ঢাকা, সোমবার, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে আ.লীগের কৌশল! 

মো. নিজাম উদ্দিন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৮ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
বিএনপির সমাবেশ ঠেকাতে আ.লীগের কৌশল! 

লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দিন দিন উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে। গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে একই দিন একই স্থানে দুই দলের পক্ষ থেকে সমাবেশের ডাক দেওয়া হচ্ছে।

এতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপির সমাবেশস্থল এবং জেলার শীর্ষ নেতার বাসা বাড়িতেও হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ি করেছে বিএনপি।  

তাদের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগের পাল্টা কর্মসূচিকে অপকৌশল হিসেবে দেখছে বিএনপি।  

আওয়ামী লীগ বলছে, শোকের মাস ঘিরে তারা মাসব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে।  

অন্যদিকে বিএনপি বলছে, 'লেজে পা দিয়ে অশান্তি' সৃষ্টি করতেই বিএনপির ডাকা কর্মসূচির দিনে আওয়ামী লীগ কর্মসূচির ডাক দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য হচ্ছে, বিএনপির কর্মসূচিতে বাধা দেওয়া।  

তবে যে কোনো মূল্যে কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিলেও পরে কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হচ্ছে দলটি।

জানা গেছে, গত ২৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে পৌর বাস টার্মিনালে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। জ্বালানি তেল, গ্যাস, পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে দলটির পক্ষ থেকে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হলেও আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ওই দিন একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়। এতে প্রশাসনের অনুরোধে এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ওই দিনের কর্মসূচি পিছিয়ে দেয় বিএনপি। পরে সেখানে উপজেলা এবং পৌর আওয়ামী লীগের আয়োজনে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করা হয়।  

পরে আবার বিএনপির পক্ষ থেকে স্থগিত সমাবেশের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয় সোমবার (২৯ আগস্ট)। কিন্তু এ দিনেও আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ সংগঠনের পক্ষ থেকে রায়পুর শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়। এতে করে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে উপজেলাব্যাপী।  

একই সময়ে দুই দলই সমাবেশ করার ঘোষণায় অটুট থাকলেও রোববার (২৮ আগস্ট) দিনগত গভীররাতে বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।  

রায়পুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম হাওলাদার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা সমাবেশ করার সব প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা যাতে সমাবেশ করতে না পারি, সে জন্য আওয়ামী লীগ পাল্টা কর্মসূচি দেয়। যেদিন আমাদের সমাবেশ থাকে, ঠিক ওইদিনই কেন তাদের সমাবেশ করতে হবে? মূলত এটা বিএনপির সমাবেশ ঠেকানোর একটা অপকৌশল। এর আগেও আওয়ামী লীগ পরিকল্পিতভাবে আমাদের পূর্ব নির্ধারিত জনসমাবেশ বানচাল করেছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও প্রশাসনের অনুরোধে আমরা ওই সময় জনসভা স্থগিত করেছিলাম।  

বলেন, আমরা শান্তিতে বিশ্বাসী। তাই জেলা নেতাদের নির্দেশে এবং প্রশাসনের অনুরোধে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আমরা কর্মসূচি স্থগিত করি।  

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর হায়দার চৌধুরী রিংকু বলেন, সোমবার (২৯ আগস্ট) বাসস্ট্যান্ডে বিএনপির কোনো কর্মসূচি আছে কিনা, তা আমাদের জানা নেই। শোকের মাসের এ কর্মসূচি আমাদের পূর্ব নির্ধারিত। আমরা আমাদের শোকসভা ও বিক্ষোভ মিছিল নির্ধারিত সময়েই করব।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিপন বড়ুয়া বলেন, সভা-সমাবেশের নামে কাউকে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। বিশৃঙ্খলা এড়াতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।

বিএনপি কর্মসূচির দিন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পাল্টা কর্মসূচি দেওয়া এখন রেওয়াজে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ বিএনপির।

গত ২৩ আগস্ট বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা (পশ্চিম) বিএনপির উদ্যোগে সদর উপজেলার পালেরহাটে সমাবেশে ডাক দেওয়া হয়। এরপরই একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচির ডাক দিয়েছে যুবলীগ, ছাত্রলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিএনপির পক্ষ থেকে পালের হাট থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে খিলবাইছার মাছিম নগরে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আবুল খায়ের ভূইয়ার বাড়ির পাশে সমাবেশ করে। অন্যদিকে একই সময়ে পালেরহাটে সমাবেশ করে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিকলীগ।  

ওই দিন লক্ষ্মীপুর-রামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন স্থানে দুই রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের পৃথক পৃথকভাবে দলবদ্ধ হয়ে অবস্থান নিতে দেখা গেছে। দুপুর ২টার পর থেকে ওই স্থানে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এসময় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাতে স্টাম্প, জিআই পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের পাইপ হাতে দেখা গেছে। তবে পাইপের মাথায় দলীয় পতাকা বাঁধা ছিল।  

এদিকে ওই দিনের বিএনপির কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী তার বক্তব্যে দাবি করেছেন, দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা তাদের সমাবেশ বানচালের উদ্দেশ্য নিয়ে পথে পথে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি পরবর্তী সমাবেশে নেতাকর্মীদের পাতাকা মিছিল নিয়ে বের হওয়ার নির্দেশ দেন, যেন হামলা হলে পাল্টা জবাব দিতে পারে।  

তবে সমাবেশ চলাকালে যে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি র‌্যার সদস্যরা সমাবেশ স্থলের আশেপাশে অবস্থান নেয়। এতে সমাবেশ এলাকায় কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটলেও ওই দিন সন্ধ্যায় বিএনপি নেতা শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর জেলা শহরের গোডাউন সড়কের বাসভবনে হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় এ্যানী সমাবেশস্থল বিএনপি নেতা আবুল খায়ের ভূইয়ার বাড়িতে ছিলেন৷ কিন্তু হামলায় তার ভাই এবং ছেলেসহ চারজন আহত হন। হামলাকারীরা তার বাড়ির জানালার কাঁচ, চেয়ার, এয়ার কন্ডিশনার ভাঙচুর করেন।  

হামলার জন্য সদর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দায়ী করেছে বিএনপি।  

গত ১২ আগস্ট (শুক্রবার) দুপুরে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ ডাকে বিএনপি। জেলা বিএনপির সদস্য সচিব সাহাবুদ্দিন সাবুর উত্তর তেমুহনীর বাসভবন প্রাঙ্গণে আয়োজিত সমাবেশ শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সেখানে হামলা চালানো হয়। হামলাকারীরা চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করেন। ওই ঘটনার একটি সিসি টিভি ফুটেজ ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। হামলার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে ছাত্রলীগকে দায়ী করা হয়েছে।  
 
আগামী ৩০ আগস্ট (মঙ্গলবার) জেলার কমলনগরে এবং ৩১ আগস্ট (বুধবার) রামগতি উপজেলায় সমাবেশ আহ্বান করেছে বিএনপি। একই দিন রামগতিতে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগও।  

আওয়ামী লীগের এ পাল্টা কর্মসূচিকে 'লেজে পা রেখে ঝগড়া করা' বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট হাছিবুর রহমান।  

২৮ আগস্ট (রোববার) দুপুরে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, আমরা যেখানে যে সময়ে সমাবেশ ডাকি, একই সময়ে আওয়ামী লীগও সমাবেশ দেয়। এর কারণ হচ্ছে, আমরা যেন সমাবেশ না করতে পারি। তাদের (আ.লীগ) এতো ভয় কেন, আমরা সমাবেশ করলে?

বলেন, আসলে তাদের জনসমর্থন নেই। বিএনপি সমাবেশ ডাকলে লাখ লাখ মানুষ মাঠে নেমে আসবে, তাই তারা ভয় পাচ্ছে। আমরা তো শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করি। কিন্তু তারা আমাদের সমাবেশস্থলে হামলা করেছে, আমাদের নেতার বাড়িতে হামলা করেছে। তারা যেন প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বের হয়ে আসে।  

বাংলাদেশ সময়: ১০১৩ ঘণ্টা, আগস্ট ২৯, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।