রচার শুরু করেছে।

নাজমুল হুদার পরিকল্পনা অনুযায়ী, দুই নেত্রীকে এক টেবিলে বসানোর জনমত গঠনের জন্য জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে র‌্যালি, মানববন্ধন, কর্মশালা ইত্যাদি কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। ঢাকায় আয়োজন করা হবে গ্র্যান্ড র‌্যালি। ঢাকার র‌্যালিতে দুই নেত্রীর মধ্যে মধ্যস্থতা করবেন এমন তিন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হবে।

জনমত গঠনের প্রাথমিক উদ্যোগ হিসেবে প্রবাসী বাঙালিদের ভেতর সচেতনতা তৈরিতে এরই মধ্যে সপ্তাহ তিনেকের সফরে বিদেশ গিয়েছেন হুদা।

সিঙ্গাপুর ও জেদ্দায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর এখন তিনি অবস্থান করছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে।

বাংলাদেশ সময়: ১২১৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১০

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।